পয়েন্ট টেবিলে সবার ওপরে কুমিল্লা; কিন্তু সর্বাধিক তারকার দল ঢাকা ডায়নামাইটস। এক ঝাঁক নামি-দামি ক্রিকেটারের ছড়াছড়ি। কুমারা সাঙ্গাকারা, এভিন লুইস, শহিদ আফ্রিদি, সুনিল নারিন, কাইরন পোলার্ড, কেভিন কুপার, মোহাম্মদ আমির ও জো ড্যানলি- কত নাম।
মাঠের পারফরমেন্সে এখন পর্যন্ত কুমিল্লা সেরা; কিন্তু কাগজে-কলমে ঢাকা এখনো এক নম্বর দল। তবে তারকাভর্তি দল ঢাকা ডায়নামাইটস কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন কোয়ালিফায়ারের লড়াইয়ে কুমিল্লাকেই এগিয়ে রাখতে চান। খালেদ মাহমুদের চোখে, শুক্রবারের ম্যাচে ফেবারিট কুমিল্লা। আর ঢাকা হলো আন্ডারডগ।
ঢাকা সন্দেহাতীতভাবেই সর্বাধিক তারকায় ঠাসা দল; এতে কোনো সন্দেহ নেই। যে কোন দলের চেয়ে তাদের রিজার্ভ বেঞ্চ অনেক বেশি সমৃদ্ব। কুমারা সাঙ্গাকারা, শহিদ আফ্রিদি, মোহাম্মদ আমির আর কেভিন কুপারের মত ক্রিকেটারও যে দলের হয়ে নিয়মিত খেলার সুযোগ পান না। যাদের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের মত টি টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সেই দলকে কোয়ালিফায়ার পর্বে আন্ডারডগ ভাবা হবে না কেন?
এ নিয়ে নিশ্চয়ই প্রশ্ন উঠছে। তার ব্যাখ্যাও অবশ্য দিয়েছেন ঢাকার কোচ। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স তাদের দু’বার হারিয়েছে এবং ধারাবাহিকভাবে ভাল পারফরম্যান্স করেছে। তাই ঢাকা ডায়নামাইটস কোচের মন্তব্য, ‘প্রথম কথা হচ্ছে কাল আমরা আন্ডারডগ হিসেবে খেলব। কুমিল্লা আমাদের সাথে দুটি ম্যাচই জিতেছে। দারুণ খেলেছে তামিমের দল।’
তবে কি ঢাকা ভাল খেলেনি? এ প্রশ্নের জবাবে খালেদ মাহমুদ সুজনের ব্যাখ্যা, ‘আমরাও ভাল খেলছি। তবে আমাদের ধারাবাহিকতার একটু অভাব ছিল। যদিও দুই ভেন্যুতে আমরা দুশো রানের উপরে করছি, আবার কিছু ম্যাচে দেড়শ রানের কমে থেমে গেছি। তো ওই জায়গায় একটু ধারাবাহিকতার অভাব ছিল।’
ঢাকা কোচের মূল্যায়ন, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সঠিক সময় জ্বলে ওঠা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শুক্রবার কুমিল্লার সাথে ম্যাচে তার দলের ক্রিকেটাররা ওই সময় মত জ্বলে উঠবেন- এমনটাই আশা খালেদ মাহমুদের।
তাই তো মুখে এমন কথা, ‘এই ফরম্যাটে যেটা হয় যে, রাইট টাইমে মোমেন্টাম পিক করা। আমার মনে হয় সেই হিসাবে আমরা কালকে একটা দারুণ ম্যাচ (রংপুরের বিপক্ষে) জিতছি অল্প রান করেও। আমাদের বোলিং অসাধারণ ছিল, সাকিব ক্যাপ্টেনের ভূমিকা দারুণভাবে পালন করেছে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। আমাদের লোকাল স্টার যারা আছে তারাও ভাল টাইমে পিক করছে।’
কোয়ালিফয়ার ম্যাচে খুব গুরুত্বপূর্ণ গেম অভিহিত করে ঢাকা কোচ বলেন, ‘খুব টাইট গেম হবে। মনে হয় দারুণ লড়াই হবে।’
