33 C
Dhaka
এপ্রিল ২৪, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
অপরাধ জেলার সংবাদ বরিশাল

বরগুনা হত্যাকাণ্ড: রিফাতকে খুনের পরিকল্পনা হয় শহীদ মিনারে!

বরগুনায় শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফকে হত্যার ঘটনায় করা মামলার আরো ১০ আসামির জবানবন্দির বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁরা বলেছেন, রিফাত শরীফকে মারার জন্য আগের দিন বৈঠক করেছেন তাঁরা। বরগুনা সরকারি কলেজের শহীদ মিনারে ওই বৈঠক হয়েছে, যেখানে রিফাত ফরাজী ও সাব্বির আহমেদ ওরফে নয়ন বন্ডের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন উপস্থিত ছিলেন। সে অনুযায়ী পরদিন অর্থাৎ গত ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজ এলাকায় রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালানো হয়।

রিফাত শরীফকে তাঁর স্ত্রীর সামনে প্রকাশ্যে কোপানোর ঘটনাটি ভাইরাল হলে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় করা মামলার ১৫ আসামি আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গত ৮ নভেম্বর পাঁচ আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি কালের কণ্ঠে ছাপা হয়। বাকি ১০ আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কপিও কালের কণ্ঠ’র হাতে এসেছে। রিফাত শরীফকে হত্যার আরো অনেক তথ্য উঠে এসেছে আসামিদের জবানবন্দিতে।

গত ২৫ জুন বিকেল ৫টার দিকে বরগুনা জেলা স্কুলের ছাত্র আবদুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়। মানববন্ধন শেষে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের শহীদ মিনারে রিফাত ফরাজী ও নয়ন বন্ডের নেতৃত্বে রিশান ফরাজী, রায়হান, অলিউল্লাহ অলি, মোহাইমিনুল সিফাত, রিফাত হাওলাদার, নিয়ামত, তানভীর, সুহার্ত, শুভ, নাজমুল হাসানসহ ২০-২৫ জন বৈঠক করেন। ওই বৈঠকেই রিফাত শরীফকে মারার সিদ্ধান্ত হয়। আসামি রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী, রেজোয়ান আলী খান ওরফে টিকটক হৃদয় তাঁদের জবানবন্দিতে এই তথ্য জানান।

টিকটক হৃদয় জবানবন্দিতে বলেন, তিনি ২৫ জুন সন্ধ্যার পর কলেজের সামনে যান। এ সময় কলেজের পূর্ব পাশের গলি থেকে রিফাত ফরাজী তাঁকে ডাক দেন। রিফাত ফরাজী তাঁকে বলেন, ‘বিকেলে কোথায় ছিলি? আমরা সবাই কলেজের মাঠে মিটিং করেছি। সবাইকে আগামীকাল সকালে কলেজের সামনে আসতে বলেছি।’ এরপর রিফাত ফরাজী তাঁকে সব খুলে বলেন এবং রিফাত শরীফকে মারার পরিকল্পনার কথা জানান।

রিফাতের ঠ্যাং ভাঙা হবে : আসামি রিফাত ফরাজী জবানবন্দিতে বলেছেন, বৈঠকে নয়ন বন্ড উপস্থিত সবাইকে জানান যে পরদিন রিফাত শরীফ কলেজে আসবেন। মিন্নি (রিফাত শরীফের স্ত্রী) নিয়ে আসবেন। তখন ওর ঠ্যাং ভাঙতে হবে। নয়ন সবাইকে পরদিন (২৬ জুন) সকাল ৯টার মধ্যে কলেজে আসতে বলেন।

ফেসবুক গ্রুপে দা আনার নির্দেশ দেওয়া হয় : রিফাত হত্যা মামলার আসামি আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ (দশম শ্রেণির ছাত্র) জবানবন্দিতে বলেছে, ঘটনার আগের দিন রাত ১০টার দিকে ‘বন্ড-০০৭’ গ্রুপের ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে বলা হয়, ‘গ্রুপের সবাইকে আগামীকাল সকালে কলেজে দেখতে চাই’। এরপর রিফাত ফরাজী একটি দায়ের ছবি দিয়ে আরো একটি পোস্ট দেন। সেখানে লেখা ছিল, ‘পারলে এটি (দা) নিয়ে আইসেন।’ এরপরই রিফাত হাওলাদার আরেকটি পোস্টে লেখেন ‘নিয়ে আমুনে ভাই।’

