ব্রাজিলের রাজধানী শহর ব্রাসিলিয়া থেকে বাসে মিনিট চল্লিশের পথ দেশটির ফেডারেল ডিস্ট্রিক গামা। সে জেলার সোসিয়েদাদে স্পোরটিভা দা গামা (Sociedade Esportiva do Gama) ক্লাবের একাডেমিতেই এক মাস অনুশীলন করবেন বাংলাদেশের চার কিশোর ফুটবলার ওমর ফারুক মিঠু, জগেন লাকরা, লতিফুর রহমান নাহিদ ও নাজমুল আকন্দ।
বুধবার সেখানে পৌঁছে বৃহস্পতিবার এক বেলা অনুশীলনও করেছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বিশেষ উদ্যোগে ব্রাজিল যাওয়া এই চার কিশোর ফুটবলার।
কিশোরদের সঙ্গে আছেন কোচ আবদুর রাজ্জাক এবং কর্মকর্তা সাবেক ফুটবলার ও বাফুফের ডেভেলপমেন্ট কমিটির সদস্য খন্দকার রকিব আহমেদ। আরেক সাবেক ফুটবলার ও বাফুফের সদস্য শেখ মোহাম্মদ আসলামেরও যাওয়ার কথা ছিল চার ফুটবলারের সঙ্গে। কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে তিনি যাননি।
বৃস্পতিবার গামা ক্লাবের একাডেমি মাঠে অনুশীলন শুরুর আগে বাংলাদেশের কিশোর ফুটবলাররা জাতীয় পতাকা ছুঁয়ে মাঠে নামেন। তারা লাল-সবুজ পতাকা উঁচিয়ে ধরেন ফুটবলের দেশটির অন্যতম ক্লাবের মাঠে। তবে প্রথম দিন অনুশীলন বলতে যা বুঝায় তা ছিল না।
ব্রাজিল থেকে দলের কোচ আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন,‘প্রথম দিন আসলে ছেলের ফিটনেস দেখেছেন স্থানীয় কোচরা এবং কিছু ব্রিফিং করেছেন। আজ (শুক্রবার) বিকেলে থেকে তারা অনুশীলনে নামবেন।
দীর্ঘ ভ্রমণের পর ক্লান্ত ছিলেন চার কিশোর। তার ওপর ওখানে গিয়ে নতুন পরিবেশ ও খাওয়া সমস্যা। তবে এসব কাটিয়ে উঠতে বেশি সময় নেননি তারা। কারণ, সব সমস্যা তাদের চলে গেছে পেলে-নেইমারদের দেশে যেতে পেরেই। এক সময় এই সফরটা তাদের অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল বয়স কম হওয়ায়।
ফুটবলার ওমর ফারুক মিঠু বেশ উৎফুল্লু। হোটেলের রেস্টুরেন্টের পরিবেশ তো নিজের ফেসবুকে লাইভ করছিলেন মিঠু। পরে হোটেল থেকে তিনি বর্ণনা করেছেন ব্রাজিলের প্রথম দুই দিনের অভিজ্ঞতা।
‘আমরা প্রথম দিন বেশি অনুশীলন করিনি। আলোচনা হয়েছে, ফটো সেশন হয়েছে আর আমাদের চারজনের ফিটনেস দেখেছেন আলাদা আলাদা করে। আধঘন্টা করে ফিটনসে দেখার পর ওদের দলের সঙ্গে কিছু সময় অনুশীলন করিয়েছেন’-বলছিলেন মিঠু।
ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের সঙ্গে অনুশীলনের সুযোগ পেয়ে দারুণ খুশি মিঠু, ‘তাদের একাডেমিতে যারা আছে তারা খুবই স্কিলফুল। অন্য রকম তাদের খেলার স্টাইল। আমরা চেষ্টা করবো ওদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে।
আবহাওয়া ও খাবারে নিশ্চয় সমস্যা হচ্ছে? ‘আসলে, এখানে বাতাস ঠান্ডা। আবার রোদও ভালো লাগে। ছাঁয়ায় গেলে একটু শীত, রোদে গেলে দারুণ লাগে। মিষ্টি রোদ। আর খাওয়া দাওয়ার সমস্যা একটু হয়েছিল আসার পরপর। তবে হোটেলে নানা ধরনের খাবার আছে। অনেক রকম ফল, আলুর চিপস, জুস, শাকসবজি। আমরা সেগুলোই খাই। আবার হোটেলের রেস্টুরেন্টে গরুর মাংসও পাওয়া যায়। আমরা পছন্দমতো খেতে পারছি বলে তেমন সমস্যা হচ্ছে না’-বলছিলেন মিঠু।
যে ক্লাবটির একাডেমিতে অনুশীলন করছেন তারা সেই ক্লাব সম্পর্কে বেশি ধারণা নিতে পারেনি তারা। মিঠু এতটুকুই বলেছেন, ‘শুনেছি ব্রাসিলিয়ার সবচেয়ে বড় ক্লাব এটি। ওদের চারটি মাঠ আছে। আমরা যখন অনুশীলন করি তখন ওই ক্লাবের জার্সি গায়ে পড়ি। আবার শেষে দিয়ে আসি।’
ক্লাবটির ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, এটি ৪৩ বছরের পুরোনো একটি ক্লাব। ক্লাবটি অংশ নেয় ব্রাসিলিয়া মেট্রোপলিটন চ্যাম্পিয়শিপ লিগে। এ ক্লাবের প্রধান কোচ ভিলসেন তাদেই।
অনুশীলনের বাইরে আর কি কি প্রোগ্রাম থাকবে? ‘সেটা আমরা কিছু জানি না। স্যার (কোচ রাজ্জাক) বলতে পারবেন’- বললেন মিঠু। কোচ আবদুর রাজ্জাকের কথা, ‘আমাদের বিখ্যাত জায়গায় নিয়ে যাবে। তবে কোথায় নেবে এখনো জানায়নি। কেবল তো আসলাম। একদিন মাত্র অনুশীলন হলো।’
সুযোগ-সুবিধার বেশ প্রশংসা কোচের মুখে, ‘এখানকার সুযোগ-সুবিধা অনেক সুন্দর। হোটেল চার ফুটবলারের জন্য দুটি এবং আমাদের অফিসিয়ালদের একটি রুম দিয়েছে। হোটেল থেকে ১৫-২০ মিনিটের পথ অনুশীলন মাঠ। আমাদের ব্যবহারের জন্য সার্বক্ষণিক একটি মিনি-মাইক্রোও দিয়েছে। সবই ভালো। রবিবার একটি ম্যাচ হবে একাডেমিতে। এটা সাপ্তাহিক ম্যাচ। সে ম্যাচে আমাদের ছেলেদের খেলার সুযোগ দিতে পারে। কারণ, আমাদের ছেলেদের ফিটনেস ও স্কিল থেকে ক্লাবের কোচরা খুশি হয়েছেন।