এপ্রিল ২৪, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
আদালতপাড়া জাতীয় নির্বাচন রাজণীতি

দণ্ড স্থগিত হলে ব্যক্তি নির্বাচন করতে পারবে: হাইকোর্ট

বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা কিংবা দণ্ড হাইকোর্টে স্থগিত হলে দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই আদেশের ফলে, সম্পদের গরমিল তথ্য দুদকে দেয়া সংক্রান্ত মামলায় দণ্ড স্থগিত চেয়ে করা আবেদনকারী সাবিরা সুলতানার নির্বাচনে প্রার্থী হতে কোনো বাধা নেই।

সেই সঙ্গে এই আদেশের ফলে, এখন থেকে হাইকোর্টে কারও দণ্ড স্থগিত করার পর প্রার্থীর নির্বাচন করতে আর কোনো বাধা নেই।

ঝিকরগাছা উপজেলার চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানার সাজা ও দণ্ড স্থগিত করে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ রইচ উদ্দিনের একক বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে সাবিরা সুলতানার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম। তার পক্ষে ছিলেন, এজে মোহাম্মদ আলী, আমিনুল ইসলাম ও এসকে গোলাম রসুল। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এবিএম বায়েজিদ।

পরে আমিনুল ইসলাম জানান, সাবিরা সুলতানার দণ্ড স্থগিত চেয়ে আবেদন জানালে আপিল বিভাগ তা নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টের একক বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। শুনানি নিয়ে আদালত আদেশ দেন।

আদেশে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ (১) ধারা এবং সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে সাবিরা সুলতানার সাজা ও দণ্ড স্থগিত করেন। এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে তার আর কোনো বাধা থাকলো না।

আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়ে বলেছেন, কোনো ব্যক্তির দণ্ড আপিল বিভাগে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার সাজা বা দণ্ড চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে না। তবে আপিল চলাকালে তার সাজা বা দণ্ড স্থগিত হলে তিনি নির্বাচনের জন্য অযোগ্য হবেন না। বিচারিক আদালতে দণ্ডিত ব্যক্তির সাজা কিংবা দণ্ড স্থগিত করার ক্ষমতা হাইকোর্ট বিভাগের রয়েছে বলেও পর্যবেক্ষণে বলা হয়।

এই আদেশের পর থেকে যারা নির্বাচনে অংশ নিতে চান তারা হাইকোর্টে সাজা বা দণ্ড স্থগিত চেয়ে আবেদন করে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন বলে জানান অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম।

তবে এর আগে গত ২৮ নভেম্বর বিচারিক আদালতে কোনো ব্যক্তি ২ বছরের অধিক সাজাপ্রাপ্ত হলে তিনি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না বলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর ফলে বিচারিক আদালতের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে দণ্ড স্থগিত করা হলে কিংবা আপিল চলাকালে কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে দণ্ড স্থগিত কিংবা বাতিল হলে ওই ব্যক্তির নির্বাচনে অংশ নিতে কোন বাধা থাকবে না।

এর ফলে হাইকোর্টের দুইটি পৃথক বেঞ্চ সাজা বা দণ্ড স্থগিত নিয়ে পৃথক পর্যবেক্ষণ দেওয়ায় নির্বাচন কমিশন কোন আদেশ অনুসরণ করবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম বলেন, যাদের ক্ষেত্রে আদালত ইতোমধ্যে দণ্ড স্থগিত করেনি তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে আজকের এই আদেশের পর যারা এই আদেশের আলোকে হাইকোর্টে দণ্ড স্থগিত চেয়ে আবেদন করবেন তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।

এর আগে মিথ্যা তথ্য ও জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানাকে গত ১২ জুলাই ঢাকার বিশেষ আদালতের বিচারক শহিদুল ইসলাম দুর্নীতি দমন আইন ২০০৪ সালের ২৬ (২) ধারায় তিন বছর ও ২৭ (১) ধারায় তিন বছর কারাদণ্ডাদেশ দেন।

একইসঙ্গে দুটি ধারায় পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে আরও ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। পাশাপাশি পৃথক দুই ধারায় তাকে দেওয়া ৩ বছরের সাজা একসঙ্গে চলবে বলেও আদেশ দেন আদালত। রায়ে সাবিরা সুলতানার ১ কোটি ৭৮ হাজার ১৩৫ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করারও আদেশ দেওয়া হয়।

এরপর গত ১৭ জুলাই ঢাকার বিশেষ জজ-৭ এর বিচারক মো. শহিদুল ইসলামের আদালতে আত্মসমর্পণ করে আপিলের শর্তে জামিনের আবেদন করেন তিনি। আদালত শুনানি শেষে জামিনের আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর এ মামলায় তিনি গত ৬ আগস্ট তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন।

পরে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে সাবিরা সুলতানা তার সাজা ও দণ্ড স্থগিত চেয়ে আবেদন জানালে তার শুনানি গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। এরপর নিয়ম অনুসারে মামলাটি শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি মামলাটি বিচারপতি মোহাম্মদ রইচ উদ্দিনের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ পাঠিয়ে দেন। যার ধারাবাহিকতায় এ মামলার শুনানি নিয়ে (তিনি) সাবিরা সুলতানার সাজা ও দণ্ড স্থগিত করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে সাজা বা দণ্ড স্থগিত করলে বিচারিক আদালতে দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন বলে পর্যবেক্ষণ দেন হাইকোর্ট।

প্রসঙ্গত, মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের ২৪ মে সাবিরা সুলতানা তার ৫৫ লাখ ৭৮ হাজার ১৩৫ টাকা সম্পদের হিসাব জমা দেন দুদকে। পরবর্তী সময়ে দুককের অনুসন্ধানে দেখা যায় ৪৫ লাখ টাকার সম্পদের বিষয়ে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা তথ্য দেওয়াসহ ১ কোটি ৭৮ হাজার ১৩৫ টাকার সম্পত্তি অসাধু উপায়ে অর্জন করেছেন সাবিরা সুলতানা। যা তার বৈধ আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।

ওই ঘটনায় গত ২০১০ সালের ২০ জুলাই সৈয়দ আহমেদ (দুদকের সহকারী পরিচালক) বাদী হয়ে ধানমন্ডি থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর ওই বছর ২৫ জুলাই ৯ জনকে সাক্ষী করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০১১ সালের ৯ নভেম্বর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

সম্পর্কিত পোস্ট

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিচার ৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে: আইন উপদেষ্টা

banglarmukh official

শুক্রবার কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক, দ্রুত বিচার নিশ্চিতের নির্দেশ

banglarmukh official

২০২৬ সালেই বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণ করা হবে

banglarmukh official