“ভাঙ্গন” (পর্ব – ২)
যেই কতা কইতে আছিলাম হেই কতাই কই – আমাগো গ্রাম আছিল গলাপানি গ্রামের তোন উত্তরে । হেই উত্তরের গ্রাম ভাঙ্গনে আমি কি একলা পলাইছি ? না, একলা পলাই নাই, হেই রাইতে অনেকেই পানির ধাবার খাইয়া দৌড়াইছে । অনেকে বুড়া বুড়া বাপ-মা হালাইয়া থুইয়াও পলাইছে । পড়ে হেইয়াগো বাড়ি-ঘর য্যামন খুঁইজ্জা পায় নাই হেইরম হেইয়াগো মুরুব্বিগোও আর খুঁইজ্জা পায় নাই । যাই হোউক আমার গেদাডারে কবিরাজের পিড়ার উপরে হোয়াইছি, এই রহম আরও অনেকের গ্যাদা হেই রাইতে সুখলাল কবিরাজের পিড়ার উপরে ঘুম লওয়াইছে । আর হের ঘরের মইধ্যে তো মানষের পা’ও রাহোনের যাগা আছিল না । পুব পাড়ার মুন্সি বাড়িরর সতারো ঘরের বেবাক মানুষ আইয়া ঠাই লইছে এই বাড়িত ।
উত্তর পাড়ার তরকদার বাড়িতও আছিল সাত ঘর, আর এউক্কা দুউগ্গা বাড়ির খবর না’ই কইলাম । হেইয়ারা আগে আইছে বইলা ঘরের মইদ্দে হানছে । আমরা যারা পরে আইছি হেরা ঘরের ছাইছে খারাইয়া আছিলাম । কতেকে গিয়া গরুর খোয়ারে আছরয় লইছে । আমিই মনে হয় সবার শেষে আইছি । যদিও হেতোক্ষুণে ঝড়-বিষ্টিরও বিষ মইরা আইছিল । আর নাদীর ভাঙ্গন ঠিক গলাপানি গ্রামের সীমানায় আইয়া খাড়াইছে । মনে অইল ছোডকালে ছি-পুড়ি খেলার নাহান । ছি দিয়া অন্য পক্ষের পাহেরাদার লড়াইয়া আবার দৌড়াইয়া আইয়া যেমন গোড়া গাছে খাড়াইতাম তেমন কইরা ভাঙ্গন আইয়া সীমানা মত খাড়াইয়া গেছে । গ্রামের সীমানাডা কবিরাজ সুখলাল বাড়ৈর ঘর থেইকা দুইহান ভিটা আর এক খণ্ড ভূঁইর শেষ মাতাত । সেই দুই খান ভিটার একটাতে সুখলাল কবিরাজ ঔষদি গাছ আর কিছু কাঠের গাছ লাগাইছে ।
কাঠগাছের বাগানে খাড়াইয়া নদীর দিগে চাইয়া আসমান ফাডাইন্না কান্দন কনতে আছে আমাগো গ্রামের মাইনষে । আমার কোনও কান্দন নাই, পোলাডারে আগলাইয়া খাড়াইয়া রইছি । আমার যে ঘর নাই, ঘরের মানুষ নাই হেই দিগে কোনও চিন্তাও নাই ! বেদিশার নাহান খালি হগোলের দূরবস্থা দ্যাকতে আছি । হেই দিনকার হেই দৃশ্য আগে কোনও দিন দেহি নাই, তয় হুনছি, যুদ্দের সোমায় মিলেটেরিরা মাইনষের ঘর-বাড়ি জ্বালাইয়া পোড়াইয়া দিছে । মানুষ মাইরা ধানের পাঁজার নাহান পালা দিয়া রাখছে । তয় সব শেষে যারা বাঁইচা আছিল হেরা অন্তত নিজের ভিটাখান ফিরত পাইছে, কিন্তু এহন যা ঘটল হেইতে কেউই কিচ্ছুই ফিরা পাইলাম না ! গেদার বাহে আইজ্জা গেছে, গেছে যে আর তারে খুঁইজাও পাইনাই । এমন কি হের লাশটারেও কেউ কোনও হানে দেহে নাই । যদিও হেই সমায় কেউ কেউরে খুঁজেও নাই । (চলবে -২)