26 C
Dhaka
মে ৪, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
ইসলাম ধর্ম

যে কারণে অতিরিক্ত পানাহার নিষেধ করেছে ইসলাম

সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার জন্য এবং শারীরিক পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সুষম খাদ্যের প্রয়োজন। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খেলে তা স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

সুস্থ-সবল শরীরে আল্লাহর ইবাদত করার উদ্দেশ্যে সাধ্যমতো উত্তম ও সুস্বাদু খাবার গ্রহণে ইসলামের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ ও অপচয় করা থেকে নিরুৎসাহ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘পানাহার করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩১)

মিকদাম ইবন মাদিকারাব (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, পেটের চেয়ে মন্দ কোনো পাত্র মানুষ ভরাট করে না। পিঠের দাঁড়া সোজা রাখার মতো কয়েক লোকমা খাবারই আদম সন্তানের জন্য যথেষ্ট। আর বেশি খাবার ছাড়া যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য আর বাকি তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৮৩)

উপরোক্ত হাদিসে পরিমিত খাবারের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ অপরিমিত খাবার মানুষকে দুর্বল করে ফেলে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের ৮০ শতাংশ রোগব্যাধি খাবারের কারণেই হয়ে থাকে। অপরিমিত খাবারই মানুষকে দিন দিন মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। ল্যানসেটে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, দৈনন্দিন যে খাদ্য তালিকা সেটিই ধূমপানের চেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটায় এবং বিশ্বব্যাপী প্রতি পাঁচটি মৃত্যুর মধ্যে একটির জন্য এই ডায়েট বা খাবারই দায়ী। (বিবিসি)

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন শুধু খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে বছরে ২৩.৬ শতাংশ বা এক কোটি ১৬ লাখ লোকের অকালমৃত্যু ঠেকানো যাবে।

সাহাবায়ে কেরামও অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ পছন্দ করতেন না। আতিয়্যাহ বিন আমির আল-জুহানি (মাকবূল) থেকে বর্ণিত, আমি সালমান (রা.)-এর নিকট শুনেছি, তাঁকে আহার করতে পীড়াপীড়ি করা হলে তিনি বলতেন, আমার জন্য যথেষ্ট যে আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, দুনিয়াতে যেসব লোক ভূরিভোজ করে, তারাই হবে কিয়ামতের দিন অধিক ক্ষুধার্ত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩৫১)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘কাফির সাত আঁতে আহার করে অর্থাৎ বেশি পরিমাণ খায়, আর মুমিন এক আঁতে আহার করে অর্থাৎ কম খায়।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩৯৩)

অধিক ভোজনের প্রাথমিক ফল হলো ডায়াবেটিস। কেননা বেশি খাওয়ার কারণে লালগ্রন্থিকে বেশি কাজ করতে হয়। এ কারণে অভ্যন্তরীণ আর্দ্রতা রস  (insulin) কমে যায় এবং রক্তে চিনির  (suger) পরিমাণ বেড়ে যায়। অধিক ভোজন রক্তের চাপ বৃদ্ধির আরেকটি অত্যাবশ্যকীয় কারণ। কেননা ডায়াবেটিস এবং ব্লাড প্রেসার পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। অধিক ভোজনের কারণে প্যারালাইসিস হয়ে থাকে। এতে রক্তবাহী শিরাগুলো সংকীর্ণ হয়ে যায়। ফলে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়। এভাবে যখন শিরাগুলো সংকীর্ণ হয়ে পড়ে, তখন সংশ্লিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অনুভূতিহীন হয়ে যায়। আর এ অবস্থা মস্তিষ্কের কোনো অংশে হঠাৎ প্রকাশ পেলে মানুষ প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়।

আর অধিক ভোজনের ফলে অসময়ে বার্ধক্যে পতিত হয়ে থাকে। কেননা বেশি খেলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো যথাযথভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে মানুষ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই দুর্বল বা শক্তিহীন হয়ে যায় এবং তাকে অতি অল্প বয়সেই বৃদ্ধ বলে মনে হয়।

অধিক ভোজনের কারণে শরীর মোটা বা স্থূল হয়ে থাকে। এই অবস্থায় বহুবিধ রোগব্যাধি হয়ে থাকে।

Bone Marrow pain বা অস্থিমজ্জার ব্যথা, লড়রহঃ ঢ়ধরহ ইত্যাদি হয়ে থাকে।

স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের মতে, মানুষের কোমর সোজা রাখার জন্য কয়েক লোকমা খাদ্যই যথেষ্ট। আর একান্তই যদি বেশি খাওয়া আবশ্যক হয়ে পড়ে তাহলে পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য, এক-তৃতীয়াংশ পানি দ্বারা পূর্ণ করে বাকি এক ভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখতে হবে, যা একমাত্র রাসুল (সা.)-এরই নির্দেশ ছিল।

প্রফেসর রিচার্ড বার্ড গবেষণার পর প্রকাশ করেছেন যে বেশি খাদ্য খেলে নিম্নলিখিত রোগব্যাধির সৃষ্টি হয়—১. মস্তিষ্কের ব্যাধি। ২. চক্ষুরোগ। ৩. জিহ্বা ও গলার ব্যাধি। ৪. বক্ষ ও ফুসফুসের ব্যাধি। ৫. হৃদেরাগ। ৬. যকৃৎ ও পিত্তের রোগ। ৭. ডায়াবেটিস। ৮. উচ্চ রক্তচাপ। ৯. মস্তিষ্কের শিরা ফেটে যাওয়া। ১০. দুশ্চিন্তাগ্রস্ততা ১১. অর্ধাঙ্গ রোগ। ১২. মনস্তাত্ত্বিক রোগ। ১৩. দেহের নিম্নাংশ অবশ হয়ে যাওয়া। (সূত্র : সুন্নাতে রাসুল ও আধুনিক বিজ্ঞান)।

তাই আমাদের উচিত, খাবারসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসুল (সা.)-এর সুন্নতকে আঁকড়ে ধরা। তবেই আমরা অর্জন করতে পারব পবিত্র ও সুস্থ জীবন।

সম্পর্কিত পোস্ট

রোজা রেখে আতর-পারফিউম ব্যবহার করা যাবে?

banglarmukh official

গর্ভবতী নারীর রোজার মাসয়ালা

banglarmukh official

তারাবির নামাজ ছুটে গেলে করণীয়

banglarmukh official

রোজা অবস্থায় কি দাঁত ব্রাশ করা যাবে?

banglarmukh official

চাঁদ দেখা গেছে, সৌদি আরবে রোজা শুরু শনিবার

banglarmukh official

শাবান মাসে কত তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখা যাবে

banglarmukh official