শরতের আগমনে কাশ ফুলের শুভ্রতার শীষ দোলা আর একটু একটু শিশির বিন্দু জানান দিচ্ছে দুয়ারে কড়া নাড়ছে জাতিসংঘের ইউনেস্কো স্বীকৃত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহত অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা। দেবী দুর্গার আগমনে বিশ্ব হবে শান্তিময়, অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে উদয় হবে শুভ শক্তির এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
অসাম্প্রদায়িক চেতনার উর্বর ভূমি বরিশালের দুর্গা পূজার মন্ডপে মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বরিশাল নগরীসহ প্রতিটি উপজেলায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরির কারিগররা। খড়, কাঠ, সুতা আর মাটি দিয়ে নিপুণ হাতে তৈরি করছেন প্রতিমা। পূজা যতোই ঘনিয়ে আসছে শিল্পীদের ব্যস্ততাও ততটাই বাড়ছে। তবে বেশ কয়েকজন পাল জানিয়েছেন, সবকিছুর দাম বাড়লেও প্রতিমা তৈরির কারিকরদের মজুরি খুব একটা বাড়েনি। পূজা উদযাপন পরিষদের জেলা কমিটির সভাপতি মানিক মুখার্জী বলেন, আগামী ২০ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে এবারের দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।
দেবীর দুর্গার নবপত্র কল্পারম্ভেরদিন মন্ডপে মন্ডপে বেঁজে উঠবে ঢাক-ঢোল আর কাঁসরের বাজনার শব্দ। ২১ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ২২ অক্টোবর দেবীর মহাঅষ্টমী, ২৩ অক্টোবর মহানবমী এবং ২৪ অক্টোবর দশমী বিহিত পুজা সমাপনান্তে দেবী বিসর্জণের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হবে দশহরার। শেষ হবে পাঁচদিনব্যাপী এবারের দুর্গোৎসব। তিনি আরো জানান, তার কাছে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এবছর বরিশাল জেলা ও মহানগরী এলাকায় তিনটি পূজা মন্ডপ বৃদ্ধি পাবে।
গতবছর বরিশাল জেলা ও মহানগরী এলাকায় ৬৩৪টি পূজা মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যারমধ্যে নগরীতে ছিলো ৪৪টি। এবছর নগরীতে একটি এবং বাকেরগঞ্জ ও মেহেন্দিগঞ্জে দুটি পূজা মন্ডপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এবার ৬৩৭টি মন্ডবে দুর্গা পূজার আয়োজন হচ্ছে। এরমধ্যে বরিশাল বিভাগে আগৈলঝাড়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ১৬১টি মন্ডবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও গৌরনদীতে ৮৪টি, উজিরপুরে ১১৬টি, বানারীপাড়ায় ৫৯টি, বাবুগঞ্জে ২৫টি, মুলাদীতে ১১টি, মেহেন্দিগঞ্জে ২৫টি, হিজলায় ১৫টি, বাকেরগঞ্জে ৭২টি ও বরিশাল সদরে ২৪টিসহ মোট ৫৯২টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
বরিশাল মহানগর পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল দাস বলেন, নগরীতে এবছর নতুন একটিসহ মোট ৪৫টি মন্ডপে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি চলছে।
জেলার আগৈলঝাড়া, উজিরপুর, বাকেরগঞ্জ ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মন্ডপ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। কেউ খড়, কাঠ, সুতা দিয়ে প্রতিমার কাঠামো তৈরি করছেন, কেউবা নিপুণ হাতে ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা, লক্ষী, সরস্বতী প্রতিমা। প্রতিমার কাঠামো তৈরি শেষে এখন মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষপ্রান্তে রয়েছে। এরপর প্রতিমা শুকানোর পর শুরু হবে প্রতিমায় রঙের কাজ।
প্রতিমা তৈরির কারিগর সুকদেব পাল বলেন, আগের মতো মানুষ মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার না করায় আমাদের প্রায় সারাবছরই অলস সময় কাটাতে হয়। তবে দুর্গাপূজা চলাকালীন আমাদের ব্যাপক চাহিদা বাড়লেও বর্তমান দ্রর্বমূল্যের বাজার অনুযায়ী প্রতিমা তৈরির কারিগরদের তেমন পারিশ্রমিক বাড়েনি।
তিনি আরও বলেন, মাটি দিয়ে প্রতিমা নির্মানের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই বাকি কাজ শেষে রঙ তুলির আঁচড়ে প্রাণবন্ত করে তোলা হবে দুর্গা প্রতিমাগুলো।
বরিশালের জেলা প্রশাসক মোঃ শহীদুল ইসলাম বলেন, দুর্গা পূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব হলেও অসাম্প্রদায়িক জেলা হিসেবে পরিচিত বরিশালে সবার সম্প্রীতির বন্ধনে পুজা অনুষ্ঠিত হবার দৃষ্টান্ত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পূজা শুরুর দিন থেকে প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত মন্ডপগুলোতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি প্রত্যেক পূজা মন্ডপের জন্য তাদের নিজস্ব কমিটি গঠনের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে। মন্ডপে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দলের সাথে আইন-শৃংখলা রক্ষায় পুলিশ, গ্রামপুলিশ সদস্য, পুরুষ ও নারী আনসার সদস্য সর্বদা নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণস্থানে সিসি ক্যামেরার আওতায় রেখে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাদা পোশাকধারী সদস্যরা মোবাইল টিমে কাজ করবেন।