এপ্রিল ২৬, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জাতীয় নির্বাচন প্রচ্ছদ রাজণীতি

কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তায় ‘গ্রাম হবে শহর’

বাংলাদেশকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ডেল্টা প্ল্যান বা বদ্বীপ পরিকল্পনা প্রাধান্য পাচ্ছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে। একই সঙ্গে বিপুলসংখ্যক তরুণ ভোটারকে আকৃষ্ট করার জন্য তাদের কর্মসংস্থান এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার থাকছে।

খসড়া ইশতেহারে কয়েকটি স্লোগান প্রস্তাব করা হয়েছে, যার মধ্যে আছে ‘সমৃৃদ্ধ বাংলাদেশ’ ও ‘গ্রাম হবে শহর’। এ খসড়াটি খতিয়ে দেখছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খসড়া ইশতেহারের কিছু অংশ দেখে সংযোজন-বিয়োজনের জন্য তিনি ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির কাছে ফেরত পাঠিয়েছেন। একটি স্লোগান নির্ধারণ করার পাশাপাশি খসড়ার বাকি অংশ চূড়ান্ত করে তিনি তা কমিটির কাছে ফেরত দেবেন।

আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের পর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ওই সদস্যরা জানান, তাঁদের নির্বাচনী ইশতেহারে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০, ব্লু-ইকোনমি, সারা দেশের গ্রামগুলোকে শহরে পরিণত করার অঙ্গীকার থাকছে। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে শতভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুত্ সুবিধা পৌঁছানোর। গ্রামগুলোয় শহরের মতো নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা এবং সুশাসন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার থাকছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু ও দ্বিতীয় যমুনা সেতু নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট উেক্ষপণসহ ২১০০ সাল পর্যন্ত ৮১ বছরের ডেল্টা পরিকল্পনা, শুকনো মৌসুমে পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নদীর পানির প্রবাহ ঠিক রাখা, দেশের বিভিন্ন স্থানে জেগে ওঠা নতুন চরগুলোকে কাজে লাগানো, নদীভাঙন ঠেকানো এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকছে নির্বাচনী ইশতেহারে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আমরা একটি সমৃদ্ধ দেশ গঠনের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। বিগত নির্বাচনে আমাদের যে ইশতেহার ছিল তার আলোকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ গঠনের কাজে সফল হয়েছি। এবারের ইশতেহারে উন্নত দেশ গঠনের কাজ বেগবান করার নানা ঘোষণা থাকবে।’

আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, ‘ইশতেহারের খসড়া নেত্রীর (শেখ হাসিনা) কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। গত ১০ বছরের ব্যাপক উন্নয়নের ফিরিস্তি দিতে গিয়ে এই ইশতেহারের কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি দেখে নেত্রী এর দালিলিক মূল্যের প্রশংসা করে বলেছেন, আওয়ামী লীগের জন্য এটা একটা সুন্দর দলিল। তবে মানুষের দৃষ্টিগোচর ও আরো আকর্ষণীয় করতে এর কলেবর ছোট করার জন্য তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি ইশতেহারের পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখছেন এবং তাঁর পর্যবেক্ষণ জানিয়েছেন। নেত্রীর উপদেশ মতো কমিটি ইশতেহারের কলেবর একটু ছোট করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তাঁর কাছে উপস্থাপন করবে।’

জানা গেছে, ইশতেহারে তরুণদের ক্ষমতায়ন, নতুন ভোটারদের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থানের অগ্রাধিকার, ঘোষিত ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি থাকবে। পররাষ্ট্র নীতিতে নতুন কৌশল, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর আশ্বাস, নারীবান্ধব কর্মসূচি, বয়স্ক পুনর্বাসন ও বিশ্বব্যাপী ব্যবসা সম্প্রসারণ নীতি, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণের রোডম্যাপ স্থান পাবে ইশতেহারে। এ ছাড়া এতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী ব্যাপকভাবে উদ্যাপন করার ঘোষণা থাকবে।

সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, উৎপাদনমুখী ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার মান উন্নয়ন, পুষ্টিকর নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা, গ্রামাঞ্চলের অর্থনীতির উন্নয়ন, চরাঞ্চলের মানুষ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি, গুণগত শিক্ষা এবং রাজস্ব খাত থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে শহরাঞ্চলের মতো গ্রামীণ এলাকায়ও পরিকল্পিত ঘরবাড়ি নির্মাণ, গ্যাস, বিদ্যুত্, পানি সরবরাহ, স্বাস্থ্যসম্মত পয়োনিষ্কাশন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার থাকছে ইশতেহারে। এর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে জিডিপির প্রবৃদ্ধি দুই ডিজিটে উন্নীত করা। এতে দারিদ্র্য হার কমানো, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনের পরিকল্পনা, পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক-জনবান্ধব করার প্রতিশ্রুতি থাকবে। দেশ পরিচালনার সঙ্গে তরুণদের কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায় সেটি তুলে ধরা হবে ইশতেহারের মাধ্যমে। ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি রোধে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থার উল্লেখ থাকবে এতে।

