এপ্রিল ২১, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
আন্তর্জাতিক করোনা

তথ্য ও বার্তাবিভ্রাটে করোনা মহামারি

অলংকরণ : আরাফাত
অলংকরণ : আরাফাত
মহামারির সময় রোগ, আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা মোকাবিলায় জন্য মানুষকে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া খুব জরুরি। মহামারি শুধু যে জনস্বাস্থ্য আর অর্থনৈতিক সংকট বয়ে আনে, তা নয়; বরং গুরুতর তথ্যবিভ্রাট এবং যোগাযোগ-সংকটও তৈরি করে। বাংলাদেশে করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি নানা সংস্থা প্রিন্ট এবং ভিজ্যুয়াল নানা মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিচ্ছে। বিভিন্নভাবে তথ্য পরিবেশন করছে। কিন্তু সেসব তথ্যের পরিবেশনা সমাজের নানা স্তরে কার্যকরভাবে পৌঁছাচ্ছে কি না, সে বিষয়টি বোঝার জন্য আমরা একটি সংক্ষিপ্ত নৃবৈজ্ঞানিক গবেষণা করি। সঠিক তথ্য গুরুত্বপূর্ণ, কখনো কখনো তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের পরিবেশনা। করোনা বিষয়ে গণমাধ্যম এবং নানাবিধ উৎস থেকে যেসব তথ্য মানুষ অবগত হচ্ছে, সেগুলো তাদের কাছে কীভাবে অর্থময় হচ্ছে? কীভাবে বুঝছে তারা, এবং মানছে, অথবা মানছে না? তথ্য পরিবেশন যারা করছে, তারা কি এই বিপুল জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যগুলো মেনে তা করছে? এগুলোই ছিল আমাদের জিজ্ঞাস্য।

নৃবিজ্ঞান গুণগত গবেষণা করে, সংখ্যা বা শতকরা হার নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই; বরং বিশেষভাবে নির্বাচিত অল্পসংখ্যক মানুষের নিবিড় সাক্ষাৎকার এবং পর্যবেক্ষণ ব্যবহার করে এই শাস্ত্রে জ্ঞানের উৎপাদন হয়। বিদ্যমান লকডাউন পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের পক্ষে সরাসরি সাক্ষাৎকার কিংবা পর্যবেক্ষণে যাওয়া নিতান্ত অসম্ভব ছিল। ফলে অন্যান্য স্বীকৃত বিকল্প পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়েছে। এই গবেষণায় আমরা টেলিফোন সাক্ষাৎকার, মানুষের অনলাইন আচরণ পর্যবেক্ষণ এবং ছায়া পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করেছি। গ্রাম, জেলা শহর, ঢাকার নিম্নবর্গ এবং মধ্যবিত্ত থেকে নানা শ্রেণি-পেশার ৮২ জন স্ত্রী ও পুরুষের নিবিড় সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি। গবেষণাটি পরিচালিত হয় ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সহযোগিতায়।

চলমান পরিস্থিতিতে আমরা দেখতে পাই ‍ ‘বাড়িতে থাকা’, ‘সামাজিক দূরত্ব’, ‘কোয়ারেন্টিন’, ‘লকডাউন’ শব্দগুলো নিয়ে মানুষের ব্যাপক বিভ্রান্তি আছে। ধরা যাক ইংরেজি ‘স্টে অ্যাট হোম’ কথাটির আদলে নানা মাধ্যমে সবাইকে বলা হচ্ছে ‘আপনারা বাড়িতে থাকুন’। কিন্তু আমরা গবেষণায় পাচ্ছি ‘বাড়িতে থাকা’ কথাটির অর্থ একেক স্তরের মানুষের কাছে একেক রকম। যেমন গ্রামে বাড়ির একক শুধু একটি বাড়ি নয়, বরং কয়েক পরিবারের ঘর নিয়ে হয়ে থাকে একেকটি বাড়ি। ধরা যাক, কোনো গ্রামে সরকার বাড়ি মানে কেবল একটি বাড়ি নয়, কয়েকটি বাড়ির সমন্বয়। গ্রামের মানুষেরা অধিকাংশ জানিয়েছেন লকডাউন বলতে তাঁরা তাঁদের গতিবিধি মূলত পাড়াতে সীমাবদ্ধ রাখাকেই বুঝেছেন বা বুঝতে চেয়েছেন। কারণ, তাঁদের কাছে সীমানার একক পাড়া, তেমনি জেলা শহুরের কাছে সীমানার একক মহল্লা।

আবার বস্তি বা শহরের নিম্নবর্গীয় অঞ্চলের ক্ষেত্রে ‘বাড়ির’ ধারণাটি আরও জটিল। কারণ, একক করিডর, যে করিডরে আট-দশটি পরিবারের ঘর থাকে, অভিন্ন রান্নাঘর এবং গোসলখানাসমেত। শুধু ঢাকার মধ্যবিত্ত অঞ্চলের মানুষ বাড়িতে থাকা বলতে তাদের ফ্ল্যাটগুলোতে থাকা বুঝিয়েছেন। সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি, ‘বাড়িতে থাকা’ কথাটিকে ভিন্ন ভিন্ন স্থানের ভিন্ন ভিন্ন আর্থসামাজিক স্তরের মানুষ ভিন্নভাবে বুঝছেন। ভিন্নভাবে বোঝা ভিন্ন ভিন্ন আচরণ তৈরি করবে, এটাই স্বাভাবিক।

