বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ধর্ষণের লজ্জায় শরীরে কোরোসিন ঢেলে স্কুলছাত্রী সোনিয়ার (১৩) আত্মহত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ৫ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে তিন আসামিকে চার্জশিট থেকে বাদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি মো. মাসুদুজ্জামানের বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়, অর্থের বিনিময়ে চার্জশিটে ধর্ষণ মামলার ধারা পাল্টে সম্ভ্রহানির ধারা দিয়ে শুধুমাত্র এক আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে বলেও মামলার বাদী ওই স্কুলছাত্রীর মা শিউলি বেগম অভিযোগ করেছেন।
সোনিয়া বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরাদি ইউনিয়নের মধ্য চরাদি গ্রামের দুলাল খানের মেয়ে ও চরাদি বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
মামলার বাদী শিউলি বেগম জানান, ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে উপজেলার চরাদি ইউনিয়নের মধ্য চরাদি গ্রামের মোশারফ হোসেন পান্নু খানের ছেলে সেনা সদস্য আসাদ খান নিকটাত্মীয় তারেক খানসহ অন্য আসামিদের সহযোগিতায় তার ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ূয়া মেয়েকে ধর্ষণ করে। এতে লজ্জায়-ঘৃণায় মেয়েটি নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে তার চিৎকারে বাড়ির লোকজন তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেলের শিশু সার্জারি বিভাগে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় পাঠান চিকিৎসকরা। ঘটনার পাঁচদিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোনিয়ার মৃত্যু হয়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ ঘটনায় বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে গড়িমসি করলেও পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গত ২ জানুয়ারি ধর্ষক আসাদ খান, সহায়তাকারী তারেক খান, হুমকিদাতা আরিফ খান ও মোশারফ হোসেন খান পান্নুসহ চারজনের নামে ধর্ষণ ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা নেয়। মামলা দায়েরের পর থেকেই তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. ইউসুফ আসামি গ্রেফতারে গড়িমসি শুরু করেন। বিষয়টি তিনি ওসি মাসুদুজ্জামানকে জানালে পরে মামলাটি তদন্তের ভার তিনি নিজে নেন।
সোনিয়ার বাবা মো. দুলাল খান জানান, মামলার পর অন্যতম আসামি এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী আরিফ খান প্রতিনিয়ত মামলা তুলে নিতে বাদীসহ তাকে ও তার পরিবারকে হুমকি-ধামকি দিতে শুরু করে। বিষয়টি পুলিশকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি ও তার স্ত্রী মাস খানেক আগে মামলার চার্জশিট দেয়ার বিষয়ে জানতে থানায় গেলে তদন্ত কর্মকর্তা ওসি মাসুদুজ্জামান চার্জশিট তাদের পক্ষে দেবেন বলে তাদের নিকট ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন। টাকা দিতে না পারায় ওসি আসামিদের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে মামলা থেকে তিন আসামির নাম বাদ দিয়েছেন এবং ধর্ষণের ঘটনাকে সম্ভ্রমহানি উল্লেখ করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছেন। তিনি ওই চার্জশিটের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেবেন বলেও জানান।
তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর গুরুত্ব দিয়ে আসামি সেনা সদস্য আসাদ খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। ধর্ষণের আলামত না পাওয়ায় চার্জশিটে সম্ভ্রহানির ধারা দেয়া হয়েছে। তদন্তে বাকি আসামিদের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তারপরও বাদীপক্ষের কোনো অভিযোগ থাকলে তারা পুনরায় তদন্তের জন্য আদালতে নারাজি দেবেন।