এপ্রিল ২৫, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
করোনা

টিকা হাতে পাওয়া মানেই করোনার বিদায় নয়, মানতে হবে কিছু সতর্কতা

সত্যিই! করোনাভাইরাস পুরো পৃথিবীকে এক ভয়াবহ ঝাঁকুনি দিচ্ছে। অদৃশ্য শত্রু মোকাবিলায় সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে বিজ্ঞান জয়ী হওয়ার দ্বার প্রান্তে। সকল প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতেই কয়েকটি দেশে এরমধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদিত হয়েছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন বা টিকা। এছাড়াও আরও কিছু টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল প্রায় শেষ পর্যায়ে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে কিছু টিকার তৃতীয় বা শেষ পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল আমাদের সত্যিই আশান্বিত করছে। বিশেষ করে, ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্না ও স্পুটনিক-ভি এর চূড়ান্ত ফলাফল খুবই তাৎপর্যপূর্ণভাবে আশাতীত ফলাফল করেছে।

চূড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী ফাইজার-বায়োএনটেক (৯৫%), মডার্না (৯৫%), স্ফূটনিক-ভি (৯২%) কার্যকর। এই ফলাফল পর্যালোচনা করে এরইমধ্যে যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (MHRA) ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার অনুমোদন দিয়েছে যা আগামী মঙ্গলবার থেকে জনসাধারণকে দেওয়া শুরু হবে। পৃথিবীর ইতিহাসে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই টিকাগুলো প্রস্তুত হলেও এদের কার্যকারিতা অন্যান্য টিকা যেমন, রুবেলা টিকা (৯৭%), ম্যাম্পস্ টিকা (৮৮%), ফ্লু টিকা (৪০-৬০%) এর তুলনায় ভালো। ইতিমধ্যে রাশিয়া তাদের উদ্ভাবিত স্পুটনিক-ভি এর টিকাকরণ শুরু করেছে। যদিও বিভিন্ন কারণে রাশিয়ার করোনা টিকার প্রতি বিশ্ববাসীর তেমন কোন আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি। অন্যদিকে সর্বাধিক আলোচিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকা (৬০-৯০%) চূড়ান্ত ফলাফলে ত্রুটির কারণে আবার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করেছে।

সবকিছু বিবেচনায় ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার টিকা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে হয়তো বিশ্বের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য তিনটি ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, FDA (আমেরিকা), MHRA (যুক্তরাজ্য) ও EMA (ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন) এর অনুমোদন হতে পারে। যা এই অতিমারি পরিস্থিতিতে বিশ্ববাসীর নিকট পরম বিশ্বাসযোগ্য পাওয়া।

অনেক আকাঙ্ক্ষার পর করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা পেয়ে আমরা সবাই ভাবছি এই বুঝি পৃথিবী থেকে ইতি হতে যাচ্ছে করোনা নামক কালো অধ্যায়। কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে টিকা হাতে পাওয়া মানেই করোনার বিদায় নয়। টিকা হয়তো মৃত্যু ও সংক্রমণের হার কমাবে, বাড়াবে করোনা প্রতিরোধী মানুষের আত্মবিশ্বাস। কয়েক মাস বা বছর পর বিশ্ববাসী হয়তো নিতে পারবে স্বস্তির নিঃশ্বাস। কিন্তু করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা পেলেও সর্তক থাকতে হবে কিছু বিষয়ে:

১) টিকার একটি ডোজ নিলেই করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় না:

এখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত টিকাগুলো মানব দেহে করোনা প্রতিরোধী ব্যবস্থা তৈরি করে দুই ডোজের মাধ্যমে। একটি প্রাথমিক ডোজ এবং অন্যটি দ্বিতীয় বা বুজটার ডোজ। করোনাভাইরাস সংক্রমণে বাধা দেওয়া অ্যান্টিবডি তৈরি হয় দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার এক সপ্তাহ পর। তাই কেউ যদি প্রথম ডোজ নেওয়ার পর ভাবেন তিনি করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবেন না তাহলে তিনি ভুল করবেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ব্যবস্থা তৈরি করতে হলে অবশ্যই দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে সঠিক সময়ে।

২) করোনা টিকা কত দিন সুরক্ষা প্রদান করবে তা এখনও অজানা:

হাম বা জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধে একটি মাত্র টিকাই সারা জীবন সুরক্ষা প্রদান করে। কিন্তু করোনা টিকা কতদিন সুরক্ষা প্রদান করবে তা এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে করোনা প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি একবছর পর্যন্ত মানব দেহে কার্যকর থাকে। তবে এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা এখনই কিছু বলতে পারছে। অন্যদিকে ফ্লু জাতীয় ভাইরাস প্রতিরোধে প্রতিবছর নিতে হয়। তাই ধারণা করা হচ্ছে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে হয়ত করোনা টিকা বা ভ্যাকসিন নিতে হবে নিদিষ্ট সময় পর পর।

৩) মানব দেহে করোনা টিকার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বিজ্ঞানীদের অজানা:

