জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফেরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, মিথ্যা বারবার বললেই তা সত্য হয়ে যায় না-মিথ্যা মিথ্যাই থাকে। দেশের মানুষ কোনো বিশৃঙ্খলা চায় না, আমরা সংঘাত ও সংঘর্ষ চাই না। এতে দেশের অর্থনৈতিক শাসন ব্যবস্থা ও দেশের অনেক ক্ষতি হয়। তাই গঠনমূলক কথা বলছি। তাই বলছি, দেশে দ্রুত একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন।
বুধবার মনহা স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে গণফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি আরো বলেন, যারা দেশের ক্ষমতার মালিক তাদের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেন। আপনারা ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় বসেছেন কয়েক মাস হয়ে গেছে, এখন অতি দ্রুত নির্বাচনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই বছরের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, সাবেক তথ্যপ্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়ীদ, সাবেক এমপি ও গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, এ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, সিলেট-২ নির্বাচনী আসন থেকে উদীয়মান সূর্য প্রতীকে নির্বাচিত মোকাব্বির খান, ড. রেজা কিবরিয়া, এ্যাড. জগলুল আফ্রিক প্রমুখ।
ড. কামাল হোসেন আরো বলেন, কাল্পনিকভাবে নির্বাচনে আগের রাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় গিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা প্রতারণার শামিল। এভাবে শুধু আমাদের সাথে জনগণের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে না, শহীদদের আত্মত্যাগের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী আজীবন ক্ষমতায় রাখার জন্য তারা জীবন দেয়নি। জনগণের ভোটের অধিকারের জন্য তারা জীবন দিয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছে। শহীদদের সাথে এমন প্রতারণার নজিরবিহীন। জনগণকে ক্ষমতা ভোগ করতে হলে জনগণকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে হয়।
দেশের অন্যতম সংবিধান প্রণেতা আরো বলেন, তারা কী মনে করে? তারা সারাজীবন এভাবে চলতে পারবে? এভাবেই জনগণ তাদের মেনে নেবে? না জনগণ মেনে নেবে না। জনগণ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে সংসদ গঠিত হয়। তারা কবে ভোট নিলেন? কবে নির্বাচিত হলেন, যে বলেন, পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতা আছি। ২৯ ডিসেম্বর রাতে কে ভোট দিয়েছে? ৩০ ডিসেম্বর কার সৌভাগ্য হয়েছিল ভোট দেওয়ার? অথচ আপনারা সবাইকে ভোট দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ দিয়ে ক্ষমতা নিয়ে নিলেন। এভাবে একটা ঘোষণার মাধ্যমে ক্ষমতা নেওয়া যায়-এটা চিন্তাও করা যায় না। এভাবে ভোট করা যায় না, দাবিও করা যায় না।
দেশের প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ আরো বলেন, এতে দেশের খুব ক্ষতি হচ্ছে। কারণ এভাবে সংসদ হলে এতে জনগণের প্রতিনিধিত্ব থাকে না, এতে কোনো জবাবদিহিতাও থাকে না।
তিনি বলেন, দ্রুত এই বছরের মধ্যে প্রকৃত অর্থে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন দিন। অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সঠিক জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়।
সরকারের উদ্দেশে ড. কামাল বলেন, দেশের জনগণ ক্ষমতার মালিক। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। সংবিধানে এই কথা উল্লেখ রয়েছে। আর এই সংবিধানে এক নম্বর স্বাক্ষর হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে অপমান করবেন না।
তিনি আরও বলেন, দেশ আজ মহাসংকটের শিকার জবাবদিহিতা বিহীন সংসদ থাকায় দেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে। অনেকে ভয়ে মুখ খুলছেন না গুম, হত্যা ও অপহরণের ভয়ে। তারা বুঝেছেন, প্রশ্ন করতে গেলেই খুন, গুম, হত্যার শিকার হবে। গুম-হত্যার ভয় দেখিয়ে বেশি দিন দেশ শাসন করা যায় না।
এসময় সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, যা হওয়ার হয়ে গেছে। ভবিষ্যৎ সামনে রেখে বলছি, অতীত নিয়ে কেউ কিছু বলবে না, শুধু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে দেন।
এসময় অধ্যাপক আবু সায়ীদ বলেন, এই দেশ রাজাকারদের না। এই দেশে বাদশাদের না। এই রাষ্ট্র প্রজাতন্ত্র। এই রাষ্ট্র জনগণের। সংবিধানে আমাদেরকে এই মালিকা দেয়ো হয়েছে। কিন্তু সেই মালিকানা লুট হয়ে গেছে। আমাদের কাজ সেই মালিকানা ফেরৎ আনা।
মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, যে বিডিআর (ইপিআর), পুলিশ এদেশের জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধ করেছে, গত নির্বাচনে দেখলাম ভোট চুরির জন্য তারা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।