কথা অনুযায়ী রিফাত হাওলাদার একটি কলেজ ব্যাগে করে দুটি দা নিয়ে কলেজে আসেন। ওই ব্যাগটি অলিউল্লাহকে দেন। অলিউল্লাহ ব্যাগটি ঘাড়ে নিয়ে হাঁটেন। বিষয়টি রিফাত ফরাজীকে জানানো হয়। অলিউল্লাহ তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, রিফাত ফরাজীর নির্দেশনা অনুযায়ী কলেজের অদূরেই একটি টিনের ছাউনির ঘরের চালে ব্যাগটি রেখে দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর রিশাত ফরাজী, রিফাত ফরাজী, রায়হানসহ অন্যরা রিফাত শরীফকে মারতে মারতে ক্যালিক্স একাডেমির গেটের সামনে আসেন। নয়ন বন্ডও দৌড়ে এসে মারতে শুরু করেন। এ পর্যায়ে নয়ন বন্ড বলেন, ‘দাও নিয়ে আয়।’ রিফাত ফরাজী দৌড়ে গিয়ে দা নিয়ে আসেন। এরপর দুজনই রিফাত শরীফকে কোপাতে থাকেন।

ও ভাই শুনছ, রিফাত শরীফ মারা গেছে : মামলার আসামি শ্রাবণ জবানবন্দিতে আরো জানায়, ঘটনার দিন ২৬ জুন বিকেল সাড়ে ৪টায় শাহরিয়ার ইমরান বন্ড-০০৭ গ্রুপে নয়ন বন্ডকে উদ্দেশ্য করে মেসেজ দিয়ে জানান, ‘ও ভাই শুনছ রিফাত শরীফ মারা গেছে।’ শ্রাবণ মেসেজটি পড়ে উত্তর দেয়, ‘হি ইজ ডেড।’ শুধু এই ধরনের খুদে বার্তা নয়, একজন আরেকজনকে সতর্কও করে গ্রুপে বার্তা চালাচালির মাধ্যমে। শ্রাবণ জবানবন্দিতে বলেছে, রিফাত শরীফ নিহত হওয়ার দিন রাত ১০টায় সে গ্রুপের সবাইকে জানায়, ‘নয়ন ভাই এখানে নেই।’ এরপর সে আবার পোস্ট দেয়। ওই পোস্টে বলা হয়, ‘এভরি অন (ওয়ান) রিপোর্ট দিস গ্রুপ ফার্স্ট, ডোন্ট থিংক ঠু মাচ, দ্যাটস ফর আওয়ার সেফটি।’

রিফাত ফরাজীকে গালি দেওয়াই কাল হলো রিফাত শরীফের : ঘটনার দুই দিন আগে গত ২৪ জুন সকাল ১১টার দিকে রিফাত শরীফ, রিফাত ফরাজী ও নয়নের বন্ধু হেলালের একটি মোবাইল ফোন নিয়ে যান রিফাত শরীফ। রিফাত ফরাজী ফোনটি ফেরত দেওয়ার জন্য রিফাত শরীফকে ওই দিনই ফোন দেন। কিন্তু রিফাত শরীফ রিফাত ফরাজীর মা-বাবা তুলে গালি দেন। এরপর মিন্নিকে ফোন করেন রিফাত ফরাজী। স্বামীকে ফোন ফেরত দিতে বলেন মিন্নি। রিফাত শরীফ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মিন্নিকে লাথি মারেন। বিষয়টি রিফাত ফরাজীকে নয়ন বন্ডের মাধ্যমে জানান মিন্নি। এরপরই রিফাত শরীফকে মারার পরিকল্পনা হয়। রিশান ফরাজী তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, এই কারণেই রিফাত ফরাজী রিফাত শরীফকে মারতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। রিফাত ফরাজীর জবানবন্দিতেও এমন তথ্য রয়েছে।

রিফাত শরীফের কোমরেও ছুরি ছিল : ২৬ জুন সকাল ১০টার পর রিফাত শরীফকে কোপানো হয়। সকালে মিন্নি ও রিফাত শরীফ যখন কলেজে এসেছিলেন তখন রিফাত শরীফের কোমরেও ছুরি ছিল। রিফাত ফরাজী ও রিশাত ফরাজী জবানবন্দিতে এমন দাবি করেছেন। তাঁরা বলেছেন, রিফাত শরীফ যখন কলেজে ঢোকেন তখন রিফাত ফরাজীকে দেখেই তিনি বলেন, ‘কিরে মাস্তান।’ রিফাত ফরাজী তখন রিফাত শরীফের কোমরে হাত দিয়ে ছুরি বের করে বলেন, ‘এটা কি, কাকে মারবি?’ এরপর রিফাত শরীফ চুপ ছিলেন। পরে রিফাত ফরাজী মারতে শুরু করেন।

এই মামলায় রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিও আসামি। তিনিও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। রিফাত শরীফকে তাঁর সামনে কোপানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সেখানে মিন্নিকে তাঁর স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়। তবে কোনো আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেননি। মিন্নির পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ নির্যাতন ও জোর-জবরদস্তি করে মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে।

রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় ২৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

সাতলায় বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে আ’লীগ নেতা মিজানকে অর্থের বিনিময়ে দলীয় সনদপত্র প্রদান করার অভিযোগ

banglarmukh official

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রাম পুলিশের বসত ঘরে ভাংচুর

banglarmukh official

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার জানাজায় অংশ নিতে মাগুরায় মামুনুল-হাসনাত-সারজিস

banglarmukh official

বরিশালে দুর্ঘটনায় নিহত ২

banglarmukh official