29 C
Dhaka
অক্টোবর ২৩, ২০২৪
Bangla Online News Banglarmukh24.com
বরিশাল

শেবাচিম হাসপাতালে ৬ মাসে প্রায় তিন হাজার প্রসূতির অস্ত্রপচার প্রসবকালে ২৪ মা ও ৩০০ শিশু মৃত্যু

খান রুবেল: সিজারিয়ান বৃদ্ধির মূল কারণ অসচেতনতা ও অসময়ে গর্ভধারণ- অধ্যাপক খুরশিদ জাহানসন্তান জন্মদান সত্যিই একটি আনন্দের মুহূর্ত। সাধারণত সন্তান প্রসবে দুটি পদ্ধতি গ্রহণ করে থাকেন চিকিৎসকরা। যার মধ্যে একটি স্বাভাবিক এবং অপরটি সিজারিয়ান প্রসব।

তবে সিজারিয়ানে সন্তান প্রসব মা এবং সন্তানের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। রয়েছে অনেক ক্ষতির দিক। তার পরেও বর্তমান সময়ে সিজারিয়ান পদ্ধতিই বেছে নিচ্ছেন বেশিরভাগ মা এবং তাদের অভিভাবক। আবার বেসরকারি হাসপাতাল বা চিকিৎসকের ক্ষেত্রে রয়েছে বাণিজ্যিক কারণ। এসব কারণে লাগামহীনভাবে বাড়ছে সিজারে সন্তান প্রসব।

এমন বাস্তবতার প্রমাণও মিলেছে দক্ষিণ বঙ্গের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম)। এই হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবের তুলনায় সিজারিয়ানে সন্তান প্রসবের হার দ্বিগুনেরও বেশি। মা এবং তার স্বজনদের দাবি, চিকিৎসকদের উৎসহ পেয়েই অস্ত্রপচারের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তারা।

তবে চিকিৎসকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি ‘একজন গর্ভবতী মাকে একেবারেই মুমূর্ষু অবস্থায় নিয়ে আসা হচ্ছে হাসপাতালে। তখন মা এবং সন্তানকে বাঁচাতে সিজারিয়ান পদ্ধতি বেছে নিতে হচ্ছে।

তাছাড়া বর্তমানে মাতৃত্বকালীন যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে সিজারিয়ান পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন বেশিরভাগ মায়েদের পরিবার। বিশেষ করে অর্থশালী পরিবারগুলোর মাঝে সিজারিয়ানের প্রবণতা বেশি বলে জানিয়েছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. বেগম খুরশিদ জাহান।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত গত ছয় মাসে এ হাসপাতালে ৪ হাজার ২৪৯ জন মা ৪ হাজার ৩৩০ জন সন্তান জন্ম দিয়েছে।

এছাড়া কোন প্রকার কাঁটাছেড়া ছাড়াই স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ১ হাজার ২৩৪ জনের। বাকি ২ হাজার ৯৯১ জন মায়ের সন্তান প্রসব করানো হয়েছে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে। সে হিসেবে স্বাভাবিকের তুলনায় সিজারিয়ান ডেলিভারির দ্বিগুনের বেশি।

অপরদিকে সন্তান জন্মদিতে গিয়ে ছয় মাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ২৪ জন মা। এদের মধ্যে সিজারিয়ানের সময় মারা গেছেন অনেক বেশি। প্রসব পরবর্তী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং একলামশিয়ার কারণে তাদের মৃত্যু হয়।
প্রসূতি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শেবাচিম হাসপাতালে ৮১১ জনের মধ্যে ২৪৩ জনকে স্বাভাবিক এবং ৫৬৮ জনকে সিজারিয়ান করা হয়। এর মাধ্যমে জন্মনেয় ৮২৫ জন শিশু। যাদের মধ্যে থেকে ৭৫৯ টি শিশু জিবিত এবং ৬৬ জন মৃত জন্ম হয়েছে। এ মাসে কোন মা মৃত্যুবরণ করেননি।

ফেব্রুয়ারি মাসে ৬৮২ জনের মধ্যে ২০৫ জনকে স্বাভাবিক এবং ৪৭৭ জনকে সিজারিয়ান করা হয়। এর মাধ্যমে জন্ম হয় ৭০০ শিশুর। যার মধ্যে ৬৫১টি শিশু জিবিত এবং ৪৯ জনের মৃত জন্ম হয়েছে। এ মাসে মৃত্যুবরণ করেন ৮ জন মা।

মার্চে ৭২১ জনের মধ্যে ২০০ জনকে স্বাভাবিক এবং ৫২১ জনকে সিজারিয়ান করা হয়। এর মাধ্যমে জন্ম হয় ৭৩৯ শিশুর। যার মধ্যে ৬৮৩টি শিশু জিবিত এবং ৫৬ জনের মৃত জন্ম হয়েছে। এ মাসে মৃত্যুবরণ করেন ২ জন মা।

