এপ্রিল ২৬, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
ইসলাম ধর্ম

ফেতনামুক্ত ঈমানি জীবন-যাপন ও মৃত্যু লাভের ৬ আমল

ঈমানি জীবন-যাপন এবং ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করা অনেক বড় সৌভাগ্যের বিষয়। এটা সহজ কোনো কাজ নয় বরং সবচেয়ে কঠিন কাজ। ঈমানি জীবন-যাপন ও ঈমানি মৃত্যু লাভের অন্যতম উপায় হলো কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা। যা অনেক কঠিন।

চারদিকে এতবেশি ফেতনা যে, ঈমানের সঙ্গে সঠিকভাবে জীবন পরিচালনা করা অনেক দুষ্কর। আবার ঈমানি জীবন-যাপন করে ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়াও অনেক কঠিন কাজ। যারা ঈমানি জীবন-যাপন করে পারে এটা তাদের জন্য অনেক বড় সাফল্যের বিষয়ও বটে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় বান্দার আমলসমূহ, এটা নির্ভর করে জীবনের শেষ অবস্থায় সে কোন আমল নিয়ে যেতে পেরেছে।’

হাদিসের আলোকে জীবনের শেষ অবস্থায় বান্দার পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে? এটার ওপর নির্ভর করবে মুমিন বান্দার আখেরাতে নাজাত ও মুক্তি।

আর এ কারণেই মুমিন বান্দা তার জীবনের শেষ অবস্থা নিয়ে সবচেয়ে বেশি পেরেশানিতে থাকে, চিন্তায় থাকে। অনেক মুমিন জীবনের শেষ অবস্থা কী হবে এ চিন্তায় অস্থির হয়ে যায়, অজ্ঞান হয়ে যায়। আর বলতে থাকে, হায়! আমার জীবনের শেষ অবস্থা কেমন যেন হয়? আমি কি ঈমান নিয়ে শেষ বিদায় নিতে পারবো? আল্লাহ না করুন, নাকি ঈমান হারা হয়ে মৃত্যুবরণ করবো! এ চিন্থায় মুমিন থাকে অস্থির।

দুনিয়াতে আমরা যা দেখি, বলা চলে তার সবই ঈমান হরণ করার আয়োজন চলছে। আর শয়তান এসব আয়োজনে ঘি ঢেলে দিচ্ছে। ঈমান হরণের এ আয়োজন থেকে মুক্তি পেতে মুমিন-মুসলমানের জন্য কিছু আমল করা জরুরি। যা মানুষকে সত্যের দিকে পরিচালিত করবে। ঈমানি জীবন-যাপন ও ঈমানি মৃত্যুর সৌভাগ্য দান করবে। সে আমলগুলো হলো-

>> কুরআন-সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা

মানুষ যখন ফেতনায় দিশেহারা হয়ে যাবে। কোন পথ গ্রহণ করবে তা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না তখন কুরআন-সুন্নাহ-ই হবে মুক্তির একমাত্র হাতিয়ার। সে সময় যদি কেউ কুরআন-সুন্নাহ আঁকড়ে ধরতে পারে তবে সে সঠিক পথে থেকে ঈমানি জীবন-যাপন করতে পারবে এবং ঈমানি মৃত্যু লাভ করতে পারবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

‘তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না, যখন তোমরা দুটো জিনিসকে আঁকড়ে ধরবে। আর তার একটি হলো আল্লাহর কিতাব আর অন্যটি হলো তার রাসুলের সুন্নাহ।’

>> নেক আমলের ওপর নিয়োজিত থাকা

কোনো ব্যক্তি দুনিয়াতে যে কাজে নিয়োজিত থাকবে, সে ওই কাজের ওপরই মৃত্যুবরণ করবে। যদি কোনো কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করে তবে তার জীবনের শেষ পরিণতিও কুরআন-সুন্নাহর আলোকে হবে। সুতরাং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নেক আমল, ভালো কথা ও সুন্দর আচরণে নিজেকে নিয়োজি রাখা জরুরি। এমনটি করতে পারলে জীবনের শেষ কাজটিও নেক কথা ও কাজেই শেষ হবে।

>> ভালো মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা

ভালো কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য ভালো মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা। যারা দ্বীন, ঈমান ও কল্যাণের কথা ছাড়া অন্যায়মূলক কোনো কথা বলে না। আল্লাহ তাআলাও ঘোষণা করেন-

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং (আল্লাহকে ভয় করার উপায় হিসেবে) সত্যবাদীদের সঙ্গে চলাফেরা (সুসম্পর্ক) রাখ।’