সাধারণত টিকা আবিষ্কার থেকে শুরু করে নিরাপদ ও কার্যকারিতা প্রমাণ শেষে টিকা বাজারে আসতে সময় লাগে ৬-১০ বছর। ফলে টিকার মানব দেহে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায় বাজারজাত হওয়ার আগেই৷ কিন্তু অতিমারি পরিস্থিতিতে ইতিহাসের দ্রুত সময়ে, মাত্র ১০ মাসের মধ্যে টিকা বাজারে আসায় এই টিকার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পুরোপুরি অন্ধকারে। তাদের কাছে ধারণা নেই মানব দেহে করোনা টিকার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে। কিন্তু জীবন রক্ষার্থে অল্প কিছু দিনের মধ্যে হয়তো বিশ্বের একটি বিরাট অংশকে দেওয়া হবে এই টিকা। কোন কারণে যদি এই টিকার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পরে মানব শরীরে। তাহলে বিশ্বের বিরাট অংশের মানুষের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হতে পারে। যদিও এই সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না এখনই।

৪) করোনা টিকায় মেয়েদের তুলনায় পুরুষের সুরক্ষা কম:

বিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যায় পুরুষেরা এগিয়ে। একই ভাবে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি পুরুষের শরীরে আগে তার কার্যকরিতা হারায়। সম্প্রতি একাধিক গবেষণায় দেখা যায়, পুরুষের তুলনায় মহিলাদের শরীরে অ্যান্টিবডি বেশী দিন কার্যকর থাকে। ফলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে পুরুষদের একটু বেশী সচেতন হতে হবে।

৫) করোনা টিকা প্রাপ্তিতে লাগবে দীর্ঘ সময়:

মাত্র দশ মাসের মাথায় করোনার টিকা বাজারে আসলেও বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সংক্রমণ রোধে টিকা প্রাপ্তি এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে এই টিকা প্রাপ্তিতে লেগে যেতে পারে কয়েক বছর। টিকার মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করতে যে পরিমাণ টিকা প্রয়োজন তা পাওয়া এই দেশ গুলোর জন্য সহজ হবে না। আবার উন্নত দেশ গুলো প্রাথমিকভাবে কিছু টিকা পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। বিশ্বব্যাপী টিকা তৈরি অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা ও দীর্ঘমেয়াদী যুক্তির কারণে উন্নত দেশকেও অপেক্ষা করতে হবে কয়েক মাস থেকে বছর পর্যন্ত।

৬) টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি অনুসরণ করতে হবে:

করোনাভাইরাস সবচেয়ে ভয়ংকর কারণ এই ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি সকলের অজানা। একবছরেও বিজ্ঞানীরা সম্পূর্ণভাবে অবগত নয় এই ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে। করোনাভাইরাস মিউটেশনের কারণে পরিবর্তন করতে পারে তার বৈশিষ্ট্য। ফলে টিকা কার্যকারিতার স্থায়িত্ব ও ভবিষ্যত নিয়েও এখন নিশ্চিত করে কিছু বলার সময় হয়নি। সময় সাথে সাথে উঠে আসবে এই ভাইরাস প্রতিরোধী প্রকৃত চিত্র। তাই করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে টিকা নেওয়ার পাশাপাশি আরও কিছু দিন মেনে চলতে হবে মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মত স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি গুলি।

৭) কার্যকারিতার উপর রয়েছে সংরক্ষণ ব্যবস্থার ব্যাপক প্রভাব:

টিকার কার্যকারিতা নির্ভর করে তার সংরক্ষণ ব্যবস্থার উপর। বিশেষ করে এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে ফাইজার-বায়োএনটেক টিকা (-৭০°C), মডার্না টিকা (-২০°C), স্পুটনিক-ভি টিকা (২-৮°C) এবং অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকা (২-৮°C) তাপমাত্রায় কার্যকরী থাকে। এই তাপমাত্রায় না রাখলে টিকা গুলো হারায় কার্যকারিতা। এই নিম্ন তাপমাত্রার সংরক্ষণ ব্যবস্থা বিশ্বের সর্বত্র বিশেষ করে দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে করা সহজ হবে না। তাই সংরক্ষণ ব্যবস্থার কারণে টিকার কার্যকারিতা পৃথিবীর সর্বত্র সমান হওয়া কঠিন হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

করোনা: বিশ্বজুড়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে

banglarmukh official

বিশ্বে একদিনে করোনা শনাক্ত প্রায় ৫ লাখ, মৃত্যু ১১৫২

banglarmukh official

করোনায় মৃত্যুশূন্য দিনে শনাক্ত ২৯৯, হার ১৩.৬০ শতাংশ

banglarmukh official

করোনায় আরও ৪৫৪ মৃত্যু, শনাক্ত আড়াই লাখের নিচে

banglarmukh official

বিশ্বে করোনায় একদিনে ১১৮৯ মৃত্যু, শনাক্ত ৪ লাখ ৩২ হাজার

banglarmukh official

বিশ্বে করোনায় আরও ১১৭০ মৃত্যু, শনাক্ত সোয়া চার লাখ

banglarmukh official