এপ্রিল ২৪, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
অপরাধ জেলার সংবাদ প্রশাসন বরিশাল শিক্ষাঙ্গন

বরিশাল শিক্ষাবোর্ডে ১৮ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ শাস্তি!

বরিশাল শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক চলতি বছরের এইচ.এস.সি’র ফলাফল অপ্রকাশিত ১৮ জন পরীক্ষার্থীর বিরুদ্ধে গৃহীত শাস্তি জনমনে দেখা দিয়েছে নানান প্রশ্ন। দুশ্চিন্তা আর হতাশায় ইতিমধ্যে অভিযুক্ত এক শিক্ষার্থীর মা অসুস্থ হয়ে রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অপরদিকে বোর্ড কর্তৃপক্ষের প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তে অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে অভিযুক্ত ১৮ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন।
এদিকে সন্তানদের শিক্ষাজীবন ফিরে পেতে ভুক্তভোগী অভিভাবকরা দক্ষিণ বাংলার অভিভাবক পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রী) আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সাথে দেখা করেছেন।
সুত্রে জানা গেছে, চলতি আগস্ট মাসের ১৪ তারিখ বরিশাল বোর্ডের শৃঙ্খলা কমিটির ৩৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বোর্ডের ওয়েব সাইটে জানানো হয় নিয়ম বর্হিভুতভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও উত্তরপত্র জালিয়াতি প্রমাণিত হওয়ায় ১৯৮০সালের ৪২ নং আইনের ৮ ধারা মোতাবেক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের “ঘ” শ্রেণীভুক্ত দোষী সাব্যস্ত করে ঐ বছরের অনুষ্ঠিত পরীক্ষা বাতিলসহ পরবর্তী ৩ বছরের জন্য পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি পাবেনা। এদিকে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা সংক্রান্ত নীতিমালা ২০১৯ অনুযায়ী অপরাধ ও শাস্তি শিরোনামের ১৮ নং ক্রমিকের “ঘ” ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, পরীক্ষার্থী কর্তৃক পরীক্ষা ভবনের বাইরে অন্যের দ্বারা লিখিত উত্তরপত্র বা লিখিত অতিরিক্ত উত্তরপত্র দাখিল করা এবং উক্ত শিরোনামের ২০ নং ক্রমিকে আরো রয়েছে নিয়ম বর্হিভুতভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা অপরাধ বিবেচিত হবে।
এনিয়ে একাধিক ভুক্তভুগী অভিভাবক বলেন, শিক্ষার্থীদের খাতায় অন্যের দ্বারা লিখিত বলে বোর্ড কর্তৃপক্ষ “ঘ” ধারায় যে শাস্তি দিয়েছে প্রকৃতপক্ষে তা আমাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে সঠিক নয়। কারণ, আমাদের ফলপ্রার্থী সন্তানদেরকে যখন শৃঙ্খলা কমিটি জিজ্ঞেসাবাদ করে তখন হাতের লেখা পরীক্ষা করে কোন অমিল পায়নি এবং তাদের খাতায় নিজ নিজ হাতের লেখা রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এসময় অভিভাবকরা আরো বলেন, একই ঘটনায় আনিত অভিযোগের ভিত্তিতে বোর্ডের জনবল গৌতমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কারণ অভিযোগ প্রমাণ করার ক্ষেত্রে তদন্তের নিয়ম রয়েছে। আর তদন্ত সঠিকভাবে পরিচালনার জন্যই অভিযুক্তকে তার দ্বায়িত্ব থেকে দুরে রাখার জন্য সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। সেক্ষেত্রে তাকে সরাসরি স্থায়ীভাবে বহিস্কারও করা হয়নি কারণ তদন্তের ফলাফলকে কেন্দ্র করেই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু আমাদের এই ১৮ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে প্রধান পরীক্ষকের আনিত অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত ছাড়াই স্থায়ীভাবে শাস্তির সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো কিভাবে?
