প্রচারের সময় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে পা ভেঙে যাওয়া বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের ঐক্যফ্রন্টের সংসদ সদস্য প্রার্থী জেএম নুরুর রহমান জাহাঙ্গীরকে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) কবিতা খানমের সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বরিশাল জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে।
সন্ত্রাসী হামলার শিকার ওই প্রার্থী দেখা করতে সার্কিট হাউসে গেলে সেখান থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয় বলে জানা যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় বরিশাল সার্কিট হাউসে এ ঘটনা ঘটে।
আহত সংসদ সদস্য প্রার্থী জেএম নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর অভিযোগ করেন, গত বুধবার আমার নির্বাচনী এলাকার মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা সদর পাতারহাট বন্দরে থানার ওসিকে জানিয়ে ধানের শীষের পক্ষে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগে অংশ নিই। জোহরের আজানের পর নেতাকর্মীদের বিদায় দিয়ে আমি বন্দরের বিএনপি নেতা আফসার হোসেন আলমের বাসভবনে যাচ্ছিলাম। সেখানে প্রবেশের মুহূর্তে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শাকিলের নেতৃত্বে অর্ধশত স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগ ক্যাডার হকিস্টিক ও লাঠিসোটা নিয়ে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
এ সময় মেহেন্দীগঞ্জ থানার ওসি শাহিন খানকে বিষয়টি জানানো হলেও থানা থেকে মাত্র ৫০০ গজ দূরত্বের ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়নি।
ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী জানান, সন্ত্রাসীরা আমার বাঁ পায়ের হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত পিটিয়ে ভেঙে বীরদর্পে এলাকা ত্যাগ করার প্রায় দুঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। হামলায় আহত জাহাঙ্গীরকে বুধবার রাতে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মেডিক্যালে ভর্তি অবস্থায় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী জেএম নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর এবং বিএনপির স্থানীয় শীর্ষ নেতারা নির্বাচন কমিশনার (ইসি) কবিতা খানম বরিশাল সার্কিট হাউসে অবস্থান করছেন এ সংবাদ পাওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্সে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন। সার্কিট হাউসের দ্বিতীয় তলায় ১নং কক্ষে অবস্থানরত কবিতা খানমের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য নিচতলার সিঁড়ির সামনে স্ট্রেচারে শুয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনারের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা কবিতা খানমের রুমে অবস্থানরত জেলা রিটার্নিং অফিসার ও বরিশাল জেলা প্রশাসক অজিয়র রহমানকে জানালে তিনি নিচে নেমে আসেন এবং সাক্ষাতের বিষয় সম্পর্কে জানতে চান।
নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করা যাবে না এবং গতকালের ঘটনা তিনি কিছুই জানেন না বলে প্রার্থী এবং তার সঙ্গে থাকা বরিশাল বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম আসেন এবং জেলা প্রশাসকের সঙ্গে একই সুর মিলিয়ে আহতকে হাসাপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য বলেন।
এ সময় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার আহত প্রার্থীকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বললে প্রার্থীকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলতে বাধ্য হন তার সঙ্গে আসা নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে জেলা রিটার্নিং অফিসার জেলা প্রশাসক অজিয়র রহমান স্বীকার করে বলেন, সার্কিট হাউসে দেখা করার জন্য বরিশাল-৪ আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এসেছিলেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনারের সময়স্বল্পতার কারণে দেখা করতে পারবেন না বলে তাকে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে পাঠিয়েছি।
ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর বলেন, বরিশাল-৪ আসনে সরকারদলীয় প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থী বা তার সমর্থকরা বর্তমানে অনিরাপদ। প্রশাসনের সহায়তায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হচ্ছে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং সংসদ সদস্য প্রার্থীর নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বরিশাল উওর জেলা বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন, উওর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মেজবাউদ্দিন ফরহাদ, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন দিপেন, হিজলা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নুরুল আলম রাজু ও অ্যাডভোকেট দেওয়ান মনির হোসেন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ রফিকুল ইসলাম লাবু।