–প্রতারক চক্রের সদস্যরা পাওনাদারদের টাকা না দিয়ে অপপ্রচার করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা নেই। প্রতারক চক্রের তথ্য উঠে আসে অনুসন্ধানে । ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সত্যতা বেরিয়ে আসে।
জসিম উদ্দিন (আনু: ৪৭, ব্যবস্থাপন পরিচালক, সাহারা মিডিয়া লিমিটেড), পিতা: মোঃ ইউছুফ, গ্রামঃ বুদ্দিন, পোস্টঃ কানকাপৈত, থানাঃ চৌদ্দগ্রাম, জেলাঃ কুমিল্লা। বর্তমান ঠিকানাঃ বাড়ি নং: ০১, দক্ষিন বনশ্রী মেইন রোড, ব্লক: K, রামপুরা, বনশ্রী, টপ ফ্লরে থাকে।
ও তার সহযোগী (২) মঞ্জুর হাসান (আনু: ৪২, ডিরেক্টর, সাহারা মিডিয়া লিমিটেড), পিতা- অজ্ঞাত, গ্রামঃ সন্তোষপুর, পোস্টঃ সন্তোষপুর, থানা- ফরিদগন্জ, জেলাঃ চাঁদপুর, বর্তমান ঠিকানাঃ বাড়ি নং : ১৩, রোড নং: ০১, ব্লক: G, রামপুরা, বনশ্রী, টপ ফ্লরে থাকে
সাহারা মিড়িয়া লিমিটেড কোম্পানির নাম দিয়ে Sahara Television, Sahara World Views, সাহারা টেলিভিশন, সাহারা মিডিয়া লিমিটেড, STV, STV HD, Sahara News BD, Sahara Stv, Sahara Media, সাহারা টেলিভিশন সৌদি আরব, সাহারা টেলিভিশন কোরিয়া টু বগুড়া ইত্যাদি ইউটিউব চ্যানেল, পেজ, গ্রুপ খুলে সারা বাংলাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে টেলিভিশন নামে প্রচার প্রদর্শন করে।
প্রতিনিধিন নিয়োগ, বেকার যুবকদের চাকরি দেওয়ার কথা বলে ও সারাদেশে শত শত মানুষ কে কনজুমার ডিলারশিপ, ইনভেস্টর, ডিরেক্টরশিপ, চেয়ারম্যান দেওয়ার নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এই প্রতারক চক্রের প্রধান জসিম উদ্দিন, মঞ্জুর হাসান, আব্দুস সাত্তার ও তার সহযোগীরা।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মাজেদ ইবনে আজাদ বলেন, এই চক্র প্রথমে আমাকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সকল কাগজপত্র, ছবি ও NID কার্ড এর কপি নেয়। এরপর ডিলারশিপ, ইনভেস্টর, ডিরেক্টরশিপ ইত্যাদি কথা বলে ধাপে ধাপে প্রলুব্ধ করে এমনকি ধর্মীয় বাণী, কোরআন হাদিস বিভিন্ন ধর্মীয় কথা ও পিতা মাতার বাণী ইমোশনাল শব্দচয়নে বিভিন্ন কথাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বাস সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের সাথে DBBL একাউন্ট ও নগদ হাতে হাতে লেনদেন করায় এবং তারা ধর্মীয় ভাবে বিশ্বাস চুক্তি শপথ করায়। তাদের তালবাহানা দেখে পাওনা অর্থ চাওয়ায় একাধিকবার টাকা দেওয়ার তারিখ দিয়ে টাকা না দিয়ে মঞ্জুর হাসান আমাকে হোটসআপে ফোন দিয়ে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা নেই। টাকা না দেওয়ার জন্যে নানান রকম আজুহাত দেখায়।
পরর্বতীতে আমি যখন টাকার জন্যে চাপ সৃষ্টি করি তখন আমাকে তাদের অফিসে ডেকে নিয়ে জসিম ও মঞ্জুর হাসান অজ্ঞাত কিছু লোক সহ আমাকে রগ কেটে ফেলার হুমকি ও পিস্তল জাতীয় অস্ত্র দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এবং আমাকে মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করবে বলে হুমকি দিয়েছে।
আমি উপায়ন্ত না দেখে আইনানুগ ভাবে উকিল নোটিশ পাঠাই। নোটিশ পাঠানোর পর থেকে তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে ব্লাকমেইল চেষ্টা ও কয়েক ধাপে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। জসিম ও মঞ্জুর হাসান তাদের ফেইসবুক আইডি অন্যান্য ফেইক আইডি দিয়ে, স্যোশাল মিডিয়সহ
