যুবদল নেতা জনি হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৮ মাস পেরিয়ে গেছে, তবে মামলার তদন্তে অগ্রগতি নেই। হত্যায় জড়িত সম্ভাব্য বেশ কয়েকজন আসামি ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়ে জামিনে আত্মগোপনে রয়েছেন। সিসি ক্যামেরায় হত্যার দৃশ্য ধরা পড়লেও নতুন করে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ ছাড়া সিলগালা করায় কয়েকদিন বন্ধ থাকলেও পুনরায় চালু হয়েছে পরীবাগের সাকুরা বার।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যার পরপরই ৫২ জনকে আটক করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ২১ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। পরবর্তিতে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। খুব শিগরিরি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল রাত ১২টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ থানার পরীবাগে পর্যটন কর্পোরেশন পরিচালিত সাকুরা বারে যুবদল নেতা জনি (৩৫) ওরফে বাবা জনিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার সময় একদল হামলাকারী জনিকে পেটাতে পেটাতে বার থেকে টেনে হিঁচড়ে বাইরে বের করে এবং বারের সামনে ফাঁকা জায়গায় তাকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। বারের ভেতরে এসব কার্যক্রমের দৃশ্য সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে ধরা পড়ে। পরে পুলিশ বারের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ জব্দ করে।
হত্যার ঘটনায় পুলিশ বারের ক্যাশিয়ার মাজহারুল ইসলাম নয়ন ও কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৫২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে এবং সাকুরা বার সিলগালা করে দেয়।
নিহত জনি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের রাজনগরের আব্দুল কুদ্দুছের ছেলে। তিনি ঢাকার কল্যাণপুর এলাকার ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া ওই ওয়ার্ডে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। শাহবাগ এলাকায় ফুলের ব্যবসা করতেন তিনি। কল্যাণপুরের ১১ নম্বর রোডের ৫২/এ নম্বর বাসায় স্ত্রীর নাম মর্জিনা বেগমসহ মীম (১৫) ও আয়েশা মনি (৭) নামে দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতেন।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন সন্ধ্যায় শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন নিহত জনির স্ত্রী মোছাম্মত মর্জিনা বেগম। মামলার এজাহারে সাকুরা বারের কর্মকর্তা মাহবুবকে প্রধান করে ২০-২২ জনকে আসামি করা হয়। মামলার এজহারে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে নিহত জনির ভাই নয়ন আহমেদ বলেন, জনি চাঁদাবাজ ছিল না। শাহবাগে ফুলের ব্যবসার পাশাপাশি যুবদলের রাজনীতি করত। আগামীতে ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার চেষ্টা করছিল। এ কারণে জনিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। যুবদলের কোন্দলের জের ধরেই জনিকে খুন করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে যুবদলের নেতাদের হাত থাকতে পারে। রাজনৈতিক কারণেই সাকুরায় গিয়েছিল জনি।
ওই ঘটনায় আটক অর্ধশতাধিক ব্যক্তির জবানবন্দি এবং সিসি টিভির ফুটেজ দেখে সাকুরার ২১ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চিহ্নিত করার কথাও জানিয়েছিলেন পুলিশ। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়ে পুলিশ ২১ জনের বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে তিনদিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করেন।
গ্রেফতার ২১ আসামি হলেন- মাহবুব হোসেন, শফিকুল ইসলাম, হেলাল উদ্দিন, আতিকুল ইসলাম, খায়রুল ইসলাম, মো. নাসির, মনির হোসেন, আব্দুর রহিম, লোকমান মিয়া, মো. শরিফুল, মো. শহীদ, মো. পলাশ প্রধান, মো. জুয়েল, আক্তার হোসেন, জুলু মিয়া, মো. আক্তারুজ্জামান, মো. মেহরাজ রাজু, মো. গিয়াসউদ্দিন, মো. রুহুল আমিন রানা, মো. নূরে আলম জিকু। তারা সবাই সাকুরার বয়, ওয়েটার ও সিকিরিটি কর্মকর্তা-কর্মচারী। জনির মৃত্যুর পরপরই তাদের আটক করে থানায় নেয় পুলিশ।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শাহবাগ থানার পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর- অপারেশন) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ও পারিপার্শ্বিকতায় ২১ জন আসামি পরস্পর যোগসাজশে ওই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে সত্যতা পাওয়া গেছে। আদালতের নির্দেশে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর বেশ কয়েকজন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতের আদেশে গ্রেফতার আসামিরা জামিন পায়। জামিন পাবার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের তদন্ত চলছে। কয়েকজন আসামিকে আমরা খুঁজছি। তাদের গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলেই তদন্ত শেষ করা যাবে। আশা করছি আমরা দ্রুতই মামলার তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।