27 C
Dhaka
জানুয়ারি ৩১, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
খুলনা জেলার সংবাদ

কৃষক দেখলেই ছুটে যান মাদরাসা শিক্ষক এমদাদ

খুলনা প্রতিনিধি/ জান্নাতুল ফেরদৌস:

প্রখর রোদে মাঠে কাজ করছিলেন কৃষক। তাদের মাথায় নেই মাথাল। শুধু তাই নয়, অনেক কৃষক কীটনাশক ছিটানোর সময় মাস্ক ব্যবহার করেন না। এমন কৃষক দেখলেই তাদের কাছে ছুটে যান। তাদের মাথায় মাথাল ও মুখে মাস্ক পরিয়ে দেন। কাজ শেষে বাড়ি ফিরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে কৃষকের হাতে তুলে দেন সাবান। এসব তিনি দিয়ে থাকেন বিনা মূল্যে। এভাবে বছরের পর বছর কৃষকদের রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের কাজী আব্দুল ওয়াহেদের ছেলে কাজী এমদাদুল হক। তিনি ১৯৮৮ সালে কোলাবাজার ইউনাইটেড হাই স্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৯০ সালে খুলনা আজম খাঁন কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বিএ পরীক্ষা শেষে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে চলে যান জামালপুর। চাকরি ছেড়ে গ্রামে চলে আসেন। নিজে কৃষি কাজের পাশাপাশি গ্রামের একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। সেখানে বেতন না থাকায় বাড়িতে ছাত্র পড়িয়ে মাসে হাজার দশেক টাকা আয় করেন। এরমধ্যে ৬ হাজার টাকা সংসারের পেছনে খরচ করেন। বাকি টাকা কৃষকদের পেছনে ব্যয় করেন। স্ত্রী, দুই মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে তার সংসার। Teacher জানা যায়, ২০০৬ সালে বাড়িতে কয়েকজন প্রতিবেশীকে ডেকে পরামর্শ করেন খেটে খাওয়া মানুষের নিরাপত্তায় কী করা যায়। সে ইচ্ছা থেকে প্রথমে পাড়ায় পাড়ায় কৃষকদের নিয়ে রাতে বৈঠক শুরু করেন। পরে বৈঠকগুলোতেই পাঠদানের ব্যবস্থা করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে কৃষকের নিরাপত্তায় নানা কাজে জড়িয়ে পড়েন। স্থানীয়রা জানায়, প্রথম দিকে এমদাদুল তার নিজ ইউনিয়ন কোলার ১১টি গ্রামের মাঠ ঘুরে কৃষকের তালিকা করেন। যারা মাথায় মাথাল ব্যবহার করেন না এবং কীটনাশক ছিটানোর সময় মুখে মাস্ক দেন না, তাদেরও তালিকা করেন তিনি। সেই তালিকা ধরে তিনি কৃষকদের হাতে মাথাল ও মাস্ক তুলে দেন। ইতোমধ্যে তিনি ১ হাজারের বেশি মাথাল কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। মাস্ক দিয়েছেন আরও বেশি। Teacher এছাড়া এমদাদুল কৃষকদের চিকিৎসা সহায়তায় রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে আসছেন। এলাকায় ২০ হাজারের বেশি বনজ ও ফলদ গাছ এবং ১৫ হাজার তালের আঁটি রোপণ করেছেন। কৃষকদের অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন করতে নৈশ বিদ্যালয়ে পাঠদান করান। কৃষি জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার কমাতে কেঁচো সার তৈরির পরামর্শ ও বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেন। স্থানীয় কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, ‘একদিন মাঠে কাজ করছিলাম। করল্লা (উস্তে) ক্ষেতে ওষুধ স্প্রে করার সময় মুখে কোন কাপড় ছিল না। তা দেখে তিনি পকেট থেকে একটি মাস্ক বের করে পরিয়ে দেন।’ কামালহাটের মোমিনুর রহমান বলেন, ‘মাথাল ছাড়া কাজ করতে দেখলে এমদাদ ভাই ছুটে গিয়ে মাথাল পরিয়ে দেন।’ Teacher-in-(3) কৃষক নান্নু মিয়া বলেন, ‘রোদের মধ্যে ক্ষেতে কাজ করছি। এমন সময় এমদাদ ভাই এসে মাথাল পরিয়ে দেন। মাথাল পরে কাজ করলে কী সুবিধা হয়, বুঝিয়ে বলেন। এরপর থেকে মাথাল ছাড়া মাঠে কাজ করি না।’ শিক্ষক এমদাদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘কৃষকদের অসচেতনতা দূর করতে মাথাল, মাস্ক ও সাবান বিতরণ শুরু করি। এখন অনেকেই এগুলো ব্যবহার করছেন। এছাড়া অক্ষরজ্ঞান না থাকায় কৃষি বিভাগ থেকে সচেতনতামূলক যেসব লিফলেট দেওয়া হয়, তা পড়তে পারেন না তারা। তাই পাড়ায় পাড়ায় নৈশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেই।’ তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৮টি গ্রামে ১৩টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ৫ শতাধিক কৃষককে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন করে তোলা হয়েছে। স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে কেঁচো সার তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। এখন গ্রামের কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।’ Teacher-in-(3) কোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এমদাদ যা করছেন, তা জনপ্রতিনিধি হয়েও আমরা করতে পারি না। তিনি যে টাকা উপার্জন করেন, তা পরিবারের পেছনে কম খরচ করে এলাকার মানুষের পেছনে ব্যয় করেন।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদুল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এমদাদুল হকের কাজে স্থানীয় কৃষি বিভাগ মুগ্ধ। তাই কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এমদাদুল হকের বাড়িতে কৃষি পাঠাগার করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে একটি আলমারিসহ কিছু বইও দেওয়া হয়েছে।’

সম্পর্কিত পোস্ট

বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে ইজারা বহির্ভূতভাবে শেরপুর সীমান্তে বালু উত্তোলনের মহোৎসব

banglarmukh official

খু‌ড়ি‌য়ে খু‌ড়ি‌য়ে চল‌ছে শেরপু‌রের তৃতীয় লি‌ঙ্গের আবাসন কেন্দ্রটি

banglarmukh official

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন

banglarmukh official

জাহাজে ডাকাতিতে বাধা দেওয়ায় হত্যা করা হয় ৭ জনকে

banglarmukh official

স্বামীকে ঢাকায় পাঠিয়ে গৃহবধূকে ধর্ষণ, আদম বেপারি গ্রেফতার

banglarmukh official

টঙ্গীতে জোড় ইজতেমার আখেরি মোনাজাত কাল

banglarmukh official