এপ্রিল ২৬, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
অপরাধ প্রচ্ছদ বরিশাল

চোখের সামনে স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করতে দেখেছি

“গলায় রাম দা ধইরা মোর চোখের সামনে বসে নৃশংসভাবে ওই সন্ত্রাসীরা মোর বৃদ্ধ স্বামীরে কোপাইয়া মারছে। হেই সন্ত্রাসীরাই এ্যাহন মামলা উঠানোর জন্য মোগো মারার হুমকি দিতেছে। মুই মোর স্বামীর খুনিগো ফাঁসি দেইখা মরতে চাই। এইজন্য মোরা প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চাই”। আবেগ আপ্লুত হয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন, জেলার মুলাদী উপজেলার প্রত্যন্ত বাটামারা ইউনিয়নের টুমচর গ্রামের বিধবা সিরিয়া বেগম (৫০)।
সূত্রমতে, আধিপত্য বিস্তারের জন্য ওই এলাকার বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতা ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন থেকে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছে। সন্ত্রাসীদের একের পর এক হামলা, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, লুটপাট, পরিকল্পিত হত্যাকান্ড, অপহরণসহ মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানীর কারণে ওই এলাকার যুবক ও কিশোররা গ্রাম ছেড়ে দেশের বিভিন্নস্থানে আশ্রয় নিয়েছে। সন্ত্রাসীদের হাতে ইজ্জত হারানোর ভয়ে গ্রামের যুবতীরাও অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। প্রায় প্রতিদিন রাতে সন্ত্রাসীরা ওই এলাকায় ব্যাপক বোমার বিস্ফোরন ঘটিয়ে এলাকায় আতংক সৃষ্টি করেছে। এরপূর্বে গত ৩১ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীরা ৬৫ বছরের বৃদ্ধ আকবর হাওলাদারকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় পুরো জেলাজুড়ে বিএনপি নেতাসহ অন্যান্য খুনীদের ছবিসহ ফাঁসির দাবিতে ব্যাপক পোস্টারিং করা হলেও টনক নড়েনি পুলিশ প্রশাসনের।
সূত্রে আরও জানা গেছে, হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত প্রধান আসামিদের গ্রেফতার না করে উল্টো রহস্যজনক কারণে আসামিদের পক্ষালম্বন করে থানা পুলিশ স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ একাধিক ব্যক্তিকে আটক করেছে। পরবর্তীতে হত্যা মামলার আসামিদের দিয়ে পুলিশ একাধিক মিথ্যে মামলা দায়ের করিয়ে ওইসব মামলায় আটককৃতদের এজাহারভূক্ত আসামি দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করে। সেইসব মিথ্যে মামলায় এখনও কারাভোগ করছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ একাধিক নিরিহ গ্রামবাসী।
সরেজমিনে টুমচর গ্রামের বাসিন্দা হাজ্বী দুলাল মাতুব্বর, মনির বেপারী, মোকসেদ তালুকদার, আলী হোসেনসহ একাধিক বক্তিরা জানান, একই গ্রামের বাসিন্দা বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপির প্রভাবশালী নেতা মজিবুর রহমান দুলাল ও তার ভাতিজা তারিকুল হাসান পলাশ দীর্ঘদিন থেকে সন্ত্রাসী বাহিনী গঠনের মাধ্যমে এলাকার একক আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। তাদের সহযোগী সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে সবধরনের অপকর্ম করে আসলেও মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে দেয়ার ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না। তারা থানা পুলিশের সাথে আতাত করে নিরবে নিরিহ গ্রামবাসীর কাছ থেকে চাঁদাবাজি, প্রকাশ্যে বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে গবাদি পশুসহ মূল্যবান মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় আব্বাস বেপারী জানান, একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য তারা ৭/৮জন যুবক ঢাকা থেকে গত ৩১ ডিসেম্বর বাড়িতে আসেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসীরা থানা পুলিশের মাধ্যমে তাকে (আব্বাস বেপারী)সহ স্থানীয় ইউপি সদস্য আলমগীর হাওলাদার, মনির বেপারী ও হাজী দুলাল মাতুব্বরকে কোন মামলা ছাড়াই আটক করে থানায় নিয়ে যায়। ওইদিন গভীর রাতে পরিকল্পিতভাবে এলাকায় আতংক সৃষ্টির জন্য সন্ত্রাসীরা ৬৫ বছরের বৃদ্ধ আকবর হাওলাদারের বাড়িতে একাধিক বোমার বিস্ফোরন ঘটিয়ে তার বসত ঘর ভেঙ্গে প্রবেশ করে ধারালো অস্ত্রদিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে তাকে (আকবর হাওলাদার) নৃশংসভাবে হত্যা করে।
