বাকেরগঞ্জের নুরুল্লা মুমেন, দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে কোন উপায়ন্তর না দেখে প্রায় ৮ মাস পূর্বে ২০২০ এর নভেম্বরে চাকরি নেন বরিশাল ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ এর অনুমোদিত ডিস্ট্রিবিউটর “জি টু কনসোর্টিয়াম” এর ডিস্ট্রিবিউটর সেলস অফিসার (ডিএসও) হিসেবে। ভেবেছিলেন চাকরি করে পাওনা টাকা পরিশোধ করবেন কিন্তু চাকরি নেওয়ার পর বেতনের টাকায় নিজের থাকা-খাওয়ার পর অবশিষ্ট যা থাকে তা দিয়ে পাওনা পরিশোধ করতে না পারায় তারমধ্যে তৈরি হয় এক ধরনের হতাশা।
এমতাবস্থায় মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে পড়েন ছিনতাইয়ের কবলে। ১৮-০৭-২১ খ্রিঃ বরিশাল শহরের বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে ঘুরে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ এর টাকা কালেকশন করার সময় আনুমানিক রাত ৮ ঘটিকায় নগরির বৈদ্য পাড়ায় ছিনতাইকারীরা ছুরিকাঘাত করে ছিনতাই করে নেয় মার্কেট থেকে সংগৃহীত নগদ প্রায় ৮ লক্ষ টাকা।
সংবাদ পেয়ে খুব দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করেন কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। ঘটনাস্থল ও ক্রাইমসিন পর্যালোচনা, ভিকটিম নুরুল্লাহ মোমেনের দেওয়া ছিনতাইয়ের ঘটনার বিবরন, ভিকটিমের শরিরের আঘাতের ধরন, ভিকটিম যেই পথে চলাচল করেছে সে সমস্ত পয়েন্টে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক পূর্বে স্থাপিত সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশের কাছে ঘটনাটি বেশ রহস্যজনক মনে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে কোতোয়ালি মডেল থানার একটি চৌকস টিম ভিকটিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ভিকটিম নুরুল্লাহ মোমেন স্বীকার করেন যে আসলে তিনি ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন নি, আর তার সাথে কোন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি। মূলত তিনি নিজেই তার ডান হাতের বাহুতে ব্লেড দিয়ে পোচ দিয়ে নিজেকে রক্তাক্ত করে ছিনতাইয়ের ঘটনা সাজিয়েছেন।
চাকুরীতে ঢোকার পূর্বেই অভিযুক্ত( কথিত ভিকটিম) তার এলাকার বিভিন্ন মানুসের কাছ থেকে ধার করা প্রায় ১ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা তিনি চাকরিতে ঢোকার পর মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ এর অনুমোদিত ডিস্ট্রিবিউটর “জি টু কনসোর্টিয়াম” এর মার্কেট থেকে বিভিন্ন সময় ধীরে ধীরে সরিয়ে পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধ করেছেন।
অপরদিকে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ এর অনুমোদিত ডিস্ট্রিবিউটর “জি টু কনসোর্টিয়ামে এই ১ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকার হিসাব বোঝানোর জন্যই তিনি এই ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়েছেন। এই ১ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়ে ভিকটিম যখন তার অফিসের অপর ডিএসও হাফিজের মোবাইল ফোন দিয়ে ম্যানেজার সেলিম খানকে ঘটনা জানান তখন ম্যানেজার সেলিম খান তাকে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকার পরিবর্তে টাকার অংক বাড়িয়ে ৮ লক্ষ টাকা বলতে বলেন।
তাৎক্ষণিক পুলিশ অভিযুক্ত (কথিত ভিকটিম) নুরুল্লাহ মোমেন, পিতা- রুহুল আমিন, মাতা- আমেনা বেগম বিউটি, সাং- মধ্য নিয়ামতি ( টহরকোলা হাওলাদার বাড়ী), থানা বাকেরগঞ্জ, জিলা- বরিশাল কে সাথে নিয়ে তার বের করে দেওয়া মতে কোতোয়ালি মডেল থানাধীন বৈদ্যপাড়া রাস্তার পাশের জঙ্গল থেকে একটি Gillette Wilkinson sword ব্লেড যা দিয়ে সে তার হাতে পোচ দিয়ে নিজেকে রক্তাক্ত করেছে ও একটি কালো রঙের ব্যাগ উদ্ধার করেন।
বরিশাল মেট্টোপলিটন পুলিশের একটি চৌকস টিমের পেশাদারিত্ব ও নিরলস প্রচেষ্টায় একটি সাজানো ছিনতাইয়ের ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হয়। অভিযুক্ত নুরুল্লা মুমেনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
*মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স*
*বাংলাদেশ পুলিশ, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স*