এপ্রিল ২১, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
স্বাস্থ বার্তা

মন যেভাবে কাজ করে

মন। দর্শনশাস্ত্রের একটি অন্যতম কেন্দ্রীয় অনুভূতি। আমরা ‘মন’ বলতে সাধারণভাবে বুঝি-বুদ্ধি এবং বিবেকবোধের এক সমষ্টিগত রূপ। যা চিন্তা, অনুভূতি, আবেগ, ইচ্ছা এবং কল্পনার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

মনকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। আজ পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞানী মনকে ধরতে বা ছুঁতে পারেননি। কোন ল্যাবরেটরিতে টেস্ট টিউবে ভরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে পারেননি। তবে মনের কার্যপ্রণালী সম্পর্কে আদি যুগের সাধকরা যেমন সচেতন ছিলেন তেমনি বর্তমান যুগের বিজ্ঞানীরাও সচেতন। হাজার বছরের পর্যবেক্ষণ-পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁরা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, তাহলো মন মানুষের সকল শক্তির উৎস। মনের এই শক্তি-রহস্যকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারলেই এই শক্তিকে আমরা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারব।

এক সময় বিজ্ঞান মনে করত মানুষ হচ্ছে বস্তুর সমষ্টি, যা কোন না কোনভাবে চিন্তা করতে শিখেছে। আর এখন বিজ্ঞান মনে করে মানুষ চেতনা বা তথ্যের সমষ্টি যাকে কেন্দ্র করে দেহ গঠিত হয়েছে। মানুষ সম্পর্কে বিজ্ঞানের ধারণা পরিবর্তনের মূলে রয়েছে জেনেটিক গবেষণায় অভাবনীয় অগ্রগতি।

দৃষ্টিভঙ্গি, লক্ষ্য বা প্রোগ্রাম দ্বারাই মন নিয়ন্ত্রিত আর মস্তিষ্ক পরিচালিত হয়। মস্তিষ্কের কাজের ফলাফলও নিরূপিত হয় এই দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রোগ্রাম দ্বারা। দৃষ্টিভঙ্গি বা প্রোগ্রাম দু’ধরনের। এক. আত্মবিনাশী বা নেতিবাচক। দুই. আত্মবিকাশী বা ইতিবাচক। আত্মবিনাশী প্রোগ্রাম ধীরে ধীরে একজন মানুষকে অবক্ষয় ও ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। আর আত্মবিকাশী প্রোগ্রাম মেধা ও প্রতিভাকে বিকশিত করে। জীবনে আনে প্রশান্তি প্রাচুর্য ও সাফল্য।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, আমাদের অধিকাংশের চিন্তা-জগতের শতকরা ৭০-৮০ ভাগই দখল করে রাখে রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা, দুঃখ, অনুতাপ, অনুশোচনা, কুচিন্তা, দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা, হতাশা ও নেতিবাচক চিন্তারূপী আত্মবিনাশী প্রোগ্রাম। এই আত্মবিনাশী প্রোগ্রাম অধিকাংশ মানুষের জীবনকেই ধীরে ধীরে করুণ পরিণতির দিকে নিয়ে যায়।

আমরা যদি এই প্রক্রিয়াকে উল্টে দিতে পারি অর্থাৎ ৭০-৮০ ভাগ চিন্তাকেই আত্মবিকাশী ইতিবাচক চিন্তায় পরিণত করতে পারি, তাহলেই আমরা মনের শক্তিকে ফলপ্রসূভাবে কাজে লাগাতে পারব। ইতিবাচক চিন্তাকে একবার ৭০ ভাগে উন্নীত করতে পারলে নেতিবাচক চিন্তা ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাবে। এরপরও যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তবে তার প্রভাব এতই হ্রাস পাবে যে, তা ইতিবাচক চিন্তার প্রাধান্যের কারণে আপনার জন্যে ক্ষতিকর কিছু করতে পারবে না।

আত্মবিনাশী চিন্তার বিনাশ সাধন প্রথমে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। এমন কি নেতিবাচক ও ইতিবাচক চিন্তার অনুপাত ৫০:৫০ করাও মনে হতে পারে দুঃসাধ্য। কারণ আমরা নেতিবাচক চিন্তায় এমন অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে, এটা আমাদের চরিত্রের অঙ্গে পরিণত হয়েছে। তবুও একটু সচেতন প্রচেষ্টা চালালে ধাপে ধাপে আপনি এই নেতিবাচক চিন্তাকে নির্মূল করতে পারবেন। একবার এ প্রক্রিয়া শুরু করলে আপনার কাছে তা এত সুন্দর ও মজার মনে হবে যে আপনি তাকে যুক্তিসঙ্গত পরিণতির দিকে নিয়ে যাবেন।

