গ্রীষ্মের দাবদাহে জনজীবনে যেখানে নাভিশ্বাস উঠেছে, সেখানে দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে ঘন ঘন লোডশেডিং। তাই গরম থেকে বাঁচতে বরিশালে রিচার্জেবল ফ্যানের চাহিদা বাড়ায় দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে।
এদিকে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ফ্যানের দাম বাড়ছে হু হু করে। মাস ছয়েক আগে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হতো যে ফ্যান, শহরের ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকানগুলোতে তা ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
গত রোববার দুপুরে সরেজমিনে নগরীর কাটপট্টি এলাকায় বিভিন্ন ফ্যানের দোকান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ক্রেতারা এ জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দায়ী করলেও তারা দায়ী করছেন আমদানিকারকদের।
ইলেকট্রনিক্স পণ্যের দোকানগুলোতে চার্জার লাইট ও ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। জানা গেছে, আকারভেদে ফ্যান ৭০০ থেকে শুরু করে ৯,০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। এর মধ্যে চার্জার ফ্যান সর্বচ্চ ৪ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। যা মাস ছয় আগে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে বলে একাধিক দোকানদার জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, অনেক ব্যবসায়ী গত বছরই ফ্যান কিনে গোডাউনে রেখে দেয়। সেই ফ্যান এখন গরমে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন।
এর মধ্যে পাইকারি দোকানে জিএফসি ২৮ ইঞ্চি ফ্যান বর্তমানে ৮ হাজার ৫০০ টাকা, ১৮ ইঞ্চি ৭০০০ হাজার টাকা, বিআরবি ২৬০০ থেকে ২৯৫০ টাকা, সুপার সেল নাকি ২৮০০ টাকা, ভিশন ২৮৫০ টাকা, পিনিক ২৮০০ টাকা, পার্ক গুজরাট স্টান ফ্যান ৮ হাজার ৫শ’ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তবে পাইকারি দোকানের দামের চেয়ে প্রতিটি পণ্যে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা বাড়তি দামে খুচরা দোকানে বিক্রি করার অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।
নগরের হাসপাতাল রোডের বাসিন্দা সেলিম মিয়া কাটপট্রি এলাকায় এসেছিলেন একটি চার্জার ফ্যান কিনতে। তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে শিশুরা নাজেহাল। তাই চীনা চার্জার ফ্যান কিনতে এসে শুনি দাম বাড়তি। কিন্তু কোন দোকানেই চার্জার ফ্যান পেলাম না। অন্য ফ্যানের দাম শুনে না কিনে বাড়ি চলে যাচ্ছি।
আরেক বাসিন্দা লুনা বেগম বলেন, ‘প্রতিদিনই লোডশেডিং। এর মধ্যে অনেক গরম। ঘরে থাকতে খুব কষ্ট হয়। এ জন্য ফ্যান কিনতে এসেছি। তিনি অভিযোগ করেন, গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিটি ইলেকট্রনিক্স পণ্যের দাম বেশি।
বিক্রেতা ওবায়দুর রহমান রানা বলেন, ‘এখনতো প্রচণ্ড গরম। সেজন্য আগের তুলনায় অনেক বেশি বিক্রি বেড়েছে। আগে যেখানে দিনে ১০-১২টি ফ্যান বিক্রি হতো, সেখানে এখান বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৫০টি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি ফ্যানে এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেশি দামে পাইকারিতে কেনা লাগছে। এজন্য কাস্টমারের কাছে আগের চেয়ে দাম বেশি রাখা হচ্ছে। পরিচিত যেসব কাস্টমার আছে তাদের সঙ্গে দাম বেশি রাখার কারণে সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে।’
ফ্যান বিক্রেতা মনির খান বলেন, আমরা পাইকারিতে দাম বেড়েছে তাই খুচরা বাজারে বেশি বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকারি পর্যায়ে প্রতিটি ফ্যানের দাম ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা বেড়েছে। টাকা দিয়েও ফ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খাওয়া লাগতাছে।
বশির খান নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘প্রয়োজন ২০ পিস, পাচ্ছি পাঁচ পিস। আমরা দাম বাড়াবো কি, কাস্টমাররা নিজেরাই দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে। কেউ একটি পণ্যের দামাদামি করতে নিলে আরেকজন এসে ২০০ টাকা বাড়িয়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
তবে কয়েকটি দোকানে খোঁজ নিয়ে ভিন্ন তথ্য মিলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, চার্জার জাতীয় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। প্রতিদিনই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন আমদানিকারকরা। তিনি বলেন, দুই সপ্তাহে কোনো কোনো পণ্যের দাম ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চীনা একটা চার্জার ফ্যান ছয় মাস আগে ছিল ৩ হাজার টাকা, সেটি ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন।
এ জন্য আমদানিকারকদের দায়ী করে এমএ আবুল বাসার নামে বিক্রেতা বলেন, তীব্র গরমে চীনের তৈরি এসব পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। পাঁচ কার্টন চাইলে আমদানিকারকরা তা-ই দিতেন। এখন পাঁচ কার্টন চাইলে এক কার্টন দেন। বেশি দাম দিয়েও চার্জার পাওয়া যাচ্ছে না।
দাম নিয়ে ক্রেতাদের অসন্তোষের বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সুমি রানী মিত্র জানান, ফ্যানের বাজার এখনো পরিদর্শন করা হয়নি। তবে ফ্যানের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি মনিটরিং করা হবে হবে।