আমার Whatsapp নম্বর ও বিভিন্ন মাধ্যমে আমার NID Card সহ আমার ছবি ব্যবহার করে উল্টো আমার সম্পর্কে মিথ্যাচার প্রচার ও খুব বাজে বাজে মন্তব্য প্রকাশ করে। যা হাজার হাজার মানুষের চোখে দৃশ্যমান হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তার জীবনের নিরাপত্তা ও সামাজিক সম্মান রক্ষার্থে ঘটনা উল্লেখ করে তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাধারন ডাইরী করেন।
এই বিষয়ে আরো একজন প্রবাস ফেরত ভুক্তভোগী মনির বলেন, এই প্রতারক চক্র জসিম উদ্দিন ও মঞ্জুর হাসান আমাকে ডিলারশিপ দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে কোন প্রকার মাল না দিয়ে নানান রকম অজুহাত দেখিয়ে চলছে। তাই আমি টাকা পাওয়ার জন্যে বাধ্য হয়ে উকিল নোটিশ পাঠাই। এতে তারা টাকা না দিয়ে সবরকম যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় আমার সাথে।
শুধু তাই নয় সংবাদ কর্মীদের সাথেও প্রতারণা করেছে এই প্রতারক চক্র। নোয়াখালীর সাংবাদিক শহিদ বলেন, আমার সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করে আমাকে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়। গান রেকর্ডের কথা বলে তাদের অফিসে নিয়ে আসে। প্রস্তাবের মাধ্যমে টাকা নিয়ে ডিলারশিপ নিয়োগ দেয়। এক সপ্তাহের মধ্যে মাল দিবে বলে গোডাউন ভাড়া এবং এস আর জনবল নিতে বলে। বিলম্বতায় দীর্ঘ চার মাস পর কিছুদিন মাল দিয়ে বন্ধ করে দেয়।
একসঙ্গে অনেক লাখ টাকার মাল দেওয়ার আশ্বাসে সুদের উপর টাকা ও ব্যাংক লোন নিতে বলে। তারা সম্পূর্ণ টাকা নিয়ে নেয়। এমনকি আমার বাবার মৃত্যুর আগের সঞ্চিত বেতনের টাকা ব্যবসার জন্যে তাদের দিয়ে দেই। জসিম ও মঞ্জুর হাসান মাল না দিয়ে দীর্ঘ এক বছর চার মাস গোডাউন ভাড়া দিতে বাধ্য করে। যার কারনে আমি ঋণগ্রস্থ ও মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ি। টাকার জন্যে চাপ দিলে নানান রকম তালবাহানা দেখায়। অবশেষে তাদের প্রতারণার বিরুদ্ধে লেখালেখি করলে আমাকে তাদের নিয়োগপত্র থেকে বাতিল করে আমার নামে উল্টো বাজে মন্তব্য ও সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার করে। তাদের প্রতারণা ফাস হবে বলে আব্দুস সাত্তার ও মঞ্জুর হাসানের বউ সানজিদা ফোনে যোগাযোগ করে এক মাসের মধ্যে সমাধান করবে বলে অঙ্গিকার করে।
পরবর্তীতে আমাকে টাকা না দিয়ে মঞ্জুর হাসান হোয়াটসঅ্যাপ এ বলে আপনি অফিসে এসে টাকা নিয়ে যান। অফিসে আসলে টাকা না দিয়ে নানান রকম ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। আমি তাদের কাছে ব্যাংক লোন পরিষদের জন্যে টাকা চেয়েও পাই নি। অবশেষে ব্যাংক লোণ ও সুদের টাকা পরিষদের জন্যে বাবার শেষ সম্বল জমি বিক্রি করতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
এছাড়াও আরও একজন ভুক্তভোগী ইমাম হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমাকে ডিলার দেওয়ার নামে আমার থেকে টাকা নিয়ে কোন প্রকার মাল দেয় নি, তিনি কান্নাস্বরে বলেন আমি এই প্রতারক চক্রের কাছে থেকে টাকা পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছি। আল্লাহ এই প্রতারক চক্রের বিচার করুক।
এই বিষয়ে সাহারা মিডিয়া লিমিটেড বনশ্রী হেড অফিসে গেলে তা বন্ধ থাকায় জসিম ও মঞ্জুর হাসানের সাথে যোগাযোগ ও সন্ধান মিলেনি। পরবর্তীতে বাড়িওয়ালার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তারা দীর্ঘ দিন ধরে অফিসে আসে না। আমি নিজেও তাদের কাছে অফিস ভাড়া পাই। তাছাড়া তাদের কাছে অনেক মানুষ টাকা পাবে বলে পাওনাদারা এসে আমাকে জানান।