শেখ সুমন :
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় খাদিজা আক্তার নামে নয় মাসের অন্তঃসত্বা এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই সাথে তার গর্ভে থাকা সন্তানটিরও মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে হাসপাতালের পঞ্চম তলার গাইনি ওটিতে ওই রোগীর মৃত্যু হয়। এসময় রোগীর ক্ষুব্ধ স্বজনরা ওটির প্রবেশদ্বার ভাঙচুর করলে রোগীর স্বজন ও ইন্টার্নি চিকিৎসকের সাথে মারামারি হয়।
মৃত খাদিজা আক্তারের স্বামী পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানায় কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ শাকিল বলেন, ‘আগামী ২৬ মার্চ আমার স্ত্রীর ডেলিভারির তারিখ ছিল। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ভোলা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকদের কাছে একটি ইনজেকশন না থাকায় খাদিজাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুপুর ১২টার দিকে ভর্তি করা হয়। ওই সময় থেকেই খাদিজা গুরুতর অসুস্থ থাকায় আমি একাধিকবার চিকিৎসকদের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানাই। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত ও প্রয়োজনীয় ওষুধ জোগাড় করে রাখি। বিকাল ৩টায় থেকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার কথা বললেও তা নেয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যা ৬টার দিকে খাদিজাকে অপারেশন থিয়েটারে নিতে বলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু সেখানে গিয়েও কোনো চিকিৎসকের দেখা মিলেনি। অবস্থা বেগতিক হলে সেখানে থাকা সেবিকাদের বলা হলে তারা চিকিৎসকের কাছে যেতে বলেন। তৃতীয় তলায় গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে উপরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলে তারা সিনিয়র চিকিৎসক ছাড়া যেতে পারবেন না বলে জানান। একপর্যায়ে চিকিৎসককে ধরে টান দিলে অন্য চিকিৎসকরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মারধর শুরু করেন। পা ধরে অনুরোধ করার পরও তারা আমাকে অনবরত মারধর করতে থাকেন। একপর্যায়ে আমার স্ত্রীর মৃত্যুর খবর পাই। এসময় আমার শ্যালক রিয়াজ উদ্দিন ক্ষুব্ধ হয়ে অপারেশন থিয়েটারের সামনের একটি দরজার গ্লাস ভেঙে ফেলে। তারপর শত অনুরোধেও শিশু সন্তানটিকেও বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি চিকিৎসকরা।’
তিনি আরো বলেন, ‘অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পর থিয়েটারের মধ্যে কয়েকজন সেবিকার দেখা পাওয়া যায়। তাদেরকেও বলা হয় বিষয়টি। তবে তারা ব্যস্ত ছিলেন লুডু খেলায়।’
তবে এসব বিষয় অস্বীকার করেছেন ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. নাহিদ হাসান। বলেন, রোগীটি মূমুর্ষ অবস্থায় এখানে ভর্তি হয়। তার প্রেশার বেড়ে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে প্রেশার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। কিন্তু রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকলে জরুরিভিত্তিতে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। আর অপারেশন টেবিলে ওঠানোর আগেই তার মৃত্যু হয়। ফলে বাচ্চাটিকেও বাঁচানো যায়নি। কিন্তু এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে রোগীর স্বজনরা অপারেশন থিয়েটার ভাঙচুর ও ইন্টার্নি চিকিৎসকদের মারধর করে।
এই বিষয়ে শেবাচিম হাসাপাতালের গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফরিদা ইয়াসমিন জানান, খাদিজা এ্যাটলামসিয়ার রোগী। তার প্রেশার অত্যাধিক বেশি ছিল। এই ধরনের রোগীর অবস্থা একটু ক্রিটিক্যাল হয়। চিকিৎসকদের কোনো গাফিলতি ছিল না।