বরিশালে রেজাউল করিম রেজা (৩০) নামে এক যুবককে পুলিশী নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পর তার ব্যাখা দিয়েছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। তাদের দাবী নির্যাতনে নয়, রেজার বাম পায়ের সংযোগস্থলে ক্ষত ছিলো। সেখান থেকে রক্ত ক্ষরণ হয়েই মৃত্যু হয়েছে রেজার।
গতকাল সন্ধ্যায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে একটি ই মেইল বার্তায় বিষয়টির ব্যাখা দেয়া হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, হাজতি আসামী রেজাউল করিম রেজা ২৪নং ওয়ার্ড হামিদ সড়কের বাসিন্দা ইউনুস মিয়ার ছেলে। শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এই সংক্রাতে প্রাথমিক ভাবে জানা যায়,বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গত ২৯ ডিসেম্বর রেজাউল করিম রেজাকে মাদকসহ গ্রেপ্তারপূর্বক তার বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানার মামলা নং-৭১, জি আর-৮৫৩/২০, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইন ২০১৮ এর ৩৬(১) এর ১৪(ক)/১৯(ক) রুজু করা হয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা ৩০ ডিসেম্বর আসামীকে বিধি মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে
প্রেরন করেন। বিজ্ঞ আদালতের আদেশে ঐ দিনই অর্থাৎ ৩০ ডিসেম্বর তাকে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরন করা হয় এবং কারা কর্তৃপক্ষ তাকে বুজে নেন (যাহার হাজতী নং- ৬৬৩১/২০)।
কারগারে প্রেরনের ২ দিনেরও অধিক সময়ের পর ১ জানুয়ারী রাতে উক্ত আসামী কারা অভ্যরন্তে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রাথমিক ভাবে কারা হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ঐদিন রাতে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শেবাচিম হাসপাতালের প্রিজন সেলের দায়িত্বে থাকা কারারক্ষীদের মাধ্যমে তাকে প্রিজন সেলে রেখে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাহাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তার মৃত্যু সংক্রান্তে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়, যাহার মামলা নং-২/২১।
প্রাথমিকভাবে জানা যায় যে, সে পূর্ব থেকেই এলাকায় মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবী হিসেবে চিহ্নিত ছিলো এবং ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে মাদক সংক্রান্তে একাধিক মামলা রুজু হয়েছিলো। তার শরীরের বাম পায়ের পাশের কুচকিতে ক্ষত ছিলো। ১ জানুয়ারী ক্ষত স্থান থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হলে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে চিকিৎসার জন্য শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরন করেন এবং সেখানেই হাজতি রেজাউলের মৃত্যু হয়।
উক্ত ব্যক্তিকে মাদকদ্রব্যসহ আটকেরপর পুলিশ যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন।পুলিশের পক্ষ থেকে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ার বাহিরে কোন কিছুই করা হয়নি।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে পুলিশি নির্যাতনের কোন তথ্য পাওয়া যায় নাই। তার শরীরের ক্ষত স্থান থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরনের ফলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ মৃত্যুবরন করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয় । এরপরেও বিষয়টি তদন্তের জন্য বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান ও উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) কে সভাপতি করে ০৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
এদিকে বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন মাহি সহ রেজাউল করিম রেজাকে নির্যাতনের পর হত্যাকারী অভিযুক্ত করে পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবীতে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে এলাকাবাসী।
নগরীর সাগরদি এলাকায় প্রায় দেড়ঘন্টা যাবৎ লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করে ২৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। এসময় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করা হয়। এতে দুই পাশে কয়েকশত যানবাহন আটকা পড়ায় জনসাধারনে দূর্ভোগ সৃষ্টি হয় । পরে মেট্রেপিলিটন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেয় এলাকাবাসী।
অন্যদিকে ২৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হুদা ও সাধারণ সম্পাদক সাফিন মাহামুদ তারেক সহ স্থানীয়রা পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবী করেছে।
অপরদিকে এরপরপরই সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বরিশাল নগরীর ধানগবেষনা রোডস্থ এসআই মহিউদ্দিন মাহির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে স্থানীয়রা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।