আল্লাহ তাআলা সেসব সত্যবাদী লোকদের সংস্পর্শে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন যারা আল্লাহর নাফরমানি করে না। আল্লাহর নির্দেশের বাইরে চলে না। তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখলেই জীবনের শেষ অবস্থা হবে সুন্দর।

>> ঈমানকে নবায়ন করা

হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের ঈমানকে নবায়ন কর। সাবাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন হে আল্লাহর রাসুল! ঈমান কীভাবে নবায়ন করব? তিনি বললেন, বেশি বেশি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়তে থাক।

>> বেশি বেশি মেসওয়াক করা

মৃত্যুর আগে বিশ্বনবির শেষ আমল ছিল মেসওয়াক করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কোলে মাথা রেখে মেসওয়াক করেই ঈমানি মৃত্যু লাভ করেছিলেন। এ কারণেই ওলামায়ে কেরাম পরামর্শ দেন যে, বেশি বেশি মেসওয়াক মানুষের ঈমানি মৃত্যু লাভের অন্যতম উপায়।

>> একান্তে দোয়া করা

শেষ জীবনে যেন ঈমানি মৃত্যু হয়, আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে যেন মৃত্যু লাভ হয় সে জন্য বেশ কিছু দোয়া আছে, যেগুলো একান্তে চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। দোয়াগুলো করার সময় এর অর্থ অনুধাবন করে বুঝে বুঝে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ পরিণতি ভালো হতে অনেকগুলো দোয়া শিখিয়েছেন। কুরআনেও অনেক দোয়া এসেছে। আর তাহলো-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা আলাম, ওয়া আসতাগফিরুকা লিমা লা আলাম।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমার জানামতে আপনার প্রতি শিরক হয় এমন ভয়াবহ অপরাধ থেকে বেঁচে থাকার আশ্রয় চাই। আর আমার অজান্তে ঘটে যাওয়া শিরকে থেকেও ক্ষমা প্রার্থনা করি।

اَللَّهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوْبِ صَرِّفْ قُلُوْبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা মুছাররিফাল কুলুবি ছাররিফ কুলুবানা আলা ত্বাআতিকা।’
অর্থ : হে (মানুষের) অন্তর পরিবর্তনকারী আল্লাহ! আমাদের অন্তরকে তোমার আনুগত্যের দিকে পরিবর্তন কর।’ (মুসলিম, মিশকাত)

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّت قَلْبِىْ عَلَى دِيْنِكَ
উচ্চারণ : ‘ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুবি ছাব্বিত কালবি আলা দিনিকা।’
অর্থ : হে (মানুষের) অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর দৃঢ় রাখ।’ (তিরমিজি, মিশকাত)

رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানা আফরিগ আলাইনা সাবরাও ওয়া তাওয়াফ্ফানা মুসলিমিন।’
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের ধৈর্যদান করুন এবং মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দান করুন।

رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ
উচ্চারণ : রাব্বানা লা তুযেগ কুলুবানা বা’দা ইজ হাদাইতানা ওয়া হাবলানা মিল্লাদুনকা রাহমাতান ইন্নাকা আংতাল ওয়াহহাব।’
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লংঘনে ধাবিত করো না; এবং তোমার কাছ থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান কর; নিশ্চয় তুমিই সবকিছুর দাতা।

اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ
উচ্চারণ : ‘ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকিম। সিরাতাল্লাজিনা আনআমতা আলাইহিম। গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়া লাদ্দাল্লিন।’
অর্থ : ‘আমাদের সহজ সরল পথের হেদায়েত দিন। যে পথে চলা লোকদের ওপর আপনি নেয়ামত দান করেছেন। অভিশপ্ত ও গোমরাহির পথ থেকে বিরত রাখেন।’

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْفِتَنِ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল ফিতানি মা জাহারা মিনহা ওয়া মা বাত্বান।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! যে ফেতনাগুলো দেখা যায় আর যেগুলো দেখা যায় না, সব ধরনের ফেতনা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈমানি জীবন-যাপন ও ঈমানি মৃত্যু লাভের তাওফিক দান করুন। উল্লেখিত দিক-নির্দেশনাগুলো মেনে চলার মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পর্কিত পোস্ট

রোজা রেখে আতর-পারফিউম ব্যবহার করা যাবে?

banglarmukh official

গর্ভবতী নারীর রোজার মাসয়ালা

banglarmukh official

তারাবির নামাজ ছুটে গেলে করণীয়

banglarmukh official

রোজা অবস্থায় কি দাঁত ব্রাশ করা যাবে?

banglarmukh official

চাঁদ দেখা গেছে, সৌদি আরবে রোজা শুরু শনিবার

banglarmukh official

শাবান মাসে কত তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখা যাবে

banglarmukh official