তাওহীদুল ইসলাম নূরী
২০২১ সালে অনুষ্ঠিতব্য পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে সারাদেশে এখন থেকে জনগণের মধ্যে উৎসাহ, উদ্দীপনা দেখা দিচ্ছে। সিটি এলাকা ছাড়া প্রায়সব জায়গায় ” আসন্ন …….. পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেয়র/চেয়ারম্যান, কমিশনার/মেম্বার পদপ্রার্থী হিসেবে সকলের আন্তরিক দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি ” শীর্ষক পোস্টার ব্যাপকভাবে লক্ষ্যণীয়। দিন যতই গড়াচ্ছে নানা কৌশলে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের সমর্থন বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনের আরও কয়েক মাস বাকী থাকলেও সমর্থন বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমে বহু এলাকায় অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী হামলারও শিকার হয়েছেন।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইসলামের দ্বীতিয় খলিফা হযরত উমর ফারুক (র.) এর ইন্তেকালের নয় মাস পর একজন সাহাবী তাঁকে স্বপ্নে দেখেন। সাহাবী দেখেন যে, উমর (র.) খুবই ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করে চলছেন। তাঁকে এত ব্যস্ত দেখাচ্ছিল যে, তিনি ঐ সাহাবির সাথে কোন কথাই বলতে পারছিলেন না। এতটা ব্যস্ততা দেখে সাহাবী তাঁকে “আপনাকে তো দুনিয়াতে এত ব্যস্ত থাকতে দেখতাম না। আপনাকে এত পেরেশান মনে হচ্ছে কেন? ” প্রশ্ন করলে উমর ফারুক (র.) উত্তরে বলেন যে, “আমি এখনো রাষ্ট্রের দায়িত্বপালনের হিসাব আল্লাহকে বুঝিয়ে দিতে পারি নাই। এখনো সেই ক্ষমতার হিসাব দিচ্ছি “।
একটু ভাবা দরকার বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (স.) এর মাধ্যমে যিনি দুনিয়ায় থাকতে অসংখ্যবার জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন, রাসূল (স.) যার সম্পর্কে ” আমার পরে যদি কেউ নবী হত, তিনি উমর” বলেছিলেন, সেই উমর উমর ফারুক (র.) এর যদি দায়িত্বের হিসাব দিতে এমন অবস্থা হয়, আমরা যারা একটু আগে-পরে না ভেবে আবেগের বশবর্তী হয়ে জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি তারা কতটুকু সেই দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হব।
আসলে, ইউপি সদস্য থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্তরের জনপ্রতিনিধি হিসেবে কোন দায়িত্বই ছোট নয়। প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্বের জন্য আল্লাহর দরবারে একাকী জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। মানুষ তো আছেই, আওতাধীন প্রতিটি প্রাণীর জানমালের নিরাপত্তার জন্য আইন প্রণয়ন শুধু নয়, সেই আইনের যথাযথ বাস্তবায়নও করতে হয় একজন জনপ্রতিনিধিকে। জগদ্বিখ্যাত রাষ্ট্রনায়ক হযরত উমর ফারুক (র.) যেমনটা বলেছিলেন “আমার রাষ্ট্রের কোন মানুষ তো দূরের কথা, একটা কুকুরও যদি না খেয়ে মারা যায় আল্লাহর দরবারে আমাকে সেটা নিয়ে জবাবদিহিতা করতে হবে “।
জ্ঞান, মেধা, প্রজ্ঞার পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিকে হতে হবে নীতি-নৈতিকতা সম্পন্ন দূরদর্শী একজন মানুষ। কারণ, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সকল শ্রেণি ও মতের মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় জনপ্রতিনিধিকে। আওতাভুক্ত প্রতিটি মানুষ এবং প্রাণীর চাই খাদ্য, নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতা। অধীনস্থ লোকগুলোকে দুনিয়া, আখিরাত উপযোগি একজন মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হতে হয় জনপ্রতিনিধিকে। কারণ, বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (স.) ইন্তেকালের অল্পসময় আগে নামাজের কথা বলার পাশাপাশি বার বার অধীনস্থ লোকদের দিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন।
সুতরাং, আবেগের বশবর্তী না হয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন এবং নির্বাচিত করার আগে সকলের একটু বিবেক দিয়ে ভাবা চাই। এই গুরুদায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসা চাই জ্ঞান, মেধা, প্রজ্ঞার পাশাপাশি নীতি-নৈতিকতা সম্পন্ন দুরদর্শিতার অধিকারী মানুষ। যার মাধ্যমে সমাজ এবং রাষ্ট্র উপকৃত হবে। নিশ্চিত হবে প্রতিটি মানুষের খাদ্য, নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতা।
লেখকঃ
তাওহীদুল ইসলাম নূরী,
আইন বিভাগ (অধ্যয়নরত),
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।
শাহারবিল সদর, চকরিয়া, কক্সবাজার।