খান রুবেলঃ রাজধানী ঢাকায় আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করেছে ডেঙ্গু জ্বর। প্রতিদিন হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ঢাকায় গত বছরের থেকে এ বছর ডেঙ্গু জ্বরের রোগীর পাঁচগুণ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আর ঢাকায় আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীরা আসছে বরিশালে।
তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধ বা সচেতনতায় জোড়ালে ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না বরিশাল স্বস্থ্য বিভাগে। এমনকি এডিস্ মশার উপস্থিতি নিয়ে কার্যক্রম নেই তাদের। বরিশালে এডিস্ মশা আছে কিনা তা জানে না কেউ। শেষ কবে এ বিষয়ে বরিশালে সার্ভে হয়েছে তাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
যদিও বরিশালে এখনো ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাব পড়েনি বরিশালে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ ম-ল। দু-চারজন যা আক্রান্ত পাওয়া যাচ্ছে তারা কেউ বরিশালে বসে আক্রান্ত হয়নি। তবে ডেঙ্গু মোকাবেলায় বরিশালে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের পরিসংখ্যানবীদ এএসএম আহসান কবির জানিয়েছেন, ‘ঢাকায় ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মকভাবে বাড়লেও বরিশাল এখনো নিরাপদে আছে। কেননা এখন পর্যন্ত বরিশালে আক্রান্তের হার বাড়েনি।
তিনি জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে নতুন করে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত কোন রোগীর খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে সোমবার বরিশালে ডেঙ্গু আক্রান্ত দুজনের খোঁজ মিলেছে। তারা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় পটুয়াখালী এবং বরগুনায় একজন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
এ নিয়ে চলতি বছরের গত ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল নগরীসহ বিভাগের ছয় জেলায় মোট ১৪০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। এছাড়া বরিশালে একজন মৃত্যুবরণ করেছেন। বর্তমানে পাঁচজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল মহানগরীসহ গোটা বিভাগজুড়ে মশার উপদ্রোপ ক্রমশ বাড়ছে। মশার যন্ত্রণায় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে আছে। বিশেষ করে মশার উৎপাতে অসহায় হয়ে পড়েছেন বরিশাল নগরবাসী। তবে এগুলো কি ধরনের মশা তা নির্নয়ের উদ্যোগ নেই স্বাস্থ্য বিভাগের। এমনকি চলতি বছরে একবারের জন্যও মশার ওপর সার্ভে করেনি তারা। অথচ নিয়মে আছে বছরে অন্তত তিনবার মশার ওপর সার্ভে করবে স্বাস্থ্য বিভাগ।
এ প্রসঙ্গে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ে দায়িত্বে থাকা বরিশাল জেলার কীটতত্ত্ববিদ আসমা আক্তার বলেন, ‘এডিস্ মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়। তবে এই মশা দুই প্রকার। একটি ‘ইজিপাটাই’ এবং অপরটি ‘এলাবাপিকটাস’। এরমধ্যে ইতিপূর্বে সার্ভে করে বরিশালে আমরা ‘এলাবাপিকটাস’ এর উপস্থিতি পেয়েছে। যেটাকে লার্ভ বলে থাকে। তবে নতুন করে এ বিষয়ের ওপরে নতুন করে আর সার্ভে হয়নি।
তিনি বলেন, ‘মুলতঃ ঢাকা থেকে সার্ভে টিম আসে। তাদের সাথে আমরা মশার ওপর সার্ভে করে থাকি। সবশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে বরগুনা পৌর এলাকায় এডিস্ মশার ওপরে সার্ভে করা হয়েছে। আর গত বছরের শেষ দিকে সার্ভে হয় বরিশাল সিটিতে। তবে সার্ভের সময়টা নির্দিষ্টভাবে বলতে পারেননি তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব মশার উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া। আর মশা নিধনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার। এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করতে লার্ভিসাইড ওষুধ ব্যবহার করা হয়। আর বড় মশা মরতে ফগিং করা হয়।
কীটতত্ত্ববিধ আসমা বলেন, ‘মুলতঃ আমাদের জনবল সংকট। বরিশাল বিভাগে কীটতত্ত্ববিধ আমরা তিনজন আছি। যেকারণে বছরে তিন মৌসুমে সার্ভের নিয়ম থাকলেও সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার ডেঙ্গুর উপদ্রোপ যখন বাড়ে তখন ঢাকা থেকেই এ বিষয়ে আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত বরিশালে সেরকম পরিস্থিতি না হওয়ায় সার্ভে করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ ম-ল বলেন, ‘বরিশালে এখনো ডেঙ্গু জ্বরের পরিস্থিতি তেমন হয়নি। যে দু-চারজন পাওয়া যাচ্ছে তাদের সাথে আমরা কথা বলেছি। এরা বরিশালে বসে আক্রান্ত হয়নি। ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে বরিশালে এসে চিকিৎসা নিয়েছে।
এর পরেও আমরা সার্বিকভাবে প্রস্তুত আছি। আমাদের হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চিকিৎসকও আছে। পরীক্ষার জন্য যে কীটের প্রয়োজন তাও আছে, প্রয়োজনে আরও আনা হবে। তবে এডিস মশা বা ডেঙ্গু জ্বর থেকে রক্ষা পেতে সবার আগে সচেতনতার বিকল্প নেই বলে পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা।