দেশময় আলোচিত বরগুনার রিফাত হত্যাকাণ্ড ভিন্নদিকে ধাবিত করতে নতুন এক অধ্যায়ের সৃষ্টি করলেন এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথ। নিজেই স্বউদ্যোগী হয়ে নিহত রিফাত শরীফের বাবাকে মিডিয়ার সামনে এনে পুত্রবধূকে ভিলেন হিসেবে উপস্থাপনে নতুন এক অভিযোগ তুলেছেন। এখন বলা হচ্ছে- রিফাত হত্যাকাণ্ড ছিল মিন্নির পরিকল্পনার একটি ফসল। হত্যাকাণ্ডে দিন মিন্নি ঘাতক সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডের সাথে সাক্ষাত করে এই হত্যাকাণ্ডে ছক আঁকে। এমনকি ঘটনার দিন সকালে রিফাতকে পরিকল্পনা মতে কলেজে ডেকে নিয়ে আসে। গত শনিবার সন্ধ্যায় বরগুনা প্রেসক্লাবে অনেকটা আকস্মিক সংবাদ সম্মেলন ডেকে রিফাতের বাবা পুত্রবধূ মিন্নির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। কিন্তু তিনি অভিযোগের স্বপক্ষে অকট্ট প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।
এসময় স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলীয় সাংসদ শম্ভু দেবনাথের পুত্র সুনাম দেবনাথকে প্রেসক্লাব ভবনের নিচে অবস্থান করতে দেখা গেছে। এসময় দুলাল শরীফের পাশে লাকবল বৃদ্ধি করতে দেবনাথকে সেলফোনে যোগাযোগ করতে দেখা যায়। উল্লেখ করা যেতে পারে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার পর এই প্রথম রিফাত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সুনাম দেবনাথ প্রকাশ্য ভুমিকা রাখলেন। ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে বয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা উপর্যুপরী কুপিয়ে হত্যা করে। এসময় স্ত্রী মিন্নি প্রতিহতে ব্যাপক ভুমিকা রাখেন। এই চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় এ যাবতকালের ইতিহাসে বরগুনার এই হত্যাকাণ্ড দেশব্যাপী আলোচনার সৃষ্টি করে। হত্যাকাণ্ডে শুরু থেকেই সাংসদপুত্র সুনাম দেবনাথের সংশ্লিষ্টতার কথা ওঠে। কারণ ঘাতক নয়ন বন্ড তার গ্রুপ সুনাম দেবনাথের ক্যাডার হিসেবে স্থানীয়ভাবে চিহ্নিত। এমপিপুত্র সুনাম সন্ত্রাসী নয়ন বন্ডকে ব্যবহার করতেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
এই ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে নিহতের পিতা দুলাল শরীফ একটি মামলা দায়ের করেন। তৎসময়ে এই দুলাল শরীফই আকার ইঙ্গিতে ঘটনার সাথে সুনাম দেবনাথের সংশ্লিষ্টতার কথা তোলার পাশাপাশি পুত্রবধূ মিন্নিকে নির্দোষ দাবি করেন। হত্যাকান্ডের ৫দিনের মাথায় ঘাতক নয়ন বন্ড পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর থেকেই মিন্নিকে ভিলেন বানানোর প্রচেষ্টা শুরু হয়।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়- নিহত নয়ন বন্ডসহ গ্রেপ্তার অপর আসামিরা তাদের স্বীকারোক্তিতে এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সুনাম দেবনাথ আগেভাগেই জানতেন প্রকাশ করে।
স্থানীয় বেশ কয়েকটি সূত্র বলছে- পুলিশের কাছেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু তদুপরি পুলিশ পিতার প্রভাবের কারণে সুনাম দেবনাথকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারছে না। এখন কথা উঠেছে- এই হত্যাকাণ্ড ভিন্নদিকে রুপ দিতে দুলাল শরীফকে সুনাম দেবনাথের অনুকূলে নিয়ে আসতে স্থানীয় প্রশাসন পরক্ষ ভুমিকা রাখছে।
আবার কোন কোন মহলের সন্দেহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ও সাংসদ শম্ভুর মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাগযুদ্ধে একে আপরকে দোষারোপ করায় পেছনের অনেক তথ্যাদী সামনে আসায় বিব্রত এক পরিস্থিতি এড়াতেই মিন্নিকে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে এমপিপুত্র নিজেই স্বউদ্যোগী হয়ে রিফাতের বাবার এখন কাছাকাছি থাকছেন। রিফাত হত্যাকাণ্ডের চাবিকাঠি অর্থাৎ মামলার বাদী দুলাল শরীফ সঙ্গত কারণে এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন।
নিরব থাকার পর হত্যাকাণ্ডের ১৮ দিনের মাথায় কেন মিন্নির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে মিডিয়ার ছায়াতলে আসলেন? অত:পর হত্যাকাণ্ডের পর সুনাম দেবনাথ রিফাতের পরিবার যেমন দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন তদরুপ দুলাল শরীফ পুত্রবধূর পক্ষ নিয়ে কথা বলছিলেন। গত শনিবার সন্ধ্যায় ওই সংবাদ সম্মেলনে দুলাল শরীফের রহস্যময় বক্তব্য এবং সেখানে এমপিপুত্রের ভুমিকা অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। সংবাদ সম্মেলনের উপস্থিত সংবাদকর্মীরা এই নিয়ে রিফাতের বাবাকে বেশ কিছু প্রশ্ন করলে তিনি খেই হারিয়ে ফেলেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে এসময় সুনাম দেবনাথ বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে দুলাল শরীফের চারপাশে রেখে প্রেসক্লাবের বাইরে দাড়িয়ে মোবাইলে মনিটরিং করতে দেখা গেছে। ফলে রিফাত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সর্বশেষ যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে মিন্নিকে বলিরপাঠা বানিয়ে স্থানীয় ক্ষমতাসীন মহলের একটি অংশ আত্মরক্ষার কৌশল নিয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের ভুমিকা নিয়েও কোন কোন মহল প্রশ্ন তুলেছে।
এদিকে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে মিন্নি রোববার দুপুরে নিজ বাসায় পাল্টা এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে শ্বশুর দুলাল শরীফের অভিযোগ সমুহ অসলগ্ন এবং পুত্রের শোকে বিকারগ্রস্ত করে মন্তব্য করেন। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন মহলকে দোষারোপ করে তিনিও হত্যাকাণ্ডকে ভিন্নদিকে ধাবিত করার অভিযোগ তোলেন। ফলে শ্বশুর ও পুত্রবধূ পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনে আবারও রিফাত হত্যাকাণ্ড নিয়ে বরগুনা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।’