এপ্রিল ২৮, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
করোনা

দেশে করোনায় মারা যাওয়া ৬৬ শতাংশেরই কো-মরবিডিটি ছিল

ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কিডনির জটিলতাসহ অন্যান্য কো-মরবিডিটি (সহরোগ) রয়েছে এমন কভিড-১৯ রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। শুরু থেকেই এ সতর্কবার্তা দিয়ে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের এ আশঙ্কার সত্যতা মিলেছে দেশে গত দেড় মাসে করোনায় মৃতদের তথ্য বিশ্লেষণে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কভিড-১৯ সম্পর্কিত টেলিহেলথ সেন্টারের এক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে গত দেড় মাসে কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গিয়েছে, তাদের ৬৬ শতাংশেরই ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপের মতো কো-মরবিডিটি ছিল। গত ১৫ জুলাই থেকে ৩০ আগস্ট ৪৫ দিনের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

এ সময়ে মারা যাওয়া ৮৪৫ জনের কো-মরবিডিটি স্ট্যাটাস বিশ্লেষণ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এ বিশ্লেষণ করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করেছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ছাড়াও রয়েছে কেবিনেট ডিভিশন, আইসিটি ডিভিশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে পরিচালিত অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস (বেসিস), ইউনাইটেড ন্যাশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) ও সিনেসিস আইটি।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ডায়াবেটিসের জটিলতায় ভুগছিল ৩৮ শতাংশ। ২৮ শতাংশ রোগীর মধ্যে উচ্চরক্তচাপের সমস্যা ছিল। এরপর তৃতীয় সর্বোচ্চ হার্টের রোগে ভুগছিল ১১ শতাংশ। এছাড়া ৮ শতাংশ কিডনি রোগে, ৩ শতাংশ করে স্ট্রোক ও অ্যাজমা রোগের জটিলতায় ভুগে মারা গেছে। ৯ শতাংশ মৃত্যুবরণকারীর মধ্যে অন্যান্য রোগের লক্ষণ ছিল।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখতে পেয়েছি, কো-মরবিডিটি একটা পারসেন্টেজ সব সময় ছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কভিডে যাদের মৃত্যু হয় তাদের কো-মরবিডিটি থাকে। যাদের বয়স হয়েছে, হাইপারটেনশন কিংবা অ্যাজমায় আক্রান্ত তাদের সমস্যাগুলো বেশি দেখা গিয়েছে। আমরা সব সময় এই বিষয়টা নিয়ে সচেতন করতে চেষ্টা করেছি। মিডিয়ার মাধ্যমে জানিয়েছি, যাদের কো-মরবিডিটি আছে তারা কভিড আক্রান্ত হলে যেন হাসপাতালে আসে। তারা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিলে কিছুটা ঝুঁকি থাকে, এ কথা আমরা সব সময় বলেছি।

গত ১৫ জুলাই থেকে ৩০ আগস্ট—এই ৪৫ দিনে দেশে করোনায় মারা গেছে ১ হাজার ৯৫৭ জন। এর মধ্যে যে ৮৪৫ জনের কো-মরবিডিটি স্ট্যাটাস বিশ্লেষণ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সত্তরোর্ধ্ব বয়সী রোগী ছিল ২২ শতাংশ। ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে রোগী ছিল ২৭ শতাংশ। ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে বয়স এমন রোগীর সংখ্যা ছিল ৩০ শতাংশ। এছাড়া শূন্য থেকে ৪০ বছরের মধ্যে রোগী ছিল ১০ শতাংশের নিচে।

প্রতিবেদনে এ সময়ে কভিড আক্রান্ত ৭৯ হাজার ১৫০ জন রোগীর তথ্যও পর্যালোচনা করা হয়েছে। সেখানে বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে রোগের তীব্রতার তিনটি স্তর নির্ধারণ করা হয়েছে। কভিড আক্রান্তের ক্ষেত্রে গুরুতর, সহনীয় বা মাঝারি এবং হালকা এ তিন স্তরের অসুস্থতার তীব্রতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আক্রান্ত রোগীদের বিশ্লেষণ বলছে, ৪১ থেকে ৬০ বছর বয়সী রোগীদের মধ্যে গুরুতর ও সহনীয় ক্যাটাগরির রোগী সবচেয়ে বেশি। এই বয়সীদের ৫৬ শতাংশ রোগীই তীব্রতার দিক থেকে সহনীয় পর্যায়ে আক্রান্ত। একই বয়সের ৩৮ শতাংশ রোগী গুরুতরভাবে কভিডে আক্রান্ত হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

