গত ৮ মার্চ তিনি অধিনায়ক মনোনীত হয়েছেন। তারপর কেটে গেছে চার দিন, আজ পঞ্চম দিন। জানা গিয়েছিল, গত ৯ মার্চ বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচের দিন আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলবেন তামিম ইকবাল। কিন্তু যেকোনো কারণেই হোক তা হয়নি।
এর মাঝে আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক কিংবা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় ওয়ানডে অথিনায়ক হওয়া নিয়ে কোন কথা বলেননি তামিম। অবশেষে আজ (শনিবার) ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শুরুর আগের দিন নিজ ক্লাব দল প্রাইম ব্যাংকের অনুশীলনে এসে মিডিয়ার মুখোমুখি হলেন বাংলাদেশের নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক।
তার ১৬-১৭ মিনিটের কথোপকথনে অনেক প্রসঙ্গই উঠে এসেছে। অনেক কথার ভিড়ে তার দায়িত্বপ্রাপ্তি, লক্ষ্য-পরিকল্পনা, চিন্তাভাবনা আর মাশরাফির মত সফলতম অধিনায়কের পর অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু- সব বিষয়েই কথা বলেছেন নতুন অধিনায়ক।
ক্যাপ্টেন্সি পাওয়া ও নেয়া প্রসঙ্গে তার মত, ‘আসলে এটা তো যৌথ সিদ্ধান্ত। মূলত বোর্ডেরই প্রাথমিক সিদ্ধান্ত থাকে। আমার পক্ষ থেকে সবসময়ই চিন্তা ছিল লম্বা সময়ের জন্য দায়িত্ব পেলে নেব। আমি চাচ্ছিলাম যদি প্রস্তাব পাই, তাহলে লম্বা সময়ের জন্য দায়িত্ব পেতে চাইবো, লম্বা সময়ের জন্য দায়িত্ব পেলেই কেবল নিব। এমন একটা চিন্তা ছিল।’
কেনো তার লম্বা সময়ের জন্য অধিনায়ক হওয়ার ইচ্ছে জাগল? এ প্রশ্নের জবাবে তামিম বোঝানোর চেষ্টা করেন, এক-দুই সিরিজে অধিনায়ক হিসেবে কিছু করার থাকে না। দলে যেকোনো পরিবর্তন, পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কিছু সময় প্রয়োজন।
তার ভাষায়, ‘আপনারা খেয়াল করে থাকবেন এখন আমাদের দল এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়েছে, যেখানে দুই-এক সিরিজে কোনো ক্যাপ্টেনের জন্য পরিকল্পনা করা খুব কঠিন। আমি চাচ্ছিলাম লম্বা সময়ের জন্য দায়িত্ব নিতে। আমার বিশ্বাস ছিল, লম্বা সময়ের জন্য দায়িত্ব পেলেই আমি দলের ভেতরে কোন পার্থক্য তৈরি করতে পারবো।’
তামিম জানেন, তার হাতে কোনো জাদুর চেরাগ নেই। তাই এ মুহূর্তে তার প্রথম লক্ষ্য হলো, কোনো বড় দল বা বিশ্ব শক্তিকে হারানো। তার ধারণা, এতে করে দলের প্রতিটি সদস্যের ভেতরে একটা বিশ্বাস জন্মাবে যে, আমাদের সামর্থ্য আছে বড় দলকে হারানোর।
অতীতের প্রসঙ্গে টেনে তামিম বলেন, ‘দল হিসেবে এবং আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, কোনো বড় দলের বিপক্ষে জেতা। ২০১৫ সালে আমরা যখন পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজ হারালাম, সেটা ছিল আমাদের একটা বড় টার্নিং পয়েন্ট। তখন মাশরাফি ভাইয়ের নেতৃত্বে আমাদের ভিতরে একটা বিশ্বাস জন্মালো যে, আমরা বড় দলকে হারাতে পারি। তার আগেও আমরা জিতেছি। কিন্তু কোনো বড় দলের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের রেকর্ড ছিল না। এখন আমাদের দলে বেশকিছু তরুণ আছে। তাদের ভেতরে বিশ্বাস জাগাতে এবং মনে সাহস সঞ্চারে একটাই জিনিস দরকার, তা হলো যেকোনো বড় দলকে হারানো। কোন বড় দলকে হারাতে পারলে সেই বিশ্বাসটা আবার ফিরে আসবে, টিমের জন্য ভাল হবে।’
তার আগে অনেকেই বয়সভিত্তিক জাতীয় দল, অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৯ বা ‘এ’ দলের নেতৃত্ব দিয়ে জাতীয় দলের অধিনায়ক হয়েছেন। তামিমের ক্ষেত্রে তেমনটা নয়। তার অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা সে অর্থে কম। তা মানেন, খুব ভাল জানেনও। তাই তো অধিনায়ক হয়ে রাতারাতি কিছু করার চেয়ে সময় চেয়ে নিচ্ছেন তামিম।
এ সম্পর্কে তার কথা, ‘আমি খুব অভিজ্ঞ অধিনায়ক না। আমার অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতা সে অর্থে খুব বেশি নয়। তাই আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সময়, আমাকে সময় দিতে হবে। দায়িত্ব পেলে সবার আগে চলে আসে এবং আসবে ব্যাটিং প্রসঙ্গ। আমি নিজেও জানি না, ছয় মাস বা এক বছর পর ব্যাটিং পারফরমেন্স কেমন থাকবে? আসলে আমি একটু সময় চাই। দর্শক, ভক্ত, সমর্থক ও মিডিয়া সবার কাছেই একটু সময় চেয়ে নিচ্ছি। দলের উন্নতির জন্য যা যা করার দরকার তাই চেষ্টা করবো। চেষ্টা থাকবে কাজের কাজগুলোই করার। আমি সফল হবো কি হবো না, তা জানি না। তবে দলের মঙ্গলের জন্য যা দরকার তা করার প্রাণপন চেষ্টা থাকবে।’
তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফির উত্তরসূরী। মাশরাফির পর দায়িত্ব পেয়েছেন। এটা অন্যরকম চাপ কি না? মাশরাফির মত সফল অধিনায়কের পরে দল পরিচালনার দায়িত্ব নেয়া, সহজ না কঠিন? এমন প্রশ্নের জবাবে তামিম বুঝিয়ে দিয়েছেন, কাজটি সহজ নয় মোটেই, অনেক বেশি কঠিন।
তাই তো মুখে এমন কথা, ‘আমি এমন একজনের পরে দায়িত্ব পেয়েছি, যিনি অনেক সফল। যার নেতৃত্বে আমরা অনেক কিছু করেছি। আমাদের প্রাপ্তির ভাণ্ডার অনেক ভারী হয়েছে, অর্জনও আছে বেশ। তার জায়গাটা হুট করে নিয়ে, সফল হওয়া সহজ কাজ নয়। কাজেই দায়িত্ব পেয়ে রাতারাতি ও খুব শীঘ্রই মাশরাফি ভাইয়ের পর্যায়ে চলে যাওয়া হবে খুব কঠিন।’
আরও যোগ করেন, ‘আমি ভাল করে জানি, উনি অনেক বছর অধিনায়কত্ব করেছেন। তার নেতৃত্বে দল হিসেবে আমাদের অর্জন ও প্রাপ্তিও আছে অনেক। তারপরও আমরা যদি খুব জলদি কোন ভালো পর্যায়ে চলে যেতে পারি, সেটা খুব ভাল। আর না যেতে পারলে একটু সময় চাইবো।’