এপ্রিল ২২, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
ইসলাম

১০ ব্যক্তির ওপর রাসুলের অভিশাপ

সব পাপই ঘৃণিত। কিন্তু কিছু পাপ খুবই নিন্দনীয়, যা অন্যেরও ক্ষতির কারণ হয়। কলুষিত সেসব পাপ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই ওই পাপীদের ওপর আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টির পাশাপাশি রাসুল (সা.)-এর অভিশাপও পতিত হয়। এখানে এমন ১০টি পাপের কথা উল্লেখ করা হলো, যেসব পাপে রাসুল (সা.) অভিশাপ দিয়েছেন।

যে অন্যকে অস্ত্র তাক করে ভয় দেখায় : অন্যায়ভাবে বা দুষ্টুমি করে কারো দিকে ধারালো অস্ত্র তাক করে ভয় দেখানো, এটা শরিয়তে চরমভাবে নিষিদ্ধ। যারা এ কাজে লিপ্ত আল্লাহর রাসুল (সা.) তাদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন। তাবেয়ি ইবনে সিরিন (রহ.) বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রা.)-কে বলতে শুনেছি, নবীজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি (লৌহ নির্মিত) মারণাস্ত্র দ্বারা ইঙ্গিত করে সে তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত ফেরেশতারা তাকে অভিসম্পাত করতে থাকে, যদিও সে তার আপন ভাই হয়। (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬০)

যে মাদক কারবার করে : আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, মদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ১০ শ্রেণির লোককে রাসুলুল্লাহ (সা.) অভিসম্পাত করেছেন। এরা হলো, মদ তৈরিকারক, মদের ফরমায়েশকারী, মদ পানকারী, মদ বহনকারী, যার জন্য মদ বহন করা হয়, মদ পরিবেশনকারী, মদ বিক্রেতা, এর মূল্য ভোগকারী, মদ ক্রেতা এবং যার জন্য মদ ক্রয় করা হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ১২৯৫)

সুদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি : যারা সুদের কারবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের প্রত্যেকের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অভিশাপের ঘোষণা এসেছে। জাবির (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) লানত করেছেন সুদখোরের ওপর, সুদদাতার ওপর, এর লেখকের ওপর ও তার সাক্ষী দুজনের ওপর। তিনি বলেছেন, এরা সবাই সমান। (মুসলিম, হাদিস : ৩৯৮৫)

যে স্ত্রী স্বামীর বিছানায় সাড়া দেয় না : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো লোক যদি নিজ স্ত্রীকে নিজ বিছানায় আসতে ডাকে আর সে কোনো ওজর ছাড়া তা অস্বীকার করে এবং সে ব্যক্তি স্ত্রীর ওপর দুঃখ নিয়ে রাত্রি যাপন করে, তাহলে ফেরেশতারা এমন স্ত্রীর ওপর সকাল পর্যন্ত লানত দিতে থাকে। (বুখারি, হাদিস : ৩২৩৭)

তালাক দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিবাহ করা : আমিরুল মুমিনিন আলী (রা.) থেকে এ প্রসঙ্গে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তালাক দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিবাহ করে, সে এবং যে স্বামী তালাক দেওয়ার পর পুনরায় গ্রহণের ইচ্ছায় তাকে অন্যের নিকট বিবাহ দিয়ে তার জন্য হালাল করে নেয়, তারা উভয়ে অভিশপ্ত। (আবু দাউদ, হাদিস : ২০৭৬)

পবিত্র মদিনায় পাপ কাজ করা : তাবেয়ি আসিম (রহ.) থেকে বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলুল্লাহ (সা.) কি মদিনাকে হারাম করেছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ, এখান থেকে ওখানের মধ্যবর্তী স্থান। অতএব যে ব্যক্তি এখানে কোনো পাপ করে, তা খুবই ভয়ংকর ব্যাপার। যে এখানে কোনো পাপ করে তার ওপর আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা ও সমগ্র মানবজাতির লানত। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার ফরজ অথবা নফল কোনো ইবাদত কবুল করবেন না। (মুসলিম, হাদিস : ৩২১৪)