একইদিন রাতে সন্ত্রাসীরা মনির বেপারী, দুলাল মাতুব্বর, সালাম মাতুব্বর, মোকসেদ তালুকদার, আলমগীর হাওলাদার, রাজ্জাক হাওলাদার, আলী হোসেন হাওলাদারের বসত ঘর ও একটি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে ব্যাপক লুটপাট করে। আব্বাস বেপারী আরও জানান, পরেরদিন (১ জানুয়ারি) প্রভাবশালী সন্ত্রাসীদের এক সহযোগীর দায়ের করা একটি সাজানো মিথ্যে মামলায় তাদের (আটককৃত) চারজনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহত আকবর হাওলাদারের স্ত্রী সিরিয়া বেগম ও মেয়ে সুমা বেগম নৃশংস হত্যাকান্ডের বর্ণনা করতে গিয়ে বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। বিলাপ করে বলেন, দুলাল উকিলের ভাতিজা তারিকুল হাসান পলাশের নেতৃত্বে ৩০/৩৫জন সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আমাদের চোখের সামনে বসেই কুপিয়ে (আকবর হাওলাদারকে) হত্যা করেছে। নিহতের স্ত্রী সিরিয়া বেগম অভিযোগ করেন, স্থানীয় গ্রামপুলিশ মন্টু চৌকিদার নিহত আকবর হাওলাদারের লাশ গুম করার জন্য একাধিকবার চেষ্ঠা চালিয়েছে। কিন্তু তিনি (সিরিয়া) তার মৃত স্বামীর পায়ের সাথে নিজের পরিহিত কাপরের একাংশ দিয়ে বেঁধে রাখার কারণে লাশ গুম করতে পারেনি।
নিহতের পুত্র ও মামলার বাদি দিদার হাওলাদার জানান, খবর পেয়ে তিনি ঢাকা থেকে বাড়িতে ফিরে গত ৩ জানুয়ারি বিএনপি নেতা মজিবুর রহমান দুলাল, তারিকুল হাসান পলাশসহ ২১জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১০/১২জনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়েরের জন্য এজাহার দাখিল করেন। রহস্যজনক কারণে থানা পুলিশ একটি সাদা কাগজে তার স্বাক্ষর নিয়ে মামলার প্রধান সাত আসামির নাম বাদ দিয়ে এজাহারভূক্ত করেন।
তিনি আরও জানান, থানা পুলিশ মামলার প্রধান আসামিদের নাম বাদ দেয়ায় তিনি পূর্ণরায় ওইসব আসামিদের নাম অর্ন্তভূক্ত করে আদালতে মামলা দায়েরের জন্য আবেদন করেছেন। তিনি (দিদার) অভিযোগ করেন, এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যা মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য আসামি ও তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা তাকেসহ পরিবারের সদস্যদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি অব্যাহত রেখেছে। সন্ত্রাসীদের অব্যাহত হুমকির মুখে তারা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতা ভূগছেন।
ভূক্তভোগী এলাকাবাসী সঠিক তদন্তের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর আকবর হাওলাদারের প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেফতারপূর্বক ফাঁসির দাবি ও এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

সাতলায় বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে আ’লীগ নেতা মিজানকে অর্থের বিনিময়ে দলীয় সনদপত্র প্রদান করার অভিযোগ

banglarmukh official

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রাম পুলিশের বসত ঘরে ভাংচুর

banglarmukh official

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ উপহার দিলো ছাত্রদল

banglarmukh official

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায়

banglarmukh official