নবীকে কটুক্তি করা হয়েছে এমন অভিযোগে বিচার দাবি করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস দেন এক তরুণ (২২)। এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আসামি হয়ে কারগারে গেলেন ওই তরুণ। এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় এমন ঘটনা ঘটেছে। এটাই বাউফল থানায় রুজু করা প্রথম ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারায় করা কোনো মামলা।
ওই তরুণের নাম মোহাম্মাদ সাইদুল ইসলাম। তিনি বাউফল পৌরসভার গোলাবাড়ি এলাকার একটি বেকারির দোকানের কর্মচারী। তাঁর গ্রামের বাড়ি বাউফল উপজেলার নাজিরপুর গ্রামে।
গোলাবাড়ি এলাকার বাউফল শাহী জামে মসজিদের কয়েকজন মুসুল্লীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,গত শনিবার বিকেলে এক নারীর কাছে ফল বিক্রি করাকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি রাসুল (সঃ) কে কটুক্তি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এমন কথা ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় মুসুল্লীরা ক্ষুব্ধ হন। সন্ধ্যার পর স্থানীয় মুসুল্লীরা ওই ব্যক্তির ঘর মালিকের কাছে বিচার দাবি করেন। খবর পেয়ে ওই ব্যক্তি সটকে পড়েন এবং তাঁর ঘর মালিকের কাছে যান।
ওই সময় সাইদুল তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে দুটি ষ্ট্যাটাস দেন। একটি ষ্ট্যাাটাসে বলেন,বাউফল গোলাবাড়ি এক ফলের দোকানদার নবীকে গালি দিয়েছে, তাই বাউফলে বিক্ষোভ মিছিল, আমরা তাঁর বিচার চাই। আরেক ষ্ট্যাটাসে ওই ব্যক্তির ছবিসহ ফলের দোকানের ছবি দিয়ে লিখেছেন-এই সেই ব্যক্তি। বাউফল গোলাবাড়ি ফলের দোকানদার (…) নামের এই কুকুরটি আমাদের নবীকে নিয়ে বাজে কথা বলেছে। সবাই প্রস্তুত হও, ইনশাল্লাহ ওর খবর করে ছাড়বো। যদিও পরবর্তীতে ওই ষ্ট্যাটাস দুটি সাইদুল তাঁর আইডি থেকে মুছে ফেলে।
পরে রাত আটটার দিকে মুসুল্লীরা ওই ব্যক্তির মুখোমুখি হন। তখন ওই ব্যক্তি প্রকাশ্যে মুসুল্লীদের কাছে ক্ষমা চান। তখন তিনি দাবি করেন,নবীর নাম নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু গালি দেননি। তবে ভবিষ্যতে কোনোদিন নবীকে নিয়ে কোনো কথা বলবেন না বলেও স্বীকারোক্তি দিলে তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। পরিবেশ শান্ত হয়ে যায়। যে যাঁর মত করে চলে যায়।
পরবর্তীতে সাইদুলকে রাত দুইটার দিকে বেকারির দোকান থেকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ সদস্য বলেন,সাইদুলের আইডিতে ওসির বিরুদ্ধে করা সংবাদ শেয়ার করা। এ কারণেই তাঁকে মামলার আসামি হতে হয়েছে।
কয়েকজন মুসুল্লী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গিয়েছে। এরপরেও ঘুম থেকে উঠিয়ে ডেকে নিয়ে সাইদুলের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা খুবই দুঃখজনক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাইদুলের এক বন্ধু অভিযোগ করেছেন,সম্প্রতি বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান একটি মামলার আসামিদের নিয়ে সেলফি ও ছবি তোলেন। এসব বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন সাইদুল তাঁর আইডি দিয়ে শেয়ার করেন। যা দেখে ওসি সাহেব ক্ষুব্ধ হন। আর এ কারণেই সাইদুলকে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানার জন্য ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের সরকারি মুঠোফোন নম্বরে কল করলে তিনি ধরেননি। ক্ষুদেবার্তা দিলেও তিনি ধরেননি এবং কল করেননি। তবে অন্য এক সাংবাদিককে বলেন,মীসাংসিত বিষয়ে ধর্মীয় উস্কানিমূলক ষ্ট্যাটাস দেওয়ায় তাঁর (সাইদুল) বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
পরিদর্শক (তদন্ত) আল মামুন বলেন,‘সাইদুলকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।’