31 C
Dhaka
অক্টোবর ২২, ২০২৪
Bangla Online News Banglarmukh24.com
অন্যান্য

একজন আদর্শ স্বামীর প্রতিকৃতি

মনের কোটরে যাকে সযত্নে ঘিরে রেখেছিলাম তাকে তো আর মনের কোটরে ধরে রাখতে পারিনি। সবকিছু আল্লাহর লিখন। জায়গাটা তো ঠিকঠাক, জায়গা মতই আছে। শুধু কোটরটাকে নিয়ে সারাক্ষণ হাহাকারটা সঙ্গে করে নিয়ে সংসারের সব কাজে ডুবে থাকতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু না! তা পারা খুব কষ্টের ও কঠিনতম কাজ। আমার জীবন যাকে ছাড়া চলত না প্রতি মুহূর্ত যাকে নিয়ে গেঁথেছি নকশীকাঁথার কথার মালা যাকে ছাড়া চলত না এখানে সেখানে বেড়ানো, বিয়ের দাওয়াত, দেশ-বিদেশে ব্ড়োতে যাওয়া সবকিছুই চলতে থাকে বহমান গতিতে। কিন্তু মনের গভীরে হাহাকার মৃত্যু পর্যন্ত বহমান থাকবে।
বিয়ের পর সবার স্বামী যার যার স্ত্রীর কাছে আদর্শরূপ নিয়ে জীবন কাটাতে চেষ্টা করে। সেই চেহারা স্ত্রীদের কাছে এক এক জনে এক এক চিন্তাধারায় গ্রহণ করে।
আমার স্বামী একজন আদর্শ স্বামী এবং একজন আদর্শ স্বামীর প্রতিকৃতি। আদর্শ স্বামীর প্রতিকৃতি বুঝিয়ে তার ব্যাখ্যা করা আমার জন্য অনেক কঠিন ব্যাপার।
শুরুর জীবনের কথা, আমি সংসারের অনেক কাজ বুঝতাম এবং বেশ কিছুই পারতাম। কিন্তু রান্না তেমন কিছুই পারতাম না। আমাকে আমার সাহেব হাতে ধরে অনেক রান্না শিখিয়েছেন। উনি অনেক রকম রান্না জানতেন। এরপর শিখেছি আমার শ্বাশুরী মা’র কাছে।
আমার সাহেব উনার মা’র হাতের রান্না খুব পছন্দ করতেন। তাই আমি ভাবলাম মা’র রান্না খাওয়ার মধ্যেই তার আত্মতৃপ্তি সেইহেতু আমার সেই রান্নাগুলো আয়ত্ব করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করতাম।
আমার প্রতি দায়িত্বশীলতা ছিল আমার সাহেবের অপরিসীম। আমাদের দুই ছেলে, ছেলেদের প্রতি দায়িত্ব-আদর-¯েœহও ছিল বলা-কওয়ার বাইরে। দুই ছেলে দেশের বাইরে পড়াশুনা করেছে। তাদের খাওয়া-পড়া, দেশ-বিদেশে ঘোরা কোন কিছুতেই বাবার অবহেলা ছিলনা। ছেলেরা ছিল বাবার হার্টের দু’টা অংশ। বাবার অন্তর নিংড়ানো ভালোবাসা ছিল ছেলে-বৌ ও নাতিদের জন্য। আমার জন্যতো বটেই।
আমার গর্ব ভালোবাসার জায়গা ছিল আমার স্বামী। তার জীবনের ক্ষেত্র ছিল তার কর্মস্থল, চেম্বার সেই সাথে সর্বপ্রথমে স্ত্রী-সন্তান, ছেলের বৌরা, নাতী-নাতনীরা বাবা-মা, ভাই-বোন, ভাই-বোনদের স্বামী-স্ত্রী সেই সাথে আত্মীয়-স্বজন।
আমার স্বামীর বাবা ও মা অর্থাৎ দাদা-দাদীর বাড়ীর দুই দিকটাই ছিল অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ও সম্ভ্রান্ত। দুইদিকের আত্মীয়-স্বজনের যার সাথেই সম্পর্কের জায়গা, সেই জায়গাটাতে সে দৃঢ়তার সাথে শক্ত হাতে ধরে রাখতে ভালবাসত।
আমার ৪৩ বছরের সংসার জীবনে বাবা-মা’র দুইপক্ষের আত্মীয়-স্বজনের আসা-যাওয়া সেই সাথে ফোনে যোগাযোগ ছিল। আত্মীয়-স্বজনেরা সবাই ভালবাসত, শ্রদ্ধা করত। বাবা-মা ভাই-বোনেরাও ভালবাসত ও শ্রদ্ধা করত। ডাঃ সাহেব অসম্ভব রকম সৌখিন ছিলেন। দেখতেও অত্যন্ত সুদর্শন ছিলেন। আমার সম্মান আমি যতটুকু তাঁর কাছ থেকে আশা করতাম আমি তাঁর কাছ থেকে তার চেয়ে বেশী আদর, ¯েœহ, ভালবাসা, শ্রদ্ধা, সহনশীলতা, আস্থা ও ভরসা, সাহস আমি জীবনভর পেয়েছি।
এই কারণে নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে করতাম। সেই সাথে আল্লাহর কাছে প্রতি নামাযে এমনকি সর্বক্ষণই শুকরিয়া আদায় করতাম। আমার স্বামী শুধু নিজে নয় তার দু’টা সন্তানকেও তার আদর্শে আদর্শবান করে আমাকে দিয়ে গিয়েছেন।
বাবার অনেক প্রতিচ্ছবি আমি তার সন্তানদের মাঝে দেখতে পাই। সময়ে সময়ে বলত তোমার আম্মা আমার সংসার ও জীবনে সংগ্রামের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল। তাই মা’র প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসার কখনো কমতি করবা না। তার চরিত্রের আদর্শ, নীতিবোধ, মানুষের প্রতি সহনশীলতা, ভালবাসার কোন ঘাটতি আমার চোখে পড়েনি।