২১-৪০ বছরের রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অসুস্থতার তীব্রতা বিবেচনায় এ বয়সের রোগীদের মধ্যে হালকা সংক্রমণের রেকর্ড বেশি। তরুণ বয়সের এই রোগীদের ৫৫ শতাংশই হালকা সংক্রমণে ভুগেছে। তবে এই বয়সী রোগীদের মধ্যে সহনীয় বা মাঝারি এবং গুরুতর অসুস্থতার হার ২০ শতাংশের ওপরে। এছাড়া ৬১ থেকে ৮০ এবং আশির ওপরে বয়স এমন রোগীদের মধ্যে হালকা ও মাঝারি অসুস্থতার হার ১০ শতাংশের ওপরে নয়। বয়সে বেশি এ রোগীদের অধিকাংশই গুরুতর অসুস্থতাকে সঙ্গী করে কভিড পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. শাহজাদা সেলিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ডায়াবেটিসের ব্যাপারে কভিড সংক্রমণের শুরু থেকেই উদ্বেগ ছিল। এজন্য বাংলাদেশ অ্যান্ডোক্রাইনোলজি সোসাইটির পক্ষ থেকে কভিডকালে গাইডলাইন তৈরি করা হয়। তবে সেটা খুব একটা কাজে আসেনি বলে মনে করেন এ বিশেষজ্ঞ।

তিনি আরো বলেন, পরিস্থিতি এমন দেখা গিয়েছে যে অধিকাংশ ডায়াবেটিস রোগী কভিড সংক্রমণের পর গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়েছে। অন্য রোগীদের তুলনায় তাদের চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে অবস্থানও করতে হয়েছে বেশি দিন। এছাড়া আইসিইউতে যাওয়া রোগীদের মধ্যেও ডায়াবেটিসের রোগী বেশি ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। কভিড দ্রুতই শেষ না হওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়ে ডায়াবেটিসে ভুগছে এমন রোগীদের আরো সতর্ক থেকে জীবনযাপন করার পরামর্শ দিয়েছেন এ বিশেষজ্ঞ।

উল্লেখ্য, গত বছরের শেষ দিকে চীনের উহান শহরে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাংলাদেশে শুরু হয় এ বছরের ৮ মার্চ। এর দশদিন পর দেশে প্রথম কোনো রোগী মৃত্যুবরণ করে। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে মারা গেছে ৪ হাজার ৩৫১ জন। কভিড সংক্রমণের শুরুতে চিকিৎসা নিয়ে নানান জটিলতা তৈরি হলেও সেই পরিস্থিতি এখন অনেকটা কেটে গেছে। এর মধ্যে দেশের ৬৪ জেলায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্ত হয়েছে মোট ৩ লাখ ১৭ হাজার ৫২৮ জন। এ পর্যন্ত যারা মৃত্যুবরণ করেছে তাদের মধ্যে পুুরুষ ৭৮ দশমিক ৩৩ ও নারী ২১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। কভিডে বেশি মৃত্যু হয়েছে ষাটোর্ধ্ব ৪৯ দশমিক ৬০ শতাংশ।

সম্পর্কিত পোস্ট

করোনা: বিশ্বজুড়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে

banglarmukh official

বিশ্বে একদিনে করোনা শনাক্ত প্রায় ৫ লাখ, মৃত্যু ১১৫২

banglarmukh official

করোনায় মৃত্যুশূন্য দিনে শনাক্ত ২৯৯, হার ১৩.৬০ শতাংশ

banglarmukh official

করোনায় আরও ৪৫৪ মৃত্যু, শনাক্ত আড়াই লাখের নিচে

banglarmukh official

বিশ্বে করোনায় একদিনে ১১৮৯ মৃত্যু, শনাক্ত ৪ লাখ ৩২ হাজার

banglarmukh official

বিশ্বে করোনায় আরও ১১৭০ মৃত্যু, শনাক্ত সোয়া চার লাখ

banglarmukh official