হাইকোর্টের মাজার গেটের সামনে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৪টায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুরান ঢাকার বকশীবাজারের আদালতে হাজিরা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহর মাজারের সামনে আসলে হাইকোর্টে অবস্থান করা দলের নেতাকর্মীরা বের হতে চান। এসময় পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। বিএনপি নেতাকর্মীরাও পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি হাইকোর্ট থেকে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে অপেক্ষমাণ খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে যুক্ত হতে চাইলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এসময় অনেক নারী নেত্রীকেও পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে বলে দাবি করেন তারা। প্রত্যাক্ষদর্শীরা আরো জানান, পুলিশি বাধা পাওয়ার পর হাইকোর্ট থেকে রাস্তায় এসে হঠাৎ পুলিশের ওপর হামলা চালায় বিএনপি নেতাকর্মীরা। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে খালেদার গাড়িবহরের সঙ্গে থাকা দলটির নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলায় পুলিশ আত্মরক্ষার করতে অবস্থানরত জলকামান ও এপিসির পেছনে চলে যায়। মাইকের মাধ্যমে বিএনপি নেতাকর্মীদের সতর্ক করলেও প্রায় ১০ মিনিট ধরে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন তারা। সংঘর্ষ চলাকালে খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িটি হাইকোর্টের মাজার গেটের সামনে ১৫ মিনিট অবস্থান করে। দলের নেতাকর্মীদের একাংশ খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ঘিরে রাখলেও অন্য অংশ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
এর আগে বিকেল ৪টায় পুরান ঢাকার বকশীবাজার আদালত থেকে গুলশানের বাসভবন থেকে রওয়ানা করেন বেগম জিয়া। বুধবারের মতো আজো হাইকোর্টের ভেতরে পুলিশ নেতাকর্মীদের আটকে রেখেছে এমন সংবাদ শুনে মাজার গেটের সামনে তার গাড়িবহর এসে থামান। এসময় প্রায় ৫ মিনিট হট্টোগোলের পর পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে আসলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তারা। তবে ১৫ মিনিট ধরে চলা এই সংঘর্ষে কোনো হতাহতের সংবাদ পাওয়া যায়নি। অপরদিকে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে চাঁনখারপুলের পাশ ঘেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মহিলা নেত্রীদের ওপরও চড়াও হয় পুলিশ।
ডিএমপি রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বাংলার মুখ ২৪ ডট কমকে বলেন, ‘হাইকোর্টে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল ছুড়েছে। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। শাহবাগ থানা সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা প্রধান ও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে হামলার ঘটনায় একাধিক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মামলাগুলোর বাদী হবে পুলিশ। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবারও রাজধানীন মৎস্যভবন, হাইকোর্ট, দোয়েল চত্বর, চাঁনখারপুল এলাকায় সতর্ক অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের মতো পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলীয় মাদরাসার মাঠে স্থাপিত আদালতে যান বেগম জিয়া। তার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আজও আদালতের আশপাশে অবস্থান নেন।
সকাল থেকেই উল্লিখিত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় থাকলেও গত দুদিনের মতো আজ বিএনপি নেতাকর্মীদের আটক করেনি। ছাত্রদল নেত্রী আরিফা সুলতানা রুমা জানান, সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর এলাকায় অবস্থান নেন। তবে হঠাৎ করেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের ওপর চড়াও হন। দোয়েল চত্বর এলাকা থেকে চাঁনখারপুল পর্যন্ত ব্যারিকেট তৈরি করতে চাইলে নেত্রীদের প্রতিবাদের মুখে একপর্যায়ে পুলিশ পিছু হটতে বাধ্য হয়।