মহানগরী ‘কোভিড-১৯’এর অনেকটাই হটস্পট হয়ে উঠছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমনে দক্ষিণাঞ্চলে পরিস্থিতিও ক্রমশ উদ্বেগজনক পর্যায়ে। ইতোমধ্যে বরিশাল মহানগরীতে আক্রান্তের সংখ্যা দেড়শতে পৌছেছে। এর মধ্যে মহানগর পুলিশ সদস্যই প্রায় ৪৫। তবে বরিশাল বিভাগে মোট আক্রান্ত ৪৫৮’র মধ্যে ইতোমধ্যে ১৩৪ জন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছে বলে জানা গেছে। গত এক সপ্তাহে দক্ষিণাঞ্চলে নতুন করে ১২৬ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ সময়ে কোভিড-১৯ উপসর্গ নিয়ে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ভোলার লালমোহনে মারা গেছে ৩ জন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ’তে মারা যাওয়া পুলিশ কনেস্টবলের রক্তের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল এখনো পাওয়া যায়নি। দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলায় কোভিড-১৯ সনাক্ত সাড়ে ৪শ রোগীর মধ্যে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত ১৪৭ জনের মধ্যে ২৬ জন মারা গেছেন। যাদের ৩ জনের রক্ত পরীক্ষার ফল এখনো পাওয়া যায়নি। অপরদিকে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত ৫৭ জনের মধ্যে মারা গেছেন ৩ জন। গত ২৪ ঘন্টায় বরগুনাতে আরো দুজন কোভিড-১৯ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। এ নিয়ে জেলাটিতে আক্রান্ত ৫৪ রোগীর মধ্যে ৩০ জন সুস্থ হয়েছেন বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে। তবে গত ১০ মে লক ডাউন শিথিল করার পর থেকে ২৯ মে পর্যন্ত কুড়ি দিনে দক্ষিণাঞ্চলে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৩০৯। অথচ গত ১০ মার্চ থেকে ১০ মে পর্যন্ত ষাট দিনে মোট আক্রান্ত ছিল ১৪৯। গত এক সপ্তাহে বরিশাল জেলায় মোট আক্রান্ত ১৩৭ থেকে ২০৮, ভোলাতে ১৮ থেকে ৪২, পিরোজপুরে ৫৩ থেকে ৬৩, ঝালকাঠীতে ৩৪ থেকে ৪৪, বরগুনাতে ৪৯ থেকে ৫৪, ও পটুয়াখালীতে ৪১ থেকে ৪৭-এ উন্নীত হয়েছে। শুক্রবার দুপুরের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণাঞ্চলে নতুন করে আরো ২৬ জন আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে বরিশাল জেলাতেই ১৪, ভোলাতে ৯ এবং পটুয়াখালীতে ৩ জন নতুন কোভিড-১৯ রোগী সনাক্ত হয়েছে। তবে এর আগেরদিন দক্ষিণাঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৪ ঘন্টায় সর্বাধিক, ২৭ জন। শুক্রবার বরিশালে আক্রান্তদের মধ্যেও সিংহভাগই পুলিশ সদস্য। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে দেড়মাস আগে নারায়নগঞ্জ থেকে চোরাই পথে আসা কর্মজীবী ও শ্রমজীবীদের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রথম করোনা সংক্রমন শুরু হয়। ১০ মে লকডাউন শিথিল করার পরে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। আর ঈদের তিনদিন আগে ঢাকা ও সন্নিহিত এলাকার জন¯্রােতে দক্ষিণাঞ্চলে করোনা সংক্রমন আরো বড় ঝুকি সৃষ্টি করেছে। ফলে আগামী দিন পনের দক্ষিণাঞ্চলে করোনা সংক্রমন কোন পর্যায়ে যাবে তা নিয়ে শংকিত চিকিৎসকগনও। দক্ষিণাঞ্চলের সরকারী হাসপাতালগুলোতে এ পর্যন্ত ১৫৩ জন কোভিড-১৯ রোগী ভর্তি হয়েছেন। সরকারী হাসপাতালের আইসোলেশন-অবজার্ভেশন ওয়ার্ডগুলোতে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত মোট ভর্তিকৃত ৫২৬ জন রোগীর মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন ২৮৫ জন। গত ২৪ ঘন্টায় শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ও করোনা ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত ৩ জন রোগীর রক্তের নমুনা পরীক্ষায় দুজনের কোভিড-১৯ সনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে হাসপাতালটির উল্লেখিত দুটি ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত ১৯৭ রোগীর রক্তের নমুনা পরিক্ষায় ৫৪ জনের কোভিড-১৯ সনাক্ত হল। আর নেগেটিভ ফল এসেছে ১৪৩ জনের। শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত ৫৭ জনের মধ্যে ২৬ জন সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন। তবে শুক্রবার রেকর্ড সংখ্যক ২৩ জন রোগী হাসপাতালটির করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিল।