গত এপ্রিলে ঘটা করে বরিশালের খাল দখলমুক্ত করতে অভিযানে নামে বরিশাল প্রশাসন। কিছু খাল উদ্ধার করে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয় খালপাড়ে।
তবে হঠাৎ জেলা প্রশাসক বদলি হয়ে যাওয়া এবং নতুন কর্তৃপক্ষের সময় অভিযান না চলায় দখলদাররা এখন আরো বেপরোয়া। অধিকাংশ খালের অস্তিত্বই বিলীন হওয়ার পথে। অবশ্য বর্তমান জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান এ জন্য উল্টো আগের প্রশাসনকেই দায়ী করেন। তিনি বলেন , ‘খালগুলো খুব তাড়াহুড়া করে দখলমুক্ত করা হয়েছিল এবং এরপর পুনঃখননও করা হয়নি। স্থায়ীভাবে খাল দখলমুক্ত রাখতে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। তাই ফের দখল করে নেওয়া হচ্ছে। ’
গত এপ্রিলে জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে চলা অভিযানে সিটি করপোরেশনও সহায়তা করেছিল। বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে বরিশালের খালগুলো দখলমুক্ত করা হয়েছিল। তবে খালগুলো দখলমুক্ত করার পরই ফের দখল হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার ছিল না। কারণ খাল বরিশাল নগরের অভ্যন্তরে হলেও তার মালিক জেলা প্রশাসন। এ কারণে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও তাদের। তবে আমরা খাল উদ্ধারে লোকবল দিয়ে সহায়তা করেছি, আমরা প্রত্যেক খালের পাশে নামসহ বিলবোর্ড দিয়েছি। এখন জেলা প্রশাসন ফের চাইলে আমরা খাল উদ্ধারে সহায়তা করব। ’
সরেজমিনে নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, নওগাঁ মাধ্যমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন ভেদুরিয়া খাল দখল করে পাকা দোকানঘর তৈরি করছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য গ্রাম্য চিকিৎসক নাসির উদ্দিন। তাঁর দাবি, আগে তাঁর অস্থায়ী দোকানঘর ছিল। নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ভেঙে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, পরে উত্তোলন করা যাবে। তাই পাকা করে ঘর করেছি। তবে তা পুরোপুরি খালের মধ্যে নয়। ’
সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের কর্ণকাঠি এলাকার আনন্দ বাজারসংলগ্ন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ছাত্রলীগকর্মী সোহেল সাগরদী খাল দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করেছেন স্থায়ীভাবে। তাঁর দাবি, ওই জমি আগে তাঁদের ছিল। পরে খাল হওয়ায় তাঁরা অস্থায়ী দোকান নির্মাণ করেছিলেন। ভেঙে দেওয়ায় এখন ইট দিয়ে ঘর করা হয়েছে।
একইভাবে নগরীর বটতলা বাজার থেকে চৌমাথা পর্যন্ত বটতলা খাল এমনভাবে দখল করা হয়েছে, দেখে মনে হবে খালের অস্তিত্বই ছিল না। বটতলা হয়ে জিলা স্কুলের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভাটার খাল ভরাট করে স্থাপনা করা হয়েছে। জেল খালেরও দুই পাশে ফের গড়ে উঠেছে অসংখ্য স্থাপনা। শুধু তাই নয়, এই খালের শাখা নথুল্লাবাদ খালও দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সাগরদী খালের দুই পাশে এমনভাবে দখল করা হয়েছে যে বোঝার উপায় নেই এটি খাল ছিল। কাজীপাড়া খাল, সাগরদী খাল, টিয়াখালী খাল, জিয়া সড়ক খাল, আমানতগঞ্জ খাল, নবগ্রাম খাল, ভাটার খাল, কাশীপুর খাল, নাপিতের খাল, লাকুটিয়া খাল, চাঁদমারি খাল, পলাশপুর খালও ফের দখল হয়েছে।
বর্তমান জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ‘আমরা বরিশালের ২৩টি খাল ফের দখলমুক্ত করতে অভিযানে নামব। আর স্থায়ীভাবে খালগুলো দখলমুক্ত রাখতে এর দুই ধারে দেয়াল, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, ডেনের সামনে ট্যাংকি করে তাতে নেট প্রদান করাসহ একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পটি বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলেই কাজ শুরু করে দেব। ’
বরিশাল নগরী ও এর উপকণ্ঠ এলাকাকে ২৩ খাল ঘিরে রেখেছে। খালগুলো দিয়ে আগে পানি প্রবাহিত হতো, নৌকা ও গয়না নৌকা চলাচল করত। বিভিন্ন এলাকা দিয়ে খাল হয়ে মামলামাল আসত বরিশালে। চিহ্নিত কিছু দখলদার জেল খালসহ সব খাল দখলে নিয়ে নেয়। কোনো কোনো খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল ভবন। কোনো খালের ওপর গড়ে উঠেছে বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়, খাল দখল করে একটি সড়কও নির্মাণ করা হয়েছে।