মন ও মস্তিষ্কের বিচিত্র সম্পর্ক আর এ দুয়ের পারস্পরিক প্রভাব নিয়ে বিশ্বজুড়ে পরিচালিত হয়েছে অসংখ্য গবেষণা। এ গবেষণায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের প্রফেসর ও ম্যাসাচুসেট্স জেনারেল হাসপাতালের মাইন্ড বডি ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ডা. হার্বাট বেনসন। এ বিষয়ে তার রয়েছে ১৭৫ টি গবেষণা-প্রতিবেদন এবং ১১টি বই। যার মধ্যে দু’টি উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে ‘ট্রেইন ইয়োর ব্রেন চেঞ্জ ইয়োর মাইন্ড’ ও ‘দি মাইন্ড বডি ইফেক্ট’।

মন যেহেতু মস্তিষ্ক ও মাস্তিষ্কের কাজকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে, নিরাময় ও সুস্থতার জন্যে এই মন নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব তাই অনেক বেশি। সাধারণভাবে আমরা অধিকাংশ মানুষই মনকে আমাদের কথা শোনতে পারি না, মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারি না, সেক্ষেত্রে অবস্থাটি দাঁড়ায় ‘মনের আমি’, আর একজন সত্যিকারের জ্ঞানী, তিনিই শুধু বলতে পারেন- ‘আমার মন’।

মন ও দেহ আসলে মানুষের জন্মসূত্রেই অবিচ্ছেদ্য আর পরস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। একে চাইলেও আলাদা করা যায় না। দেহ ও মন পরস্পর স্নায়ুগুচ্ছ ও বার্তাবাহক রাসায়নিক অণু (নিউরোট্রান্সমিটার) দ্বারা সারাক্ষণ সংযোগ রেখে চলছে। বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত আমাদের দেহে প্রায় ৬০ ধরনের বার্তাবাহক রাসায়নিক অণু আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন।

মন ও দেহের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করে ব্রেনের হাইপোথ্যালামাস। এই হাইপোথ্যালামাস বার্তাবাহক রাসায়নিক অণু নিঃসরণের মাধ্যমে দৈহিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে। যেমন, কোনো কারণে আপনি মনে ভীষণ কষ্ট পেলেন। আপনজন কষ্ট দিয়েছে। আপনি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। কষ্ট ধীরে ধীরে বেড়েই চলছে।

আপনি কষ্ট পেলেন, এটি মনের বিষয়। এই কষ্টের তথ্য অবচেতন মনের মাধ্যমে আপনার ব্রেনের হাইপোথ্যালামাসে পৌঁছে গেল। তখন কী ঘটে? হাইপোথ্যালামাস থেকে কষ্টের বার্তাবাহক রাসায়নিত অনু নিঃসৃত হয় এবং তা আপনার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গে এবং হৃদযন্ত্রে। তেমনিভাবে রাগ ক্ষোভ দুঃখ হতাশা বিষন্নতার মতো নেতিবাচক আবেগের প্রতিক্রিয়াতেও একই ধরনের বার্তাবাহক রাসায়নিক অণু শরীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত করে হৃৎপিণ্ডকেও। যার অন্যতম পরিণতি করোনরি হৃদরোগ।

মুক্ত মনের বিশ্বাস হচ্ছে সকল সাফল্য, সকল অর্জনের ভিত্তিত। বিশ্বাসই রোগ নিরাময় করে, মেধাকে বিকশিত করে, যোগ্যতাকে কাজে লাগায়, দক্ষতা সৃষ্টি করে। ব্যর্থতাকে সাফল্যে আর অশান্তিকে প্রশান্তিতে রূপান্তরিত করে।

নিয়ত হচ্ছে মনের বাগান। নিয়ত মনকে নিয়ন্ত্রণ করে, দেহকে সঠিক পথে পরিচালিত করে, দেহ-মনে নতুন বাস্তবতার জন্ম দেয়।

দেহ হচ্ছে আত্মার বহিরাবরণ। দেহের সীমাবদ্ধতা আছে; মনের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। মন হচ্ছে বিশুদ্ধ শক্তি। মনোগত দৃষ্টিভঙ্গির উপরই এর প্রকাশিত রূপ নির্ভর করে।

প্রশান্ত মন নিরাময় প্রক্রিয়াকে বেগবান করে। মনের সুখ দেহের অসুখকে সবসময় ভাসিয়ে নিয়ে যায়। প্রতিটি মানুষ বড় হতে পারে তার জীবনের মনছবি বা স্বপ্নের সমান।

সম্পর্কিত পোস্ট

যে কারণে অন্তঃসত্ত্বাদের কাঁচা পেঁপে খাওয়া নিষেধ

banglarmukh official

ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুতে বছরের রেকর্ড

banglarmukh official

রোজ সকালে খান আমলকী, সুগার থাকবে নিয়ন্ত্রণে

banglarmukh official

সকালে যে তিন খাবার খেয়ে আপনার স্বাস্থ্য ঠিক রাখবেন

banglarmukh official

ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪০৩

banglarmukh official

বন্যায় শিশুদের জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

banglarmukh official