“ভাঙ্গন” (পর্ব – ৩):
ধলপারের সুম বিষ্টি থাইমা গেছে । তহনও মেগনার ত্যাজ কমে নাই, অজাগরের নাহান ফোস ফোস কইরা গর্জাইতে আছিল । হেইসুমকা আমার গেদাডা সাতমাসের । সব কিছু খুয়াইয়া আমরা গিয়া উঠছিলাম সুখলাল বাড়ৈর বাড়িত । হের পাকের ঘরের চুলা-চাটকি মাইনষের পায়ের পারায় সমান অইয় গেছে । ঘরের খাডালোত চিল্লা-পাল্লা কইরা বেডার কড়ুই কাডের চকি খানাও গুড়া কইরা হালাইছে । কেউরে এক মগ পানি খাওয়াইবো তো দূরে নিজেরা যে খাইবো হেই অবস্থাও নাই । আন্দাইরা ম্যাগ কাইটা রোইদ উডছে । হেই রোইদের আলোয় সব দিক ফকফইক্কা অইছে কিন্তু আমি দেহি চাইরো দিগে খালি আন্দার ! নাড়া চালির কিনারে খাড়ানো বলদ দুইডা আহনও খাড়াইয়া রইছে । হেইয়াগো পাশে খাড়াইয়া সুখলালের গরুতে খেড় চিবাইতে ছিল । গরুতে দেহাদেহি কইরা ঘাস খায়, খড় খায় কিন্তু আমাগো বলদ দুইডা কিচ্ছুই মুহে দেয় না । এর মইধ্যে ঘর ছাইরা সবাই বাইরে নামছে । শ’য়ে শ’য়ে মানুষ খালি কিলবিল কিলবিল করতে আছে। দ্যাকলে মোনে অইবো মৌচাকের নাহান । কে কোন হানে যাইবো হেইয়া যানি ঠাওর করতে পারছিল না । যেইসব মানুষ কোনও দিন পুরুষ মাইনষের মুখও দেহে নাই আইজগা দেহি হেরাও ভিন পুরুষগো মইদ্দে খাড়াইয়া রইছে । সূর্য অনেক উপরে উটছে । বেইনবেলা পাড়াই পাড়াই করতে আছিল । আস্তে আস্তে মানুষের কান্দন কইমা আইছে । মানুষ কিছুডা পাতলাও অইছে । পূব পাড়ার মজিদ মিয়া কোন দিক দিয়া জানি আমারে দেইখা আমার কিনারে আইয়া খাড়াইছে । গেছে বছর হের পোয়াতি বৌডা মইরা গেছে । বাচ্চা-গাচ্ছা অইছিল না । ম্যালা বছর চেষ্টা-তদবির কইরা বৌডা মা অইতে চাইছিল । আল্লায় না দিলে মাইনষে দিতে পারে ? পারে নাই, হেই দিন আমি আছিলাম । পোলা ধরণী ময়মুনা খালাও আছিল । ময়মুনা খালারে তিন-চারদিন আগে থেইক্কাই ঘরে আইনা রাকছে মজিদ মিয়া । কোনসুম বৌয়ের সন্তান জন্মের বেদোনা উডবো হেইয়া তো কওন যায় না, নিজে থাহে জিড়াইতের খ্যাতে । বিয়াল বেলা ক্যাল ব্যতা উট্টা আবার থাইমা যায় । বাচ্চার মাতা একটু বাইড়ায় আবার মইদ্দে হাইন্দা যায় । খালায় আমারে কইল – বৌ, তুমি দেহ তো ওরে বইমি করাইতে পারো কি না । বইমি অওনের চাপ আইলে বাচ্চা বাইর অইয়া আইবো । আমি তো নতুন, এই সব বুজুম কেইমনে ? আগে তো কোনও দিন গুড়াগাড়া অইতে দেহি নাই । তহন খালায় হিকাইয়া দিল – ওর মাতার চুল তোমার আঙ্গুলে প্যাচাইয়া মোহের মইদ্দে হানদাইয়া দেও, দেকপা অক অক করবো আর তহনই বাচ্চা বাইর অইবো। (চলবে…)