তার কোন সঠিক ব্যাখ্যা বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানায়নি। এককথায় শিক্ষার্থীদের অপরাধ প্রমাণের কোন পদ্ধতিই তারা গ্রহণ করেননি। কেবলমাত্র প্রধান পরীক্ষক সহিদুল ইসলামের সন্দেহ ও অনুমানকে আমলে নিয়ে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে এ ব্যাপারে বরিশাল বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুন কুমার গাইনের নিকট জানতে চাওয়া হয় যে, শিক্ষার্থীদের খাতায় অন্যের দ্বারা লেখানো হয়েছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে “ঘ” ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে কিন্তু এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা বলেন আমাদেরকে জিজ্ঞেসাবাদের সময় খাতা দেখানো হয়েছে এবং আমাদের হাতের লেখা পরীক্ষা করে দেখে নিশ্চিত হয়েছে যে খাতায় আমাদের হাতের লেখাই ছিলো। তাহলে কিভাবে এধারায় শিক্ষার্থীদের শাস্তির আওতায় আনলেন।
এসময় তিনি আরো বলেন, হাতের লেখা তাদের হলেও তারা নিয়ম বর্হিভুতভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে এবং “ঘ” ধারার ২০ নং ক্রমিকে তা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু একজন পরীক্ষার্থী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল পরীক্ষা কিভাবে শেষ করলো, যদি তারা নিয়মের মধ্যে না থাকে। সেক্ষেত্রে পরীক্ষা কেন্দ্রের পরিদর্শক কিংবা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাদের বিরুদ্ধে কি কোন অভিযোগ এনেছেন নাকি শুধুমাত্র প্রধান পরীক্ষকের অনুমান ও সন্দেহকে আমলে নেয়া হয়েছে।
এর কোনো সদুত্তর না দিয়ে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, আপনি এ ব্যাপারে বোর্ড চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেন।
এনিয়ে বরিশাল বোর্ড চেয়ারম্যানকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি তা রিসিভ করেননি।
এদিকে শৃঙ্খলা বোর্ডের সদস্য বরিশাল আলেকান্দা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো: নাসির উদ্দিন বলেন, আমি শৃঙ্খলা কমিটিতে ছিলাম তবে ঐ কমিটির প্রধান বোর্ড চেয়ারম্যান নিজেই। যদি আপনাদের কিছু জানতে হয় তাহলে তার সাথে যোগাযোগ করেন। এব্যাপারে আমি কোন কথা বলবোনা।
কিন্তু শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ কিভাবে কিংবা কোন পদ্ধতিতে প্রমাণ করলেন জানতে চাইলে, এর কোনো উত্তর নাদিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
এদিকে ১৮ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের ব্যাপারে প্রধান পরিক্ষক মোঃ শহিদুল বলেন, আমি গণিত ১ম পত্রের যে নমুনা উত্তর পত্র বোর্ডে জমা দিয়েছি তার সাথে ওই ১৮ শিক্ষার্থীর খাতার হুবহু মিল দেখতে পাই। এমনকি অনেক শিক্ষার্থীর খাতার উত্তরের সাথে ভাষাগতও মিল রয়েছে, যে কারণে আমার সন্দেহ হয়েছে। কারণ উত্তর প্রদাণের ক্ষেত্রে উত্তর একই হতে পারে কিন্তু ভাষাগত মিল সকল খাতার ক্ষেত্রে একই হয় কিভাবে? এসময় প্রতিবেদক বলে, যেহেতু গণিত বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে সেক্ষেত্রে নিজের মতো করে উত্তর প্রদাণের কোন সুযোগ থাকেনা। কারণ নির্দিষ্ট সুত্র মেনেই সকলকে অংকের উত্তর প্রদাণ করতে হয়।
আর বরিশাল বোর্ডে অংকে ৫০ এ ৫০ পেয়েছে এমন নজিড় কি আদৌ নেই বা এবছরও এমনটি হয়নি। শুধু তাই নয়, কোন শিক্ষার্থী কেন তার অতিরিক্ত বিষয়ে (ফোর সাবজেক্ট) জালিয়াতি করবেন?
ঔ বিষয়ে অকৃতকার্য হলেও তার মূল ফলাফলে কোন প্রভাব ফেলবেনা। আর আপনি নিজেও তো অনেক শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান, সেক্ষেত্রে আপনার তৈরী করা নমুনা উত্তরপত্র শিক্ষার্থীদের খাতার সাথে এক হওয়া তো অস্বাভাবিক নয়।
এ ব্যাপারে কোন সদুত্তর মেলেনি। এনিয়ে বরিশাল বোর্ডের নিরীক্ষক আবু সুফিয়ান বলেন, আমি যখন শিক্ষার্থীদের খাতা নিরীক্ষা করি তখন কোন অসঙ্গতি দেখিনি, এমনকি খাতায় কোন বিশেষ দাগ নেই।

সম্পর্কিত পোস্ট

সাতলায় বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে আ’লীগ নেতা মিজানকে অর্থের বিনিময়ে দলীয় সনদপত্র প্রদান করার অভিযোগ

banglarmukh official

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রাম পুলিশের বসত ঘরে ভাংচুর

banglarmukh official

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার জানাজায় অংশ নিতে মাগুরায় মামুনুল-হাসনাত-সারজিস

banglarmukh official

বরিশালে দুর্ঘটনায় নিহত ২

banglarmukh official