28 C
Dhaka
এপ্রিল ২৯, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
ইসলাম ধর্ম

পরিশুদ্ধ জীবন লাভের গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ ও দোয়া

সুন্দর ও উত্তম চরিত্র গঠনে কুরআন-সুন্নাহর উপদেশ গ্রহণের বিকল্প নেই। মানুষের জীবনের এমন কোনো দিক নেই যা কুরআন ও সুন্নায় বিশদ বর্ণনা করা হয়নি। তাইতো কুরআন এবং হাদিসের শিক্ষা ও বিধান বাস্তবায়নেই মানুষ হয়ে ওঠেছে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। অজ্ঞতার যুগে মানুষ পেয়েছে আলোকিত সমাজ।

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে উত্তম চরিত্র লাভে কুরআনের বাণী শুনিয়েছেন বুঝিয়েছেন নিজ ভাষায়। উদ্দেশ্য একটাই মানুষ যেন- দুনিয়ার যাবতীয় অন্যায় থেকে মুক্ত থেকে নৈতিক উন্নত চরিত্র লাভ করে। সব সময় সব কাজে অন্তরে আল্লাহর ভয় পোষণ করে।

পরিশুদ্ধ জীবন লাভের গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ তুলে ধরা হলো-

>> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের মাঝে ঘোষণা করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই সবচেয়ে বেশি সম্মানিত, যে ব্যক্তি আল্লাহকে বেশি ভয় করে।’

>> অন্য হাদিসে প্রিয় নবি বলেন, ‘কোনো মানুষ যদি পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে চায়, তবে সে যেন উত্তম চরিত্র অর্জন করে।’ এ হাদিস থেকে প্রমাণিত চরিত্রই মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।

>> ‘যে বক্তি সবচেয়ে বড় আলেম হতে চায়, তার জন্য তাকওয়া অর্জন করা আবশ্যক। কারণ আল্লাহর ভয় ছাড়া আলেম হওয়া সম্ভব নয়।’ আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে ইরশাদ করেন-
‘হে মানুষ! আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি; পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে; যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে অধিক মর্যাদাবান যে সর্বাধিক আল্লাহকে ভয় করে। আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং সব খবর রাখেন। (সুরা হুজরাত : আয়াত ১৩)

>> প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে নির্লোভী হতে উপদেশ দিয়ে বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি সম্মানিত হতে পারবে ওই ব্যক্তি, যে মানুষের কাছে কোনো কিছু হাত পেতে চায় না।’

>> বিশ্বনবি সব সময় আল্লাহ তাআলার স্মরণ করতে উপদেশ দিয়ে বলেন, ‘আল্লাহর কাছে সর্বাধিক সম্মানিত ওই ব্যক্তি, যে অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির করে। আল্লাহ তাআলা নিজেও মানুষকে বেশি বেশি জিকির করার নির্দেশ দিয়েছেন-

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর; এবং সকাল-বিকাল আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর। তিনিই তোমাদের প্রতি রহম করেন এবং তাঁর ফেরেশতারাও তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখানোর জন্য রহমতের দোয়া করে। তিনি মুমিনদের প্রতি দয়ালু।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৪১-৪৩)

>> পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ জীবন লাভে আত্মশুদ্ধি ও পবিত্রতার বিকল্প নেই। তাই আত্মশুদ্ধি ও পরিচ্ছন্ন জীবন লাভে সব সময় পূতঃপবিত্র থাকা জরুরি। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সব সময় ওজুর সঙ্গে থাকে, আল্লাহ তাআলা তার রিজিকের প্রশস্ততা বৃদ্ধি করে দেন।’

>> আল্লাহর কাছে ইবাদত-বন্দেগি কবুলের প্রথম শর্তই হলো হারাম থেকে বেঁচে থাকা। বিশ্ননবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির সব দোয়া (চাওয়া-পাওয়া) আল্লাহর দরবারে কবুল হয়, যে ব্যক্তি সব সময় হারাম থেকে বেঁচে থাকে।’

>> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুমিনদেরকে বিশেষ তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে গোনাহমুক্তভাবে উপস্থিত হওয়ার আমল হলো, স্ত্রী সহবাসের পর দ্রুত পবিত্র হয়ে নেয়া।’

>> হাশরের ময়দানে যখন আল্লাহর ছায়া এবং আলো ছাড়া আর কারো ছায়া বা আলো থাকবে না, সে দিনও কিছু লোক আল্লাহর ছায়া অবস্থান করবে এবং আলোয় পথ দেখবে। বিশ্বনবি বলেন- ‘পরকালে ওই ব্যক্তি আল্লাহর নূরসহ ওঠবে; যে ব্যক্তির দ্বারা কখনও মানুষ অত্যাচিরত হবে না।’ সুতরাং কোনোভাবে কারো প্রতি জুলুম বা অত্যাচার করা যাবে না।

>> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, ‘ওই ব্যক্তি আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা হবে যে, আল্লাহর ফরজ বিধান পালনে গুরুত্বের সঙ্গে যত্নবান হবে।’

>> সবর মানুষের এমন এক উন্নত চারিত্রিক গুণ, যা এ ছোট্ট হাদিস থেকে উপলব্দি করা যায়। হাদিসে পাকে এসেছে, ‘দুনিয়ার বিপদাপদে যে ব্যক্তি সবর বা ধৈর্য ধারণ করবে, ওই ব্যক্তির দ্বারা জাহান্নামের আগুণ নেভানো সম্ভব হবে।’

সুতরাং মানুষের উচিত চরম রাগ বা উত্তেজনার সময়েও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা। আর তা থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে তিনটি উপায় তুলে ধরেছেন-

– অতি গোপনে সাদকা তথা গরিব-অসহায়কে দান-সহযোগিতা করা।
– আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।
– কোনোভাবেই কারো (মানুষের) ওপর রাগ বা অভিমান করা যাবে না। সর্বাবস্থায় রাগ বর্জন করা।

কুরআন ও সুন্নার এ নসিহতগুলো দুনিয়া ও পরকালের অফুরন্ত কল্যাণ লাভে মেনে চলার বিকল্প নেই। কুরআন-সুন্নাহর উপদেশ গ্রহণের মাধ্যমে উত্তম চরিত্র এবং সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনের পাশাপাশি পরিশুদ্ধ জীবন লাভ করাই মুমিন বান্দার একান্ত নৈতিক দায়িত্ব ও কাজ।

সর্বোপরি আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তাওবা ও ইসতেগফার করা এবং বিশ্বনবির শেখানো ছোট্ট এ দোয়াটি পড়া-

اَللَّهُمَّ اِنِّى أَسْألُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা; ওয়াত তুক্বা; ওয়াল আ’ফাফা; ওয়াল গেনা।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে হেদায়েত (পরিশুদ্ধ জীবন) কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা পরহেজগারি কামনা করি এবং আপনার কাছে সুস্থতা তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ-সামর্থ্য (আর্থিক স্বচ্ছলতা) কামনা করি। (মুসলিম, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমদ)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুন্দর ও পরিশুদ্ধ জীবন লাভে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুপম আদর্শ গ্রহণে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহর বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন।

আমিন।

সম্পর্কিত পোস্ট

রোজা রেখে আতর-পারফিউম ব্যবহার করা যাবে?

banglarmukh official

গর্ভবতী নারীর রোজার মাসয়ালা

banglarmukh official

তারাবির নামাজ ছুটে গেলে করণীয়

banglarmukh official

রোজা অবস্থায় কি দাঁত ব্রাশ করা যাবে?

banglarmukh official

চাঁদ দেখা গেছে, সৌদি আরবে রোজা শুরু শনিবার

banglarmukh official

শাবান মাসে কত তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখা যাবে

banglarmukh official