রাজধানীর দয়াগঞ্জ এলাকায় সোমবার ছিনতাইকারীর থাবাতে মায়ের কোল থেকে রাজপথে পড়ে ছয় মাসের শিশু আরাফাতের মৃত্যুর ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। সেই মামলার আসামি ছিনতাইকারীকে ধরতে পুলিশের তিনটি টিম মাঠে নেমেছে।
দফায় দফায় অভিযান চালানো হচ্ছে দয়াগঞ্জের নামা পাড়া বস্তিতে। গতকাল বস্তিটিতে গিয়ে দেখা গেছে আতংক বিরাজ করছে। তবে বস্তিবাসী পুলিশের এই ভূমিকায় খুশি। তারা বলেন, সব সময় পুলিশের এমন অভিযান চললে এ বস্তিটি ছিনতাইকারী ও মাদকমুক্ত হতে পারতো।
এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার কারণে একজন এএসআইকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে পুলিশের কেউ বিষয়টি স্বীকার করতে চাইছেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান গতকাল রাতে বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমরা জানা নেই।
শরিয়তপুরের শাহ আলম তার স্ত্রী আকলিমা, বড় ছেলে আলামিন (৪) ও ছয় মাসের ছেলে আরাফাতকে নিয়ে গত রবিবার রাতে শরিয়তপুর থেকে লঞ্চ যোগে ঢাকার পথে রওয়ানা হন। সোমবার ভোর ৫টার দিকে সদরঘাটে নেমে শনির আখড়ায় যাওয়ার জন্য একটি রিক্সা নেন।
আরাফাতকে কোলে নিয়ে রিকশার বাম দিকে বসেন আকলিমা। ডানদিকে আলামিনকে নিয়ে বসেন শাহ আলম। তাদের ছেলে আলামিন অসুস্থ। তাকে চিকিৎসা করাতেই তাদের ঢাকায় আসা। ভোর ৬টার দিকে দয়াগঞ্জ এলাকা পার হওয়ার সময় এক ছিনতাইকারী আকলিমার কাছে থাকা ভ্যানিটি ব্যাগ সজোরে টান দিয়ে নিয়ে যায়।
এ সময় কোলে থাকা শিশু আরাফাতকে নিয়ে তিনি পড়ে যান রাস্তায়। আরাফাত ঘটনাস্থলেই মারা যায়। মিডিয়ার মাধ্যমে এ খবর জেনে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। ঘটনাস্থলে যান ঊর্ধ্বতন পুলিশ ও র্যাবের কর্মকর্তারা। তখন থেকেই ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তারের জন্য মাঠে নামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ জানতে পেরেছে, একজন ছিনতাইকারী ব্যাগটি ছো মেরে টেনে নিয়ে গলি পথে দৌড়ে পালিয়ে যায় নামা পাড়া বস্তির দিকে। এলাকাবাসী জানায় এ বস্তিতে অনেক ছিনতাইকারী বসবাস করে। তারা মাদক সেবন করে। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সুযোগ পেলেই দয়াগঞ্জ এলাকায় ছিনতাই করে তারা।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে দয়াগঞ্জ এলাকার নামাপাড়া বস্তিতে গিয়ে দেখা গেছে বাসিন্দারা আতংকগ্রস্ত। নতুন কাউকে বস্তিতে দেখে তাদের সবার চোখ তার দিকে। খোকন নামের একজন জানালেন, সকাল বিকাল পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। যে কারণে এখানকার বাসিন্দারা আতংকিত। তবে তিনি পুলিশের এ ভূমিকায় খুশি বলে জানান। তিনি বলেন, ‘বস্তির মাদকসেবী, ছিনতাইকারীরা পুলিশের ভয়ে পালিয়ে গেছে। যে কারণে বস্তিতে এখন শান্তি। সব সময় যদি এমন থাকতো তাইলে ভালো লাগতো। ‘
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, তদন্তে নেমে পুলিশ ওই এলাকার নামা পাড়া বসি্ততে কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছে। শুধু থানা পুলিশই নয় ডিবিরি সিরিয়াস ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরাও নেমেছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দয়াগঞ্জের যে স্থানে ঘটনাটি ঘটেছে তার কাছেই একটি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা পাওয়া গেছে। কিন্তু সেই ক্যামেরায় ঘটনাটি নেই। পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, আরাফাতের বাবা ছিনতাইকারীর বর্ণনা দিতে পেরেছেন। সেই বর্ণনা থেকে অনেকটা এগুতে পারবে পুলিশ।
এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার কারণে যাত্রাবাড়ী থানার এএসআই বদরুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পুলিশ সূত্র জানায়, ঘটনাস্থলের ১০০ গজ দূরেই দায়িত্ব পালন করছিলেন যাত্রাবাড়ী থানার এএসআই বদরুলের নেতৃত্বে তিনজন পুলিশ সদস্য। কাছাকাছি দায়িত্বরত থাকা সত্বেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায় দায়িত্ব অবহেলার কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে নাম প্রকাশ করে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি স্বীকার করতে চাননি।