এপ্রিল ২৮, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
আন্তর্জাতিক

নিউ ইয়র্কে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ, আটক দুই শতাধিক

করোনাভাইরাসের ধকল এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যেই গোটা আমেরিকা যেন হয়ে উঠেছে রণক্ষেত্র। মিনেসোটার মিনিয়াপোলিসে পুলিশ সদস্যের হাতে জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গের হত্যার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রতিবাদকারীরা প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তায় জড়ো হলেও, পরে তা উত্তাল হয়ে ওঠে। একসময় ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। বিভিন্ন স্টেটে কারফিউ দিয়েও তা ঠেকানো যাচ্ছে না।

নিউইয়র্কে গত কয়েকদিন দফায় দফায় সহিংসতা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার দিবাগত রাত থেকে কারফিউ জারি করা হয়। কিন্তু এরপরও নজিরবিহীন লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ দমানো যায়নি।

নিউইয়র্কে ১ জুন রাতে কারফিউ ভঙ্গ করেই ম্যানহাটনে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ হয়েছে। রেডিও স্টেশন টেন টেন উইন্সের খবরে বলা হয়েছে, জর্জ ফ্লয়েডের বিচারের দাবিতে সোমবার রাতেও বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় ছিল। এ সময় পুলিশের সাথে বাকবিতণ্ডা, সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ এবং গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে।

নিউইয়র্কে পর পর চারদিন সহিংসতার পর পঞ্চম রাতে কারফিউ জারি করেন গভর্নর এন্ড্রু কুওমো এবং সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। রাত ১১টা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত কারফিউ দেয়া হলেও, ম্যানহাটনসহ কয়েকটি এলাকায় বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে পড়ে।

এ সময় ম্যানহাটনের হেরাল্ড স্কয়ারে মেসিস স্টোর ও আশপাশে কয়েকটি দোকানে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। ম্যানহাটনে ৬০ স্ট্রিট থেকে ডাউন টাউনের দিকে অর্ধশতাধিক দোকানে ভাঙচুর ও লুটতরাজ চলেছে। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে পুলিশকে মেসিস থেকে কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দুই শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করার কথা জানা গেছে। পরের দিকে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

এর আগের দিন ৩১ মে রাতেও নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্টেটে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। আন্দোলনের সুযোগে নগর কেন্দ্র থেকে শুরু করে আবাসিক এলাকায় পর্যন্ত হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ওই রাতে কেবল নিউইয়র্কে চার শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এক ডজনের বেশি দোকানপাটে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে।

গভর্নর এন্ড্রু কুমো জানিয়েছেন, রাতে চার থেকে দ্বিগুণ করে শহরে আট হাজার পুলিশের টহল নিশ্চিত করা হয়েছে। অনেক বাংলাদেশি পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, তাদের ডিউটি আট ঘন্টার জায়গায় ১২ ঘন্টার শিফট করে করা হয়েছে। এই খবরটি নিশ্চিত করে নিউইয়র্ক পোস্ট বলেছে, এনওয়াইপিডির পক্ষ থেকে নির্দেশনায় যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি হিসেবে পাঁচটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টার শিফট করা হয়েছে।

এদিকে নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাজিও রাতভর শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়িয়েছেন। তিনি মধ্য রাতে একটি টুইটে লিখেছেন, এইমাত্র বার্কলে সেন্টার থেকে এলাম। সেখানকার পরিস্থিতি বেশ শান্ত। এখন মিডটাউনে যাচ্ছি। বিক্ষোভকারীরা অনেক বেশি শান্ত আজ। পুলিশও তাদের কথা বলার অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাচ্ছে। কিন্তু কিছু লোকের আজও বিশৃঙ্খলা পাকানো, চুরি, ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ছাড়া কোন কাজ নেই। আমরা এটা হতে দেবো না। এরপর তিনি ব্রঙ্কসে যান। সেখানকার ফোর্ডহাম রোডে সমস্যা হচ্ছে উল্লেখ করে, অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানোর কথা বলেন।

এদিকে নিউইয়র্কে পঞ্চম দিনের মতো প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। এসব সমাবেশে যুব তরুণ, কৃষ্ণাঙ্গসহ সব বর্ণের লোকজনের অংশগ্রহণ দেখা যায়। বিপুলসংখ্যক শ্বেতাঙ্গকেও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে দেখা যায়। আমেরিকায় সামাজিক অসাম্য, বর্ণে বর্ণে অসাম্যের, অর্থনৈতিক অসাম্যের বিরুদ্ধে স্লোগান আর বক্তৃতা হয়েছে দিনভর।
শান্তিপূর্ণ কোনো সমাবেশেই পুলিশ বাধা দেয়নি। বরং বিভিন্ন স্থানে পুলিশ হাঁটু গেড়ে বসে আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের প্রতি সংহতি জানিয়েছে। নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সংগঠকেরা আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণ রাখার চেষ্টা করলেও স্থানে স্থানে তা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। সুযোগ বুঝে অপরাধী চক্র সক্রিয় হয়ে পড়েছে। এরাই লুটপাটে যোগ দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বন্ধ দোকান ভেঙে নিউইয়র্কসহ গোটা দেশে লুটপাট ও সহিংসতার ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।

জানা গেছে, নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান তেমন ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েনি। তবে সোমবার রাতে জ্যামাইকার ১৬৪ স্ট্রিটের একটি বাসার সামনে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ময়লার বিনে আগুণ ধরিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশিরা একে অপরকে সাবধানে ও নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে সমর্থণ থাকলেও, এমন সহিংসতায় অনেকে সমালোচনামুখর হয়েছেন।
এদিকে মিনেসোটায় বাংলাদেশি রুহেল ইসলামের মালিকানাধীন গান্ধী মহল রেস্টুরেন্ট পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও ব্যাপকভাবে উঠে এসেছে। অন্যদিকে পেন্সিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়া শহরে বাংলাদেশিরা ব্যাপক লুটপাট ও ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। এই শহরে কয়েক শ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করে লুটপাট চালানো হয়েছে। তার মধ্যে অন্তত ৩৫টি বাংলাদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।

শহরটির আপার ডারবি টাউনশিপের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাউন্সিলম্যান শেখ সিদ্দিক জানিয়েছেন, এলাকায় অনেক চেইন স্টোরসহ বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর ও লুট করা হয়েছে। তারা ঐসব এলাকা পরিদর্শন করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষতিপূরণ আদায়ের কৌশল নিয়ে কাজ করছি আমরা। সেই সাথে অনির্দিষ্টকালের জন্যে শহরে কারফিউ জারি থাকবে।

এদিকে বিক্ষোভ থামাতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশজুড়ে সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দিয়ে কঠোরভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

দিল্লির ঘরে ঘরে জ্বর!

banglarmukh official

পাকিস্তানে ট্রেনে জিম্মি দেড় শতাধিক যাত্রী উদ্ধার, ২৭ সন্ত্রাসী নিহত

banglarmukh official

পাকিস্তানে যাত্রীবাহী ট্রেন হাইজ্যাক, জিম্মি শতাধিক

banglarmukh official

আইসিইউ থেকে পালালেন ‘কোমা’য় থাকা রোগী, হাসপাতালের ভয়ঙ্কর জালিয়াতি ফাঁস

banglarmukh official

গাজা দখলের যে কোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করতে হবে: তুরস্ক

banglarmukh official

মালয়েশিয়ায় বিনোদন কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশিসহ আটক ৮০

banglarmukh official