মাহে রমজানের রহমতের দশক শেষ আজ। সন্ধ্যা থেকেই শুরু হবে মাগফিরাতের দশক। দুনিয়ার সব গোনাহগার মানুষের জন্য চিরস্থায়ী শান্তি ও মুক্তির দিশারী এ মাগফিরাতের দশক। এ দশকে বান্দার ক্ষমা লাভ আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রমজানের প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাত লাভের এবং তৃতীয় ১০ দিন জাহান্নাম থেকে নাজাত প্রাপ্তির।’ (মিশকাত)।
ক্ষমা লাভের আবেদন
মোমিন ব্যক্তি সারা বছরের নেকি ও পুণ্যের ঘাটতি পূরণের জন্য প্রানান্তকর চেষ্টা-সাধনা করেন এ রমজান মাসে। যে চেষ্টা সাধনায় যাবতীয় পাপ-পঙ্কিলতা, অন্যায়, অপরাধমূলক চিন্তাভাবনা ও অসৎ কাজকর্ম থেকে ক্ষমা লাভ হয় এ দশকে। এ জন্য মোমিন বান্দা প্রথম ১০ দিন সব ধরনের অন্যায় থেকে নিজেকে মুক্ত করে আল্লাহর রহমত কামনায় অতিবাহিত করে। ফলে সে আল্লাহর রহমত তথা দয়া, করুণা ও অনুগ্রহ লাভে ধন্য হয়। এমনিভাবে রমজান মাসের দ্বিতীয় ১০ দিন অতিবাহিত করে গোনাহ থেকে ক্ষমা লাভের আবেদন নিয়ে। তখন আল্লাহ রহমতপ্রাপ্তদের গোনাহ মাফ করে দেন।
মাগফিরাত লাভে করণীয়
হাদিসে বর্ণিত আছে, রমজান মাসের প্রতি রাতেই একজন ফেরেশতা ঘোষণা করতে থাকেন, ‘হে পুণ্য অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাচারী! থামো, চোখ খোলো।’ তিনি আবার ঘোষণা করেন, ‘ক্ষমাপ্রার্থীকে ক্ষমা করা হবে। অনুতপ্তের অনুতাপ গ্রহণ করা হবে। প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করা হবে।’ সুতরাং মাগফিরাত বা ক্ষমা লাভে প্রত্যাশী এ দশকের প্রতি রাতেই গোনাহ মাফে রোনাজারি করবে। আশা করা যায়, রমজানে হাদিসের আমল আল্লাহতায়ালা কবুল করবেন।
মাগফিরাত পেতে আমল
মাগফিরাত প্রত্যাশী মোমিন বান্দার উচিত, আজ সন্ধ্যা থেকেই তারাবির নামাজ যথাযথ আদায় করে চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে রোনাজারি করা, অসহায় ব্যক্তিদের ইফতার করানোর মাধ্যমে গোনাহ মাফের চেষ্টা করা, রাতের ইবাদত-বন্দেগির সঙ্গে সঙ্গে রাতে আল্লাহর সাহায্য কামনায় হাদিসের ওপর আমল করা। তবেই মাগফিরাত বা গোনাহ থেকে ক্ষমা লাভ করা সম্ভব। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে মাগফিরাতের দশকে ক্ষমা লাভ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
যাদের জন্য ধ্বংস অনিবার্য
রমজানের রোজা হলো, গোনাহ মাফ এবং মাগফিরাত লাভের মধ্য দিয়ে চিরশান্তি, চিরমুক্তির একটি সুনিশ্চিত ব্যবস্থা, অতি নির্ভরযোগ্য এক সুযোগ। কিন্তু যে বা যারা এ সুযোগের সদ্ব্যবহার না করে, তার ধ্বংস অনিবার্য; তার বিপদ অবশ্যম্ভাবী। কেননা, ইমাম বোখারি (রহ.) রচিত আল মুফরাদ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, জিবরাইল (আ.) এসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি, যে রমজান মাস পাওয়ার পরও নিজের গোনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারল না। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমিন’। আরেক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাস পেল, কিন্তু এ মাসেও তাকে ক্ষমা করা হলো না; সে আল্লাহতায়ালার রহমত থেকে চিরবঞ্চিত ও বিতাড়িত।’ (মুসতাদরাকে হাকিম)।
প্রথম দশকের আমলে নির্ভর ক্ষমা
মাগফিরাত মানে ক্ষমা। নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাওয়া। খারাপ কাজগুলো পরিহার করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। নিয়মকানুন মেনেই আমরা রোজা পালন করে আসছি। কিন্তু মিথ্যা কথা, কুটনামি করা, গিবত বা পরনিন্দা করা, মিথ্যা কসম খাওয়া, কুনজর বা কামুক দৃষ্টিতে তাকানো—এসব খারাপ দিকগুলো কি পরিহার করতে পেরেছি? এ খারাপ বিষয়গুলো রোজাকে ধ্বংস করে দেয়। রমজানের প্রথম দশকে আমল শুদ্ধ করার ওপর নির্ভর করে ক্ষমার সুসংবাদ।
ক্ষমা লাভের বিশেষ দোয়া
মাগফিরাতের দশকে ক্ষমা লাভের একটি দোয়া আমরা বেশি বেশি করতে পারি। তা হলো—
আল্লাহুম্মা হাব্বিব ইলাইয়্যা ফি-হিল ইহসান; ওয়া কাররিহ ফিহিল ফুসুক্বি ওয়াল ই’সইয়ান; ওয়া হাররিম আলাইয়্যা ফি-হিস সাখাত্বা ওয়ান নিরানা বিআ’ওনিকা ইয়া গিয়াছাল মুসতাগিছিন।
অর্থ : হে আল্লাহ! এ দিনে সৎ কাজকে আমার কাছে প্রিয় করে দাও। আর অন্যায় ও নাফরমানিকে অপছন্দনীয় করো। তোমার অনুগ্রহের উসিলায় আমার জন্য তোমার ক্রোধ ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হারাম করে দাও। হে আবেদনকারীদের আবেদন শ্রবণকারী!
আল্লাহতায়ালা রমজান মাসের রোজা পালন, ইবাদাত-বন্দেগি ও দোয়া-ইস্তিগফারের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহকে ক্ষমা করে তাঁর আনুগত্যশীল বান্দাদের মধ্যে শামিল হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।