এপ্রিল ২৯, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
করোনা

করোনাকালের দায়িত্বশীলতা

গত এপ্রিলে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই বেশকিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেয় সরকার। এজন্য বিশ্বের জনপ্রিয় ফোর্বস ম্যাগাজিনে করোনা মোকাবিলায় সফল নারী নেতৃত্বের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে বলা হয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বাংলাদেশে, তা এখনো কার্যকর করতে পারেনি যুক্তরাজ্য। করোনা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে অংশগ্রহণ এবং ফান্ড সৃষ্টিতে ভূমিকার জন্য বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশে করোনায় মৃতের হার মাত্র ১.৩ শতাংশ; যা অন্য দেশের তুলনায় অনেক কম; সেজন্যও করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহির্বিশ্বে প্রশংসিত।

করোনার প্রভাব কমাতে মার্চের শেষের দিক থেকে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব অফিস বন্ধ হয়ে গেলেও যেন কাজ বেড়ে যায় বাংলাদেশ পুলিশসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দফতরসমূহের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জাতীয় দুর্যোগে অগ্রণী ভূমিকা পালনে সামনের সারিতে কাজ শুরু করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন করোনা মোকাবিলায় ডাক্তার-নার্সের সঙ্গে সম্মুখে কাজ করে যাচ্ছেন পুলিশ, আনসার এবং প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন সাংবাদিকরা। মহামারী ও দুর্যোগের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সম্ভাবনাই থাকে বেশি। এ সময়টাতে দেশের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

এ দায়িত্ব পালনে সময়োপযোগী নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি এই সময়ে পোশাক-শিল্পের কিছু অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সামাল দেওয়া, করোনাকালে সাধারণ ছুটিসংক্রান্ত শীর্ষ কর্মকর্তাদের সভায় সভাপতিত্ব করা, ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিভিন্ন সিদ্ধান্তে মাননীয় ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর (প্রয়াত) সঙ্গে পরামর্শ করা, পাটকলের মিটিংসহ বিভিন্ন ইস্যুর সমাধান ও করোনার সময়ে উদ্ভূত অন্য ঘটনার সামাল দিয়ে যাচ্ছেন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। শুরুতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ও সুরক্ষা সেবা বিভাগে দুটি ‘করোনা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা সহযোগিতা সেল’ সৃষ্টির নির্দেশনা দেন। এ সেল করোনাসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবকে অবহিত করে; যার ভিত্তিতে পরবর্তী কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান-সমূহকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। করোনার সুযোগ নিয়ে প্রায় মূলোৎপাটিত জঙ্গিরা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে; পাকিস্তানের স্টক এক্সচেঞ্জে কিন্তু এ সুযোগটি তারা নিয়েছে। সে বিষয়টি নিয়েও মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, পুলিশপ্রধান ও ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নিয়ে ইতোমধ্যে কোর কমিটির বেশ কয়েকটি সভা করে যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে তিনি সব ধর্মের গুরুদের সাহায্য নিয়েছেন। বাংলাদেশের সংবিধানে প্রণীত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় তাঁর অনন্য অবদান রয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে তিনি সব ধর্মগুরুকে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জনসভা করেছেন। সবই করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। তবে তাঁর একাগ্রতা, দক্ষতা ও আধুনিক মানসিকতার কারণেই তিনি জঙ্গি দমনে সফল হয়েছিলেন
বলা যায়, জঙ্গিবাদ নির্মূলে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। তা নির্মূলে আসাদুজ্জামান খান কামালের কূটনৈতিক অভিজ্ঞতাও বিরাট ভূমিকা রেখেছে। ভারত, চীন, মিয়ানমার, তুরস্কের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সভা এবং জাতিসংঘে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কূটনৈতিক তৎপরতা এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার। করোনার সময়ে পুলিশকে নতুন করে জানতে পেরেছে দেশের মানুষ। ১৯৭৫ সালে প্রথম পুলিশ সপ্তাহ উদ্যাপনকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজারবাগ প্যারেড গ্রাউন্ডে পুলিশকে জনগণের সেবক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন ‘মানবিক’ পুলিশ হতে।
সাধারণ ছুটির মধ্যে পুলিশের কোনো ছুটি ছিল না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দিনরাত কাজ করে চলেছে তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাই নয়, কাজ করেছে সব শ্রেণির মানুষের জন্য। কর্মহীনদের মাঝে খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দেওয়া, মানুষকে ঘরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করা, লকডাউন কার্যকরের পাশাপাশি করোনায় মৃতদের স্বজন যেখানে পালিয়ে যায় তাদের দাফন/সৎকার করা পর্যন্ত সবকিছু করছে পুলিশ। এসব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত পুলিশের প্রায় ১২ হাজার সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৪৪ জনের মতো শহীদ হয়েছেন। শহীদ হয়েছেন র‌্যাব ও আনসারেরও বেশ কজন সদস্য। দেশের মানুষ আজ পুলিশের প্রশংসা করে বলছে, ‘মানবিক পুলিশ’। অবশ্য গত এক যুগে পুলিশের ব্যাপক পরিবর্তনে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের অবদান অনস্বীকার্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তিনি আরেকটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকারের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৮৮৪ জন গুরুতর অপরাধে বন্দী নন এমন কারাবন্দীকে মুক্তি দিয়ে। এতে উপচে পড়া কারাবন্দী যেমন কমেছে, তেমন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কিছুটা লাঘব হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ কাজটি দেশবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে।

