স্বামীদের কারণেই মাদক ব্যবসা, বহন ও সেবনে জড়িয়ে পড়ছেন বেশির ভাগ নারী। পরিবারের নারী সদস্যদের দিয়ে মাদক বহন ও আর্থিক লেনদেনের কাজ করাচ্ছেন মাদক ব্যবসায়ীরা।
কারা কর্মকর্তাদের দাবি, বর্তমানে যে নারীরা কারাগারে আছেন, মূলত তাঁদের মাধ্যমেই বড় পরিসরে মাদক ব্যবসা চলছে। এঁরাই কারাগারে মাদকসহ ধরা পড়ছেন, আবার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহায়তায় বেরিয়েও যাচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ কারাগার সূত্রে জানা গেছে, নারী বন্দীদের বেশির ভাগই আটক হয়েছেন স্বামীর সঙ্গে। অনেকের স্বামী জামিনে ছাড়া পেয়েছেন, কয়েকজনের স্বামী ক্রসফায়ারে মারাও গেছেন। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ কারাগারের ভেতরে গিয়ে মাদক মামলায় বন্দী অন্তত ৩০ জন নারীর সঙ্গে কথা হয়।
পরিশীলিত পোশাক পরা এক নারীর সঙ্গে কথা হলো। জিজ্ঞেস করলে নাম বললেন, সাবিনা আক্তার রুনু। জানালেন, তাঁর স্বামী আরিফ পুলিশের হেফাজতে থেকেই মাদক ব্যবসা করেছেন, অস্ত্রের ব্যবসাও করতেন। তাঁর স্বামীকে যখন আটক করা হয় তখন তিনিও আটক হন। তাঁর স্বামী ৫ লাখ টাকা দিয়ে মদনপুরে এক ‘পার্টির’ কাছ থেকে ইয়াবা কিনতে পাঠান তাঁকে। সঙ্গে যান বন্দর থানার দুই এসআই। তাঁরা টাকার ভাগ পেতেন। কিন্তু পরে সাবিনার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আর ইয়াবা দেননি। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের ওই দুই এসআই পুরো টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ঘটনার দুই মাস পর গত এপ্রিল মাসে আরিফ বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। সাবিনার তিনটি সন্তান এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। মামলাও রয়েছে তাঁর নামে, জানালেন সাবিনা।
লাল ফিতা দিয়ে চুল বাঁধছিলেন মাজেদা বেগম।মিথ্যা বলব না। আমি মাদকের (গাঁজার) ব্যবসা করি অনেক আগে থেকেই। আমার ভাই, বোন, স্বামী সবাই বিভিন্ন কারাগারের ভেতরে মাদক বিক্রি করে। আমার স্বামীই এ ব্যবসা শিখাইছে। তারা কারওয়ান বাজার থেকে কিনে নিয়ে আসে। আমাদের দলে আরও ২০০ জন আছে। একজন আটক হইলে আরেকজন জামিন
নিয়ে দেয়।
কারাগারে বসেই কথা হয় লিজা, নারগিছ, পারভীন, কোহিনূরসহ আরও অনেক নারী বন্দীর সঙ্গে। তাঁদের সবার এক কথা, এখান থেকে বের হয়ে আর এ পেশায় থাকতে চান না। এ পেশায় অনেক ঝুঁকি। তাঁরা যেকোনো উপায়ে কাজ শিখতে চান। কিন্তু বের হলে স্বামীরা তাঁদের আবার এ পেশায় আনতে বাধ্য করবেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন অনেকে।
জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ কারাগারের জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, ‘আমাদের কারাগারে যাঁরা আছেন, তাঁদের বেশির ভাগই মাদক মামলায় আটক এবং এঁদের বেশির ভাগই মাদক বহনকারী। অনেকের স্বামী ইয়াবা সেবন করে বা ব্যবসা করে সে জন্যই তাঁরা মাদকের দিকে বেশি ঝুঁকে গেছেন। যাঁরা কারাগারে আছেন, আমরা তাঁদের নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তাঁদের ভালো হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করি।নারায়ণগঞ্জ কারাগার মাদকমুক্ত বলে দাবি করেন তিনি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, নারী মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়ছে। এঁরা অনেক কৌশলে মাদক বহন করতে পারেন। এ জন্য বড় বড় ব্যবসায়ীরা তাঁদের এই ব্যবসায় নামতে বাধ্য করেন। প্রথমে পুরুষদের, পরে তাঁদের স্ত্রীদের এ পেশায় আনেন। তিনি বলেন, এ পেশা থেকে মাদক ব্যবসায়ী নারীদের বের করে আনতে তাঁদের কাজের প্রতি আগ্রহী করতে হবে। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি পরামর্শ সভা করতে হবে। তাহলেই জেল থেকে বের হয়ে আর এ পেশায় জড়াবে না তাঁরা।