এপ্রিলে ৬৮৮ জনের মধ্যে ১৯৯ জনকে স্বাভাবিক এবং ৪৮৯ জনকে সিজারিয়ান করা হয়। এর মাধ্যমে জন্ম হয় ৭১২ শিশুর। যার মধ্যে ৬৬৮টি শিশু জিবিত এবং ৪৪ জনের মৃত জন্ম হয়েছে। এ মাসে মৃত্যুবরণ করেন ২ জন মা।

মে মাসে ৬৯৩ জনের মধ্যে ১৯৯ জনকে স্বাভাবিক এবং ৪৯৪ জনকে সিজারিয়ান করা হয়। এর মাধ্যমে জন্ম হয় ৬৯৩ শিশুর। যার মধ্যে ৬৫১টি শিশু জিবিত এবং ৫৫ জনের মৃত জন্ম হয়েছে। এ মাসে মৃত্যুবরণ করেন ৫ জন মা।

এছাড়া জুন মাসে ৬৩০ জনের মধ্যে ১৮৮ জনকে স্বাভাবিক এবং ৪৪২ জনকে সিজারিয়ান করা হয়। এর মাধ্যমে জন্ম হয় ৬৪৮ শিশুর। যার মধ্যে ৬১৮টি শিশু জিবিত এবং ৩০ জনের মৃত জন্ম হয়েছে। এ মাসে মৃত্যুবরণ করেন ৭ জন মা।

হাসপাতালে স্বাভাবিকের থেকে সিজারিয়ানে সন্তন প্রসবের প্রবণতা বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. বেগম খুরশিদ জাহান বলেন, ‘পরিবারের অসাবধানতার কারণে সিজারিয়ানের মাধ্যমে আমরা সন্তান প্রসব করতে বাধ্য হই। কারণ হাসপাতালে গর্ভবতী মায়েদের একেবারেই মুমূর্ষু অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। যখন আর পর্যবেক্ষণের সুযোগ থাকে না।

ডা. খুরশিদ জাহান বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী একজন মায়ের স্বাভাবিক প্রসবের জন্য আমরা ওষুধ দিয়ে ৮-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। কোন কোন ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এসময়ের মধ্যেও বাচ্চা ডেলিভারি না হলে বাধ্যতামূলক সিজারিয়ান সেকশন বেছে নিতে হয়। এটাকে চিকিৎসকদের ভাষায় বাধাগ্রস্থ প্রসব বলা হয়। ১৮ ঘণ্টার বেশি অপেক্ষা করলে দেখা যায় বাচ্চার হাটবিট বেড়ে যায়, জন্মগতভাবে শ্বাসকষ্ট এবং মায়ের জরায়ু ছিড়ে গিয়ে বিপদ ঘটতে পারে।

তিনি বলেন, ‘এসব সমস্যার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যার মধ্যে প্রধান কারণ বাল্য বিয়ে এবং অসময়ে গর্ভবতী হওয়া। দেখা যায় অনেক মা সন্তান জন্মদেয়ার জন্য শারীরিকভাবে ফিট নয়। তার পরেও অল্প বয়সে বিয়ের কারণে শ্বশুর-শাশুড়িদের চাপে অল্প বয়সেই বাচ্চা নিতে হচ্ছে।

আবার গর্ভবতী হওয়া থেকে শুরু করে সন্তান প্রসব পর্যন্ত চিকিৎসকের ফলোআপে থাকা বাধ্যতামূলক। বিশেষ করে গর্ভবতী হওয়ার তিন মাসের মধ্যে বাধ্যতামূলক পরীক্ষা করাতে হবে। এরপর সাতমাস পর্যন্ত প্রতিমাসে একবার, ৭-৮ মাসে প্রতি ১৫ দিন পর পর এবং ৯ মাস থেকে সন্তান জন্মাবার আগপর্যন্ত প্রতি ৭ দিন পর পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়। আর যাদের পক্ষে নিয়মিত চেকআপ সম্ভব নয়, তাদের জন্য অন্তত ৪ বার চিকিৎসকের মাধ্যমে চেকআপ করানো জরুরি। তবেই স্বাভাবিকভাবেই সন্তান প্রসব করতে পারবে। তাছাড়া ২১ বছর বয়সের আগে বাচ্চা নেয়া ঠিক নয় বলেও জানান তিনি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মুলাদীতে ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ জামায়াতের

banglarmukh official

বরিশাল বোর্ডে সেরা ঝালকাঠি, পিছিয়ে পটুয়াখালী

banglarmukh official

নগরে নতুন নতুন অটোরিকশা: কারখানা বন্ধে ওসিদের নির্দেশ

banglarmukh official

জমি নিয়ে বিরোধের জেরে যুবককে মারধরের অভিযোগ

banglarmukh official

আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

banglarmukh official

বরিশালে বিএনপি অফিস ভাঙচুরে অভিযোগে সাদ্দাম শাহ‍্ গ্রেপ্তার

banglarmukh official