পুলিশের গাড়ি উল্টোপথে না চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। তিনি বলেছেন, যানজট নিরসন এবং সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বজায় রাখার লক্ষে উল্টোপথে সাধারণ যানবাহন চলাচল করতে না দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বাদ যাবে না পুলিশের যানবাহনও।
সোমবার দিনব্যাপী পুলিশ সদর দফতরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স কোয়াটারলি কনফারেন্স’ (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০১৭) এ সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এসময় সকল পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপার, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানরা এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উল্টোপথে পুলিশের যানবাহন না চলা ও সারাদেশে যথাযথভাবে ট্রাফিক আইন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) সহেলী ফেরদৌস।
তিনি জানান, নারী নির্যাতনের ন্যায় শিশু নির্যাতন মামলা অধিকতর গুরুত্বসহ তদন্তের স্বার্থে প্রতিটি থানায় শিশু অধিকার সেল গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক।
আইজিপি বলেছেন, প্রত্যেক থানা ও জেলায় নারী ও শিশুবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য প্রত্যেক থানায় একটি আলাদা কক্ষ তৈরি করার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি।
পুলিশ প্রধান বলেন, সমাজে মাদকের বিস্তার ও মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা এবং তাদের পুর্নবাসনের উদ্যোগ ও উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্য নিয়মিত ধ্বংস করার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
আইজিপি বলেন, সামাজিক সমস্যা ও বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কমিউনিটি পুলিশিং একটি কার্যকর মাধ্যম। পুলিশের সঙ্গে জনগণের সুসর্ম্পক তৈরি হলে পুলিশ ভীতি কমে আসবে, সমাজে অপরাধ কমবে।
সভায় পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) আবু হাসান মুহম্মদ তারিক চলতি বছরের জুলাই আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের সার্বিক অপরাধ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। অপহরণ, খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, অ্যাসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন, মাদকদ্রব্য, চোরাচালান দ্রব্য, অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার, সড়ক দুর্ঘটনা, গাড়ি চুরি, রাজনৈতিক সহিংসতা, অপমৃত্যু, পুলিশ আক্রান্ত মামলাসহ দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, আলোচ্য সময়ে সারাদেশে ৫৬ হাজার ৪৭৪টি মামলা রুজু হয়েছে, যা গত এপ্রিল-জুন ২০১৭ সময়ের তুলনায় প্রায় ৩.১৮ ভাগ বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে সারাদেশে মাদক দ্রব্য এবং চোরাচালান দ্রব্য উদ্ধারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পূর্বের কোয়ার্টারের তুলনায় মামলার সংখ্যা বেড়েছে।
তবে কমেছে ডাকাতি, অ্যাসিড নিক্ষেপ, সড়ক দুর্ঘটনা এবং পুলিশ আক্রান্ত মামলার সংখ্যা।
অপরদিকে দস্যুতা, খুন, অপহরণ এবং নারী নির্যাতন মামলার সংখ্যা বেড়েছে। আলোচ্য কোয়ার্টারে গাড়ি চুরির মামলা হয়েছে ৪০৯টি। এর মধ্যে পুলিশ ২৯৭টি গাড়ি উদ্ধার করেছে। অনুষ্ঠানে আইজিপি বাংলাদেশ পুলিশ নিদের্শমালা সংক্রান্ত ১৬টি পুস্তিকার মোড়ক উন্মোচন করেন।
সভায় এসবির অতিরিক্ত আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর (অতিরিক্ত আইজিপি) মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান, পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপ্যাল মোহাম্মদ নাজিবুর রহমান, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন ও অপারেশনস্) মো. মোখলেসুর রহমান, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, অতিরিক্ত আইজিপি মো. মইনুর রহমান চৌধুরী, শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. নওশের আলী, পুলিশ টেলিকমের অতিরিক্ত আইজিপি বিনয় কৃষ্ণ বালা এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
পরে আইজিপি এসবি, র্যাব, পিবিআই, নৌ পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশসহ সকল মেট্রোপলিটন এবং রেঞ্জের প্রধানদের সঙ্গে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের কর্ম সম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর ও বিনিময় করেন।