বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত কেউ নেই। একজন ছিলেন, তিনি টানা দুই মাস কাজ করার পর চলে গেছেন। এখন ভরসা চার স্বেচ্ছাসেবী। তারাই করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করছেন তারা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো সহযোগিতা এবং কোনো ধরনের সুযোগসুবিধা ছাড়াই বিনা মূল্যে তারা এ কাজ করে যাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এ সংকটের সমাধান করা হবে।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত বছরের মার্চ থেকে করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের এবং পরীক্ষা করতে আসা মানুষের নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করেন হাসপাতালের নিয়োগকৃত টেকনোলজিস্ট বিভূতি ভূষণ এবং তার সহযোগী বায়জিদ। টানা দুই মাস নমুনা সংগ্রহের পর বিভূতি ও বায়জিদকে বিশ্রামে পাঠানো হয়।
এরপর থেকে নমুনা সংগ্রহে বিনা পয়সায় কাজ শুরু করেন পাঁচ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট। কিছুদিন পর একজন চলে যান। বাকি চারজন গত বছরের জুন থেকে টানা কাজ করে চলেছেন।
নমুনা সংগ্রহকারী স্বেচ্ছাসেবী মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) এবং বরিশাল নগরীর বাসিন্দা শাকিল আহমেদ জানান, প্রতিদিন এক শর বেশি নমুনা সংগ্রহ করতে হয়। করোনা ইউনিটে ভর্তি রোগী থেকে শুরু করে বাইরে থেকে করোনা পরীক্ষার জন্য আসা মানুষের নমুনা আমাদেরই সংগ্রহ করতে হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা আমরা পাইনি। কোনো প্রণোদনাও দেয়া হয়নি আমাদের।’
আরেক স্বেচ্ছসেবী মো. হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা চারজন মিলে ২০ হাজারের বেশি নমুনা সংগ্রহ করেছি। কোনো লাভের জন্য আমরা এই কাজ করিনি। তবে আমরা আমাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু চাই।’
নমুনা সংগ্রহকারী মিরাজুল হক বলেন, ‘নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে আমাদের মধ্যে দুইজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়। মোটামুটি সুস্থ হয়ে আবার কাজে ফিরেছে। আমরা কাজ না করলে কাজ করার কোনো লোক নেই এখানে। মূলত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বিপাকে রয়েছে। কেননা, এখানে কেউ কাজ করতে চাচ্ছে না। এখন নমুনা সংগ্রহের জন্য হাসপাতালের নিয়োগকৃত কেউই নেই। আমি, হোসেন, শাকিল ও প্রিন্সই কাজ করছি। আমাদের সুযোগসুবিধা সরকার দেখলে ভালো হতো।’
শের-ই-বাংলা মেডিক্যালের ইনডোর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সুদীপ হালদার বলেন, ‘নমুনা সংগ্রহে বা করোনা রোগীদের সেবায় যে স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছেন তাদের উপযুক্ত মর্যাদা এবং বেতনকাঠামোতে আনা প্রয়োজন। তারা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন।’
শের-ই-বাংলা মেডিক্যালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘স্বেচ্ছসেবকদের বিষয়টি আমাদের মাথায় রয়েছে। তাদের আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ এবং বেতনকাঠামোর মধ্যে আনার প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া তাদের একটি সনদ দেয়া হবে। যা তাদের চাকরি পেতে সহায়ক হবে।’
বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘সুযোগসুবিধা না দিলে স্বেচ্ছাসেবকরা কাজের আগ্রহ হারাবে। এদের কীভাবে বেতনকাঠামোর মধ্যে আনা যায় সেই চিন্তা আমাদের রয়েছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।’