আমার জীবনে সামাজিকতা, আত্মীয়-স্বজনের সাথে আনন্দ করা ও মেলামেশা, আমার সংসার চালানো, আমার সহপাঠীদের সাথে আনুষ্ঠানিকতা, প্রতিবেশী ভাবীদের সাথে সময় কাটানো বা গল্প করা আমার বেড়ানো, শৌখিনতাবশতঃ হাট-বাজার করা সব কিছুতে ছিল তার অন্তরের সম্মতি। আনন্দিত হয়ে সবকিছু মেনে নেওয়া এই জন্য আমি আমার ৪৩ বছর এর সংসার জীবনের চাওয়া-পাওয়ায় যে ইতি টেনে উনি চলে গেলেন। আমাকে ও আমার দুই সন্তান, বৌ ও নাতী-নাতনীদের রেখে গেলেন তার ঋণ আমার বেঁচে থাকা পর্যন্ত দেয়ার অনেক চেষ্টাটুকুর কমতি থাকবে না।
জানিনা আমি কতটুকু পারব। দোয়া চাই সমস্ত আত্মীয়-স্বজন নিজের লোক সবার কাছে। পাড়া প্রতিবেশী এমনকি উনার রোগীদের কাছে ও দেশবাসীর কাছে। আল্লাহ যেন আমাকে সেই হায়াতটুকু দেন উনার জন্য কিছু করার জন্য।
আমার সংসারটা ছিল প্রাণবন্ত। আমি আমার সন্তান, স্বামী সবমিলে ছিল একটা সাজানো গোছানো ফুলের বাগান, একটা জীবন-একটা আত্মা।
আমার সাহেব ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী, ভদ্র, সৎ ও মার্জিত সেই সাথে ধর্মপরায়ন। উনাকে নিয়ে আমার শান্তির অন্ত ছিলনা।
যতটুকু সময় পার করেছি উনার সাথে সেই সময়টুকু আল্লাহর রহমতে আমার জীবনে শ্রেষ্ঠতম শান্তি ও প্রশান্তি ও রহমতের সময় ছিল। পরিশেষে আবার বলি স্বামী হিসাবে শুধু নয় বাবা হিসাবে সন্তানদের কাছে শ্রেষ্ঠ বাবা সে নিজে সন্তান হিসাবে বাবা-মা’র কাছে শ্রেষ্ঠ সন্তান ও ভাই-বোনদের কাছে শ্রেষ্ঠ ভাই।
দুলাভাই হিসাবে আমার ভাই-বোনদের কাছে এছাড়াও যত ধরণের ভাই-বোন আছে তাদের কাছে ভালবাসা ও শ্রদ্ধার পাত্র ছিল। এছাড়াও মেয়ের জামাই হিসাবে আমার বাবা-মা ও অসম্ভব রকমের আদর-¯েœহ করতেন।
আমার তেমন কোন চাহিদা ছিলনা, কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে উনি আমাকে দু’হাত উজার করে দিয়ে গিয়েছেন। আমি কৃতজ্ঞতার ভাষায় উনাকে প্রকাশ করতে পারব না। দেশের বাইরে আমি পৃথিবীর অনেক দেশ ভ্রমণ করেছি উনার সাথে। কোথাও যেতে চাইতেন না আমাকে ছাড়া। ডাঃ সাহেব কম কথা বলতেন, কিন্তু আমার সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। এত ব্যস্ততা ও কর্মজীবনে কখনো আমার কথায় বিরক্ত হতেন না।
আমি অসুস্থ হলে অসম্ভব ভেঙ্গে পরতেন। আজ আমার সবকিছু আল্লাহ দিয়ে রেখেছেন নেই শুধু শূন্য ঘরে আমাদের সাথে তাঁর বিচরণ।
ডা: সাহেব ঢাকা মেডিকেল কলেজে দীর্ঘ অনেক বছর কাজ করেছেন নিউরোলজী বিভাগে। সেখান থেকে প্রফেসর হয়ে অবসরে যান। ১৮/২০ বছর প্র্যাক্টিস করেছেন আনোয়ার খান মর্ডাণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আমি উনার সহধর্মীনি হিসাবে সহ-কর্মী, স্টাফ এমনকি হাসপাতালের সবার কাছে উনার জন্য দোয়া চাই। আল্লাহ যেন উনাকে সমস্ত কিছু মাফ করে দিয়ে বেহেশত নছিব দান করেন-আমীন।

সম্পর্কিত পোস্ট

এইচএসসির ফলাফল ঘোষণায় নতুন সিদ্ধান্ত

banglarmukh official

মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট প্যাকেজ চালুর আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

banglarmukh official

চীন-বাংলাদেশ সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু

banglarmukh official

দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার বরিশাল ব্যুরো রিপোর্টার হলেন সাংবাদিক এস এন পলাশ

banglarmukh official

শুভ জন্মদিন সাংবাদিক মাহাবুব আলম শ্রাবণ

banglarmukh official

বরিশালে সরস্বতী পূজা উদযাপন

banglarmukh official