আবার দেখা যাচ্ছে, ‘সামাজিক দূরত্ব’ কথাটিরও কোনো কার্যকর অর্থ মানুষ করছে না। বস্তি এলাকার মানুষের কাছে ‘সামাজিক দূরত্ব’ প্রত্যয়টি রীতিমতো অবাস্তব। বস্তিবাসীরা জানিয়েছেন, যেখানে তাঁরা একটি ঘরে আট-দশজন মানুষ থাকেন, আট–দশটি পরিবার মিলে একটি রান্নাঘর ব্যবহার করেন, একটি টয়লেট ব্যবহার করেন, সেখানে কী করে ‘সামাজিক দূরত্ব’ রক্ষা করা সম্ভব, তাঁদের কাছে তা বোধগম্য নয়। গ্রাম বা জেলা শহরের অনেকে জানিয়েছেন, পরিচিত মানুষের সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা রীতিমতো অসৌজন্যমূলক; ফলে সেটি তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই করতে চান না বা করেন না। ঢাকার মধ্যবিত্তরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাকে একটা ‘দম বন্ধ করা অভিজ্ঞতা’ হিসেবে দেখেছেন।

‘কোয়ারেন্টিন’ ব্যাপারটিও অধিকাংশ মানুষের কাছে স্পষ্ট নয়। সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি, মহামারি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক যে পরিভাষাগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো স্থানীয় প্রেক্ষাপটে অন্য রকম অর্থ তৈরি করছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে ‘সামাজিক দূরত্ব’বিষয়ক নির্দেশনাকে অনেক মানুষ নেহাতই একটি সরকারি ঘোষণা হিসেবে বিবেচনা করছেন এবং এর সঙ্গে করোনা-আক্রান্ত হওয়ার কোনো ঝুঁকি আছে কি না, সেটি তাঁরা বুঝতে বা মানতে পারছেন না। আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মানুষ নানা রকম ছলছুতা চালাকি করে এসব নির্দেশনা এড়িয়ে যাচ্ছেন। কারণ, বার্তাগুলো তাদের বাস্তবতায় পালনীয় মনে হচ্ছে না। ঝুঁকির মাত্রাটা তারা বুঝতে পারছে না।

‘হাত ধোয়া’র নিয়মকানুন নিয়েও অধিকাংশ মানুষের মধ্যে সংশয় ও দ্বিধা আছে। মহামারির কারণে বিশেষ সতর্কতা হিসেবে হাত ধোয়ার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে মানুষ এবং আগের তুলনায় হাত ধোয়ার সময় সাবান ব্যবহারের পরিমাণও বাড়িয়েছে। গ্রামাঞ্চলে দেখা গেছে, টিউবওয়েলের সঙ্গে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সাবান ঝুলিয়ে রাখা আছে। কিন্তু হাত ধোয়ার বিশেষ পদ্ধতির ব্যাপারে কেউ ওয়াকিবহাল নয়। অনেকে ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়ার নির্দেশনাকে ও সময়কালকে নানাভাবে ভুল ব্যাখ্যা করেছে। কেউ বলেছে, সরকার থেকে ২০ মিনিট হাত ধুতে বলা হয়েছে, কেউ বলেছে দিনে ২০ বার হাত ধুতে বলা হয়েছে।

শত্রু আণুবীক্ষণিক। কিন্তু মানুষ দৃশ্যমান শত্রুদেরই মোকাবিলা করতে করতে ক্লান্ত। ফলে খালি চোখে দেখা যায় না এমন একটি জীবাণুকে বিভিন্ন মাধ্যমে যেভাবে গ্রাফিক্যালি পরিবেশন করা হয়েছে, তা–ও নানা রকম অর্থ তৈরি করছে। গ্রামের মানুষের ভেতর আণুবীক্ষণিক জীবাণুর ধারণা না থাকাটা আশ্চর্যের কিছু নয়। একটি ইউটিউব পোস্টে আমরা দেখতে পেয়েছি, করোনা কী জানতে চাইলে গ্রামের একজন বয়স্ক মানুষ বলছেন, তিনি টিভিতে দেখেছেন যে চাকতির মতো একটি জিনিস ঘুরতে ঘুরতে মানুষের দিকে ছুটে আসে এবং মানুষকে আঘাত করে হত্যা করে। টিভিতে প্রতিনিয়ত করোনাভাইরাসের মাইক্রোস্কোপিক ইমেজের যে বৃহদাকার গ্রাফিক দেখানো হয়, সেটিকে

সম্পর্কিত পোস্ট

দিল্লির ঘরে ঘরে জ্বর!

banglarmukh official

পাকিস্তানে ট্রেনে জিম্মি দেড় শতাধিক যাত্রী উদ্ধার, ২৭ সন্ত্রাসী নিহত

banglarmukh official

পাকিস্তানে যাত্রীবাহী ট্রেন হাইজ্যাক, জিম্মি শতাধিক

banglarmukh official

আইসিইউ থেকে পালালেন ‘কোমা’য় থাকা রোগী, হাসপাতালের ভয়ঙ্কর জালিয়াতি ফাঁস

banglarmukh official

গাজা দখলের যে কোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করতে হবে: তুরস্ক

banglarmukh official

মালয়েশিয়ায় বিনোদন কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশিসহ আটক ৮০

banglarmukh official