করোনার এ সময়টাতে মানুষের হাতের মাধ্যমে জীবাণু দেহে প্রবেশের সম্ভাবনা বেশি। সাধারণ ছুটিতে নতুন পাসপোর্ট তৈরির কাজও বন্ধ থাকে কিছুদিন; কারণ নতুন পাসপোর্ট তৈরিতে পাসপোর্ট-হোল্ডারের আঙ্গুলের ছাপ প্রয়োজন হয়। এ পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালককে ডেকে নির্দেশনা দেন যেন একজন লোকও পাসপোর্টের কারণে বিদেশের মাটিতে সমস্যায় না পড়ে। অবশ্য পাসপোর্ট নিয়ে আগে থেকেই একটি গুজব ছিল, বিদেশ থেকে এমআরপির অভাবে লাখ লাখ মানুষ দেশে ফিরে আসবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে এ বিষয়টি দেখভাল করেছেন বলে একজন প্রবাসীকেও পাসপোর্টের কারণে দেশে ফিরে আসতে তো হয়ইনি বরং দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে।

মন্ত্রী প্রায় প্রতিদিন অফিস করছেন। বাসা থেকে জুম অ্যাপস/ভিডিও কনফারেন্স করে যাচ্ছেন। ফলে সচল থাকছে মন্ত্রণালয়, পুলিশ প্রশাসন। বর্তমানে সব প্রচেষ্টাই হচ্ছে করোনা প্রতিরোধের জন্য। করোনা নিশ্চিহ্নে চিকিৎসক, পুলিশ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী সর্বোপরি জনগণের সম্পৃক্ততায় একদিন আঁধার ভেঙে নতুন আলোয় প্লাবিত হবে পৃথিবী। করোনামুক্ত হবে আমাদের এ ধরণি।

লেখক : তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

 

সম্পর্কিত পোস্ট

করোনা: বিশ্বজুড়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে

banglarmukh official

বিশ্বে একদিনে করোনা শনাক্ত প্রায় ৫ লাখ, মৃত্যু ১১৫২

banglarmukh official

করোনায় মৃত্যুশূন্য দিনে শনাক্ত ২৯৯, হার ১৩.৬০ শতাংশ

banglarmukh official

করোনায় আরও ৪৫৪ মৃত্যু, শনাক্ত আড়াই লাখের নিচে

banglarmukh official

বিশ্বে করোনায় একদিনে ১১৮৯ মৃত্যু, শনাক্ত ৪ লাখ ৩২ হাজার

banglarmukh official

বিশ্বে করোনায় আরও ১১৭০ মৃত্যু, শনাক্ত সোয়া চার লাখ

banglarmukh official