মাতা-পিতাকে লানত করা : আবু তুফায়ল আমির ইবনে ওয়াসিলাহ (রহ.) বলেন, আমি আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে বলল, নবী (সা.) আপনাকে আড়ালে কী বলেছিলেন? বর্ণনাকারী বলেন, তিনি রেগে গেলেন এবং বলেন, নবী (সা.) লোকদের কাছ থেকে গোপন রেখে আমার নিকট একান্তে কিছু বলেননি। তবে তিনি আমাকে চারটি (বিশেষ শিক্ষণীয়) কথা বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকটি বলল, হে আমিরুল মুমিনিন! সে চারটি কথা কী? তিনি বলেন—১. যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করে, আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করেন, ২. যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া ভিন্ন কারো নামে পশু জবাই করে আল্লাহ তার ওপরও অভিসম্পাত করেন, ৩. ওই ব্যক্তির ওপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, যে কোনো বিদাতি লোককে আশ্রয় দেয় এবং ৪. যে ব্যক্তি জমিনের (সীমানার) চিহ্নসমূহ অন্যায়ভাবে পরিবর্তন করে, তার ওপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন। (মুসলিম, হাদিস : ৫০১৮)

শরীরে উল্কি অঙ্কন করা : আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক সেসব নারীর ওপর, যারা শরীরে উল্কি অঙ্কন করে এবং যারা অঙ্কন করায়। আর সেসব নারীদের ওপর অভিশাপ, যারা চুল, ভ্রু তুলে ফেলে এবং সেসব নারীদের ওপর যারা সৌন্দর্যের জন্য সম্মুখের দাঁত কেটে সরু করে, দাঁতের মধ্যে ফাঁক তৈরি করে, যা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি কেন তার ওপর অভিশাপ করব না, যাকে নবী (সা.) অভিশাপ করেছেন? আর আল্লাহর কিতাবে আছে, ‘রাসুল (সা.) তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ করো।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ৭; বুখারি, হাদিস : ৫৯৩১)

চোরের ওপর রাসুলের লানত : নবী (সা.) বলেন, চোরের ওপর আল্লাহর লানত হোক, যখন সে একটি হেলমেটও চুরি করে এবং এ জন্য তার হাত কাটা হয় এবং সে একটি রশি চুরি করে এ জন্য তার হাত কাটা হয়। (বুখারি, হাদিস : ৬৭৮৩)

ভিন্ন লিঙ্গের পোশাক পরিধান করা : শরিয়তে নারী-পুরুষের স্বতন্ত্র পোশাক পরিধানের বিধানে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আর যারা এই বিধান লঙ্ঘন করবে তাদের ব্যাপারে হাদিস শরিফে চরম নিন্দার ঘোষণা এসেছে। বিখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) অভিসম্পাত করেছেন ওই সব পুরুষকে, যারা নারীর অনুরূপ পোশাক পরে এবং ওই সব নারীকে, যারা পুরুষের অনুরূপ পোশাক পরিধান করে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৯৮)। মহান আল্লাহ আমাদের অভিশপ্ত এসব পাপ থেকে রক্ষা করুন।

সম্পর্কিত পোস্ট

রোজা রেখে আতর-পারফিউম ব্যবহার করা যাবে?

banglarmukh official

গর্ভবতী নারীর রোজার মাসয়ালা

banglarmukh official

তারাবির নামাজ ছুটে গেলে করণীয়

banglarmukh official

রোজা অবস্থায় কি দাঁত ব্রাশ করা যাবে?

banglarmukh official

চাঁদ দেখা গেছে, সৌদি আরবে রোজা শুরু শনিবার

banglarmukh official

শাবান মাসে কত তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখা যাবে

banglarmukh official