চার দফা প্রস্তাবের পর অবশেষে আলোর মুখ দেখেছে পুলিশের জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে নতুন করে গঠিত বিশেষায়িত ইউনিট ‘পুলিশ অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট’ (পিএটিইউ)। আগামী বছর থেকে এ ইউনিটের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে।
দেশের যে কোনো স্থানে নিজের ক্ষমতাবলে অপারেশন চালানো, গ্রেফতার ও তদন্তকাজ পরিচালনা করতে পারবে বাহিনীটি। বিশেষায়িত এ ইউনিটের সঙ্গে থাকছে কাউন্টার টেরোরিজমের অন্তর্ভুক্ত পুলিশের স্পেশাল উইপনস অ্যান্ড ট্যাকটিকস (সোয়াট) ও বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল (বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট)।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, আপাতত পিএটিইউ’র সদর দফতর থাকছে ঢাকায়। পরবর্তীতে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে এর একটি করে আঞ্চলিক ইউনিট গঠিত হবে। সারাদেশে সমন্বিতভাবে জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে দায়িত্ব পালন করবে এ ইউনিটের সদস্যরা।
এছাড়া কুরআন ও হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা, জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পথভ্রষ্টদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনাসহ বেশকয়েকটি বিষয় নিয়ে কাজ করবে বাহিনীটি।
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাহিনীটির পলিসি (নীতি-নির্ধারণ), দায়িত্ব ও কাজের ক্ষেত্র; সার্বিক বিষয়গুলো চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। একটি সভার মাধ্যমে শিগগিরই এগুলো চূড়ান্ত করে কাজ শুরু করবে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট।’
ইতোমধ্যে ৫৮১ জনবল নিয়োগের অনুমোদন পেয়েছে বিশেষায়িত এ ইউনিট। ইউনিটের প্রধান থাকবেন একজন অতিরিক্ত আইজিপি। এছাড়া এ ইউনিটে একজন ডিআইজি, একজন অতিরিক্ত ডিআইজি ও আটজন পুলিশ সুপার থাকবেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলামকে এ বাহিনীতে উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদে বদলি করা হয়েছে। বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি (সাবেক ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারেন।
ঊর্ধ্বতন দুজন ছাড়া এ ইউনিটে দুজন অতিরিক্ত ডিআইজি, পাঁচজন পুলিশ সুপার (এসপি), ১০ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অ্যাডিশনাল এসপি), ১২ জন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি), পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) ৭৫ জন, সশস্ত্র ও নিরস্ত্র উপ-পরিদর্শক (এসআই) ১২৫ জন, সশস্ত্র ও নিরস্ত্র সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ১৪০ জন, কনস্টেবল ২০০ জন, একজন সিস্টেম অ্যানালিস্ট, একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট মেইন্টেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার, একজন সহকারী প্রোগামার, দুজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, দুজন বাবুর্চি এবং তিনজন পরিচ্ছন্ন কর্মী থাকবেন।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, নতুন এ বাহিনীতে প্রেষণের জন্য ইতোমধ্যে আর্মড পুলিশের ২৫ জন এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের ১৫ কর্মকর্তাকে ভারতের ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড সেন্টার থেকে কমান্ডো প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া সিংহভাগ জনবল যাবে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট থেকে।
বাহিনীটির কার্যক্রম পরিচালনা জন্য ১৬টি জিপ, দুটি সোয়াট ভ্যান, আটটি ডাবল কেবিন পিকআপ, একটি অ্যাম্বুলেন্স, একটি ট্রাক, একটি আর্মড পারসোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি), একটি প্রিজন ভ্যান, একটি ওয়াটার ট্রেইলার ও ১০টি মোটরসাইকেল দেয়ার অনুমোদন দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এর আগে বাহিনীটি গঠনের জন্য ২০০৯, ২০১১ ও ২০১৪ সালে পুলিশের পক্ষ থেকে তিন দফা প্রস্তাব দেয়া হয় কিন্তু কোনো অনুমোদন দেয়া হয়নি। সর্বশেষ গত বছর জুলাই মাসে সরকারের চতুর্থ দফা প্রস্তাবের পর সম্প্রতি এর অনুমোদন দেয় সরকার।