বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হকের অপসারণ দাবিতে সোমবার দুপুরেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী আন্দোলন করছিলেন। সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যলেয় প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় অবস্থান নিয়ে উপচার্যের অপসারণ চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ২টার দিকে খবর আসে উপাচার্যকে তার মেয়াদ পর্যন্ত (২৭ মে উপাচার্যের ৪ বছর মেয়াদ শেষ হবে) ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
এতে মুহূর্তেই আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা আনন্দ মিছিল এবং মিষ্টি বিতরণ করেন। আনন্দ মিছিল থেকে তারা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া বলেন, উপাচার্য আমাদের আন্দোলন দমিয়ে দিতে এরই মধ্যে নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে এতে আন্দোলনে কোনো প্রভাব পড়েনি। উল্টো এ ঘটনার পর আন্দোলন বেগবান হয়েছে। পিছু হটেনি শিক্ষকরা। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী উপাচার্যকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। উপাচার্যকে পূর্ণ মেয়াদে ছুটি দেয়ায় শিক্ষক সমিতি আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী প্রশাসনের নির্দেশক্রমে অতি দ্রুত ক্লাসে ফিরে যাবেন তারা। এক মাসের বেশি ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা যাতে নতুন করে কোনো সেশনজটে না পড়ে সে বিষয়ে শিক্ষকরা সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন। প্রয়োজনে সকাল-সন্ধ্যা ক্লাস নেয়া হবে।
আন্দোলকারী শিক্ষার্থীদের অন্যতম নেতা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, তাদের দাবি ছিলো উপাচার্যকে অপসারণের। তবে রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর তাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়েছেন। পূর্ণ মেয়াদে ছুটিতে থাকলে তিনি (উপাচার্য) আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীরা মেনে নিয়েছে। ফলে উপাচার্যের অপসারণ দাবির আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে। উপাচার্যকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়ায় আগামীকাল মঙ্গলবার তারা ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করবেন। আনন্দ মিছিলের পর শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করবেন বলেও তিনি জানান।
ক্লাসে ফেরার ব্যাপারে তিনি বলেন, দাবি আদায় হওয়ায় ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে আর কোনো বাধা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিলেই শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. হাসিনুর রহমান জানান, উপাচার্যের ছুটিতে ট্রেজারার ড. একেএম মাহাবুব হোসান খান উপাচার্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে। ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্য ও বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস বলেন, উপাচার্য ১৫ দিনের ছুটি নিয়েছিলেন। তবে এরপরও বিশ্ববিদ্যালয়ের অচল অবস্থা নিরসন হয়নি। উপাচার্যের চাকরির মেয়াদ রয়েছে ২৭ মে পর্যন্ত। এর প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ২৬ মে পর্যন্ত তার একটি ছুটির প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে আবেদনটি অগ্রগামী করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হলে তাঁর অনুমোদনক্রমে উপাচার্যের ৪৬ দিনের জন্য ছুটি মঞ্জুর করা হয়েছে।
গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানোর প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীদের উপাচার্য ‘রাজাকারের বাঁচ্চা’ বলেছেন বলে অভিযোগ তুলে ২৮ মার্চ থেকে ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থী।
একই দিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্লাস-পরীক্ষা এবং আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করেন। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করে ওইদিনই উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। উপাচার্য ২৯ মার্চ তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিলেও তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি শিক্ষার্থীরা।
তারা উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মশাল মিছিল, রক্ত দিয়ে দেয়াল লিখন, প্রতীকী অনশন, কালো কাপড়ে মুখে বেঁধে বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। আন্দোলনের ২৩ দিনের মাথায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন শিক্ষক ও কর্মচারীরা। এতে উপচার্যের অপসারণ দাবির আন্দোলন বেগবান হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সোমবার (২৯ এপ্রিল) তার ৪৬ দিনের ছুটি মঞ্জুর করে রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ। একই সঙ্গে ট্রেজারার অধ্যাপক এ কে এম মাহবুব হাসানকে তার নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে উপাচার্যের দায়িত্ব দেয়া হয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা কাটলো।