দলের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে আওয়ামী লীগ। তাই দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রাধান্য পাচ্ছে ৮১ বছর মেয়াদি বদ্বীপ পরিকল্পনা। গত ৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে পাস হওয়া বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যানে যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে দলিলের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো স্থান পাচ্ছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে।

ইশতেহার প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তি জানান, স্বাধীন বাংলাদেশের ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি। এবার আওয়ামী লীগ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ভবিষ্যতে যেকোনো নীতি-পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় ডেল্টা প্ল্যানকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হবে।

ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান সুন্দরবনকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ডেল্টা প্ল্যানে। সোয়া ছয় হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত সুন্দরবন অঞ্চলে ঘসিয়াখালী চ্যানেলসহ অন্যান্য চ্যানেলে নিয়মিত ড্রেজিং করার পাশাপাশি সুন্দরবন রক্ষায় নানামুখী পদক্ষেপের কথা বলা আছে বদ্বীপ পরিকল্পনায়। নির্বাচনী ইশতেহারেও সুন্দরবন রক্ষায় পরিকল্পনার কথা থাকছে।

জানা যায়, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ৫৭টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা সম্পর্কে পরিকল্পনার কথা থাকছে। নকশা পরিবর্তন করে কিভাবে গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণ করা যায়, সে বিষয়েও অঙ্গীকার থাকার কথা রয়েছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক বলেন, বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হলে ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপির প্রবৃদ্ধি দেড় শতাংশ বাড়বে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, সারা বিশ্ব জানে বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। বদ্বীপ পরিকল্পনা এক বছরের জন্য নয়, পাঁচ বছরের জন্যও নয়। এই পরিকল্পনাটি শতাব্দীর জন্য করা হয়েছে। পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে পরিকল্পনাটি করা হয়েছে। আগামী দিনের নীতি পরিকল্পনার ভিত্তি হবে এই বদ্বীপ পরিকল্পনা। তিনি বলেন, ডেল্টা প্ল্যানের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর তথ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তার কাছে চাওয়া হয়েছিল। নদী ভাঙন রোধ, শুকনো মৌসুমে পানির নিশ্চয়তা, নতুন চর কাজে লাগানো, অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন দিক থাকছে দলটির নির্বাচনী ইশতেহারে।

পানি বিশেষজ্ঞ ইনামুল হক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে যদি বদ্বীপ পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ কিছু দলিল সংযোজন করা হয়, তা নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। কারণ বদ্বীপ পরিকল্পনা শুধু নদী-নালা, খাল-বিল নিয়ে নয়, এটি পুরো বাংলাদেশ ঘিরে পরিকল্পনা। তবে এত সুন্দর পরিকল্পনাকে শুধু কাগজের মধ্যে দেখতে চাই না। এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই।’

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, বাংলাদেশে এর আগে কখনো এত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছিল না। সে ক্ষেত্রে বদ্বীপ পরিকল্পনা একটি ভালো উদ্যোগ। তিনি বলেন, পরিকল্পনায় অনেক কিছু লেখা যায়। বাংলাদেশে এর আগে অনেক বিষয়ে পরিকল্পনা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। কারণ বাস্তবায়ন খুবই কঠিন কাজ।

জানা গেছে, গত মাসে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার এক বৈঠক শেষে অনির্ধারিত আলোচনায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ইশতেহারের বিষয়ে কিছু দিকনির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে নির্বাচনী ইশতেহারে। প্রধানমন্ত্রী সারা দেশ থেকে নির্বাচিত কিছু তরুণের সঙ্গে ‘লেটস টক’ নামে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে তাদের ভাবনার কথা শুনেছেন। সেসব ভাবনার বেশ কিছু অংশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ইশতেহারে।

জানা গেছে, নির্বাচনী ইশতেহারে বেশ কয়েকটি স্লোগান প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি এখনো কোনো স্লোগানই চূড়ান্ত করেননি। প্রতিটি গ্রামকে শহরে পরিণত করার ঘোষণা, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয়, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে স্লোগানগুলো প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘দিন বদলের সনদ’। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন উপলক্ষে ঘোষিত ইশতেহারের শিরোনাম ছিল ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’।

সম্পর্কিত পোস্ট

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিচার ৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে: আইন উপদেষ্টা

banglarmukh official

শুক্রবার কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক, দ্রুত বিচার নিশ্চিতের নির্দেশ

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official