প্রশ্ন ফাঁস ও খাতা মূল্যায়নে নতুন পদ্ধতির কারণেই জেএসসি-জেডিসি ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর ফলাফলে বড় প্রভাব পড়েছে। এ কারণেই কমেছে পাসের হার ও জিপিএ ৫। এবারের জেএসসি ও জেডিসিতে পাসের হার কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। আর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে কমেছে তিন শতাংশের বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তন, প্রশ্ন ফাঁস এবং খাতা দেখায় কড়াকড়ির কারণে এবারের জেএসসি-জেডিসি ও প্রাথমিক সমাপনীর ফল তুলনামূলক খারাপ হয়েছে। এসএসসি, এইচএসসিতেও মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তন করায় পাসের হারে ধ্বস নামে। সেই প্রভাব জেএসসি-জেডিসি ও সমাপনীর ফলেও পড়েছে।
শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, খাতা মূল্যায়নে পরিবর্তন আনায় জেএসসি-জেডিসি ও সমাপনী পরীক্ষার ফলে বড় প্রভাব পড়ছে। এছাড়া প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছে। ফলাফলে এর প্রভাবও পড়েছে। কেন না পরীক্ষার্থী যখন শোনে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে তখন প্রস্তুতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তখন সে এক ধরনের আতংকের মধ্যে পড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, এ পরীক্ষা কতটা প্রয়োজন তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এসব পরীক্ষায় মেধা যাচাই হচ্ছে না। বরং কোচিং-গাইডের বাণিজ্য জমে উঠছে। এ দুই পরীক্ষা বাতিল করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার বলেন, এবারে পরীক্ষার ফলাফলে সামগ্রিক পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে। এ বছরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলও তুলনামূলকভাবে খারাপ হয়েছে। এসব হয়েছে নানা পরিবর্তনের ফলে। উত্তরপত্র মূল্যায়নে পরিবর্তন এসেছে। পরীক্ষায় বিভিন্ন সময় নানা বিষয় পরিবর্তন করা হচ্ছে। এখন শিক্ষকরা খাতা মূল্যায়নে বেশ সতর্ক। এসব কারণেই ফলাফলে ধারাবাহিক প্রভাব পড়ছে।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান এ ফলাফলকে বিপর্যয় বলে মনে করেন না । তার মতে, গত পাঁচ-ছয় বছরে হাইব্রিড ফল প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের যোগ্যতার চেয়ে বেশি নম্বর দেয়া হয়েছিল। তাই জিপিএ প্রাপ্তি ও পাসের হার বেড়েছিল। এ বছরও যথাযথভাবে খাতা মূল্যায়ন হয়েছে বিষয়টা এমন নয়। তবে এবারের ফল সত্যের কাছাকাছি গেছে।
এ শিক্ষাবিদ আরও বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রশ্ন পদ্ধতি প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে নানা প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ করা উচিত। এবার জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় পাস করেছে ৮৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৯১ হাজার ৬২৮ শিক্ষার্থী। সে হিসেবে এবার এ পরীক্ষায় পাসের হারে বড় পতন হয়েছে, সঙ্গে কমেছে পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও।
আট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেএসসিতে এবার পাসের হার ৮৩ দশমিক ১০ শতাংশ। আর মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার ৮৬ দশমিক ৮০ শতাংশ।
গত বছর জেএসসি-জেডিসিতে সম্মিলিতভাবে ৯৩ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। এর মধ্যে জেএসসিতে ৯২ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং জেডিসিতে ৯৪ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। জেএসসি-জেডিসিতে এবার মোট এক লাখ ৯১ হাজার ৬২৮ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে জেএসসিতে এক লাখ ৮৪ হাজার ৩৯৭ এবং জেডিসিতে সাত হাজার ২৩১ জন পূর্ণ জিপিএ পেয়েছে। জেএসসি-জেডিসি মিলিয়ে গত বছর দুই লাখ ৪৭ হাজার ৫৫৮ জন পূর্ণ জিপিএ পেয়েছিল।
আর পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সমাপনী পরীক্ষায় ৯৫ দশমিক ১৮ শতাংশ ও ইবতেদায়ীতে ৯২ দশমিক ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে এ বছর। এর মধ্যে প্রাথমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬২ হাজার ৬০৯ জন। আর ইবতেদায়ীতে ৫ হাজার ২৩ জন পূর্ণ জিপিএ পেয়েছে।
গত বছর প্রাথমিক সমাপনীতে ৯৮ দশমিক ৫১ শতাংশ ও ইবতেদায়ীতে ৯৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। প্রাথমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২ লাখ ৮১ হাজার ৮৯৮ জন, আর ইবতেদায়ীতে ৫ হাজার ৯৪৮ জন। এ হিসাবে এবার পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হারের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ জিপিএ পাওয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে।