এপ্রিল ২০, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
ইসলাম জাতীয় প্রচ্ছদ

শোকের মিছিলে কারবালা স্মরণ

মুসলিম বিশ্বের কাছে মহররম মানেই বেদনা, মহররম মানেই কান্না। আরবি বর্ষপঞ্জি হিজরি সনের প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। হিজরি ৬১ সনের মহররম মাসের ১০ তারিখে কারবালার প্রান্তরে বিয়োগান্তক এক ঘটনার অবতারণা হয়। এদিন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেইন (রা.) এবং তার পরিবার ও অনুসারীরা ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হন।

এ দিনটিকে স্মরণ করেই সারা বিশ্বের শিয়া মতাবলম্বী ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তাজিয়া মিছিলের আয়োজন করে থাকেন। এ মিছিল থেকে মূলত কারবালার ঘটনার শোকাবহ দৃশ্যায়ন করা হয়। মিছিলে বুক চাপড়ে, মাতম করে শোক প্রকাশ করেন শিয়া ধর্মাবলম্বীরা।

 শহীদ হোসেইন স্মরণে আয়োজিত মিছিলে থাকে ক্রন্দন। মুখে থাকে শোকের গান- ‘ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালাকে বাদ’, ‘কাঁদে কোন ক্রন্দসী কারবালা ফোরাতে’, ‘শির দেগা নেহি দেগা আমামা।’ শহীদের প্রতি সালাম জানিয়ে পড়া হয়, ইয়া শহীদ সালাম আলাইকা, ইয়া মশহুদ সালাম আলাইকা।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসনি দালান থেকে বের হয় তাজিয়া মিছিল। একই সঙ্গে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বকশিবাজার, লালবাগ, পল্টন, মগবাজার থেকেও আশুরার মিছিল বের হয়।

তাজিয়া মিছিলে অংশ নেয়া শিয়া ধর্মাবলম্বী মুসল্লিরা বলছেন, কারবালার প্রান্তরে ইসলামের ঝাণ্ডা তুলে ধরতে গিয়ে মহানবীর দৌহিত্র হযরত হোসাইন (রা.) জীবন দিয়েছেন। সেদিন তিনি শহীদ হলেও বিপদগামীদের কাছে মাথা নত করেননি। এটাই ইসলামের শিক্ষা। সেই কারবালার ইতিহাস ভুলে না গিয়ে মুসলমানদের উচিৎ শিক্ষা নেয়া।

karbala-(2)

হোসনি দালান থেকে বের হওয়া মিছিলে দেখা যায় কারবালার ঘটনার শোকাবহ দৃশ্যায়ন। মিছিলে বুক চাপড়ে, মাতম করে শোক প্রকাশ করেন শিয়া ধর্মাবলম্বী যুবকেরা। ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ স্লোগানে মাতম করতে দেখা যায় যুবকদের।

নিজের বুকে সজোরে চাপড়াতে চাপড়াতে, মুখে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ মাতম তুলে পুরান ঢাকার সরু গলিটি ধরে বেরিয়ে আসেন হাজারো মুসল্লি। মিছিলে থাকা তরুণ-তরুণী সবারই খালি পা। পরণে কালো পোশাক। অনেকের হাতে বিশাল দণ্ড, মাথায় শোকের কালো পতাকা।

গলির দু’ধারে দাঁড়িয়ে মিছিল এগিয়ে যাওয়া দেখতে বোরকা পরিহিত নারীদের ভিড়ও ছিল লক্ষ্যনীয়।

মিছিলের পেছনে ‘দুলদুল’ নামে সুসজ্জিত ঘোড়াটিকে টেনে নিয়ে আসা হয় সামনে। মিছিলে ব্যবহৃত একটি ঘোড়াকে প্রতিকী রক্তে রাঙানো হয়েছে। অনেক যুবককে আবেগতাড়িত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘোড়ার পদচুম্বন করতেও দেখা যায়। কেউ আতর কেউ বা সুগন্ধি গোলাপ জল ছিটিয়ে শোকের আবহকে আরও বাড়িয়ে তোলেন। মিছিলে তাজিয়া এবারও তৈরি করা হয়েছে ইমাম হোসেইন (রা.)-এর সমাধির আদলে।

মিছিল থেকে বেজে ওঠে গান, ‘ফোরাত নদীর বুকে জেগেছিল কত ঢেউ, তবু একফোঁটা পিপাসার জল মুখে তুলে দেয়নি কেউ। হায় হোসেইন! হায় হোসেইন! তুমি কেঁদেছিলে পিপাসায়।’

তাজিয়া মিছিলের মূল দায়িত্ব পালন করে আসছে হোসেইনি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও মিছিলের সমন্বয়ক সাইয়েদ গোলাম মহসিন জাগো নিউজকে বলেন, কারবার শোককে শক্তিতে রুপ দিতেই আমরা প্রতি বছর এ দিনে মিছিল করে থাকি। কেউ যাতে ভুলে না যাই ইমাম হোসেইন নিজের জীবন দিয়ে ইসলামের পতাকা রক্ষা করে গেছেন।

সাজিদুল ইসলাম নামে মিছিলে অংশগ্রহণকারী বলেন, ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে ১০ অক্টোবর কারবালার প্রান্তরে হযরত ইমাম হোসেইন (রা.) এবং ইয়াজিদের ২২ হাজার সুসজ্জিত সৈন্যবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। ইয়াজিদের সেনারা ইমামের বাহিনীকে ফোরাতের পানি থেকে বঞ্চিত করেছিল।

পিপাসার্ত ইমাম হোসেইন (রা.)-এর পুত্র হযরত আজগর শত্রুর নিক্ষিপ্ত তীরে আঘাতপ্রাপ্ত হন। ইমাম হোসেইন (রা.) কারবালা প্রান্তরে ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, আত্মত্যাগের এক অপূর্ব মূর্ত প্রতীক উঠেছিলেন। চোখের সামনে ক্ষুধার্ত-পিপাসায় কাতর আপন পরিজনের মৃত্যু ম্লান মুখমণ্ডলি তাকে সংকল্পচ্যুত করতে পারেনি। এসব আমাদের সহিষ্ণুতা শিক্ষা দেয়।

karbala-(3)

নারী, পুরুষের পাশাপাশি শিশু কিশোরদের অংশগ্রহণে তাজিয়া মিছিল শেষ হয় পৌনে ১টার দিকে। রাজধানীর ঝিগাতলা সংলগ্ন লেকের পাশে এসে শেষ হয় তাজিয়া মিছিল। লেকের পাশে এসে নফল নামাজ আদায় ও দোয়া পাঠ করেন মিছিলে অংশগ্রহণকারী অনেক ধর্মপ্রাণ মুসল্লি।

হোসনি দালানের সুপারিনটেনডেন্ট এম এম ফিরোজ হোসাইন জাগোনিউজকে বলেন, তাজিয়া মিছিল সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আশুরার পবিত্রতা রক্ষা, উদযাপনে শৃঙ্খলা রক্ষায় র‌্যাব ও পুলিশের বিশেষ সহযোগীতার জন্য ধন্যবাদ জানান।

২০১৫ সালের ২৪ অক্টোবর আশুরা উপলক্ষে হোসনি দালানের শোক মিছিলে গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ ঘটনায় একজন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই ঘটনার পর থেকে আশুরার তাজিয়া মিছিল উপলক্ষে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করে আসছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় রাখতে চায়নি পুলিশ। আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া শোক মিছিলে ডিএমপির পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইমামবাড়া সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।

মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের আর্চওয়ে দিয়ে প্রবেশ করতে হয়েছে। এ ছাড়া মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে প্রত্যেক দর্শনার্থীর দেহ তল্লাশী করে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করানো হয়।

সম্পর্কিত পোস্ট

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিচার ৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে: আইন উপদেষ্টা

banglarmukh official

শুক্রবার কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক, দ্রুত বিচার নিশ্চিতের নির্দেশ

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

২০২৬ সালেই বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণ করা হবে

banglarmukh official