প্রতিপক্ষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ফেবারিট মানলেও তাদের নিয়ে বেশি ভাবতে নারাজ ঢাকার কোচ। তার চিন্তা-ভাবনার বড় অংশ জুড়ে আছে নিজ দল। তার মূল্যায়ন, ‘প্রতিদ্ব›িদ্ব হচ্ছে প্রতিপক্ষ। যাকে আপনি নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন না। কেবল নিজেদেরটাই করতে পারবেন। যখন টপ অর্ডার পারফর্ম করে তখন বেশি কিছু লাগে না। মূল কথা হচ্ছে আমাদের টপ অর্ডার কেমন করছে সেটা। আমাদের টপ অর্ডারে দারুণ কিছু খেলোয়াড় আছে। যেমন লুইস, নারিন। এরা প্রমাণ করেছে তারা বড় ইনিংস খেলতে পারে। জো ড্যানলি শেষ ম্যাচ ছাড়া ভাল করেছে। টপ অর্ডারে রান পেলে আমার মনে হয় আমরা বড় স্কোর ছুঁড়ে দিতে পারব।’
যেহেতু দুপুরে খেলা। তাই টসের তেমন কোন কার্যকর প্রভাব পড়বে না। খালেদ মাহমুৃদ সুজনেরও মনে হয় না টসের তেমন কোন গুরুত্ব আছে। তার কথা হলো, গেম প্ল্যান গুরুত্বপূর্ণ। আপনার প্রতিপক্ষকে, কতটা রিড করতে পারছেন সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আগে কিংবা পরে ব্যাটিং নয়, মোমেন্টামটা গুরুত্বপূর্ণ। শুরুটা ভাল না হলে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়তে হয়। এ কারণে এখানে শুরুটা গুরুত্বপূর্ণ। গতকালকের শুরুটা আমাদের ভাল ছিল না; কিন্তু পরের দিকে সাকিব ও মারুফ ভাল জুটি করেছে- এটা একটা ভাল উদাহরণ। তাতে অন্তত একটা পুঁজি দিতে পেরেছিলাম যাতে লড়াই করা যায়। আমাদের বোলিং শক্তিশালী ছিল। তারা তাদের ভূমিকা পালন করছে বলে ইজি ছিল। শুরটা খুব দরকারি, প্রথম ছয় ওভার খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
ঢাকা কোচের শেষ বক্তব্য, ‘আমি সব সময়ই বিশ্বাস করি, এই টুর্নামেন্ট জেতার যথেষ্ঠ সামর্থ আছে আমাদের।’ তাহলে সেই সামর্থ্যরে যথাযথ প্রয়োগ ঘটছে না কেন?
এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে খালেদ মাহমুদ সুজন জাগো নিউজকে জানান, দলে উঁচু মানের বিদেশি ক্রিকেটার বেশি থাকাটা প্লাস পয়েন্টের পাশাপাশি ‘মধুর সমস্যা’ হয়েও দেখা দিয়েছে। কাকে রেখে কাকে খেলাবেন? চিন্তায় পড়ে গেছেন তিনি। তারচেয়ে বড় কথা, সঠিক কম্বিনেশন তৈরি করাটাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
তারপরও বিদেশিদের কাছ থেকে দায়িত্বপূর্ণ পারফরম্যান্সের আশায় ঢাকা কোচ, ‘আমি চাই যে আমার বিদেশি খেলোয়াড়রা এমন দায়িত্ব নিয়ে খেলুক। আমি বলছি না যে আলাদা বাড়তি দায়িত্ব। আমি চাই তারা খেলা উপভোগ করুক। মাঠে রেজাল্ট কি হয় না হয় সেটা পরের ব্যাপার; কিন্তু উপভোগ করুক এটা চাই। লুইসের স্টাইল বদলাতে বলব না, পোলার্ডের স্টাইলও বদলাতে বলব না। চাইব তারা তাদের মতই খেলুক। দেখি কি হয়!’